Home ব্লগবাজি রোজনামচার রবি ~ সোমাদ্রি সাহা

রোজনামচার রবি ~ সোমাদ্রি সাহা

রোজনামচার রবি ~ সোমাদ্রি সাহা
রোজনামচার রবি

এক

শব সাহিত্যের শুকনো রক্তে চারা রবি জন্মায়
আসি তবে, টু ইন ওয়ান করে বিপণন শিখেছি
রবিকে বেচুরাম হয়েই বেঁচে

মুনাফা তো ট্রামলাইন নয়, সেটা যাপনে মোমবাতি
তোমরা বোঝোনি রবিকে নিয়ে করে কম্মে খাচ্ছি

বস চুরি আমি করতে জানি
তোমরা নোবেল খোঁজো, আমি খুঁজি মুক্তি

দুই
জেগে ওঠা সীমানা থেকে বন্দি রবি ঠাকুর
একই রকম হতে হবে সারগাম...
তৈরি হওয়া আবেগের বিপণন জটিলতম অসুখ।
ক্যান্সার এই অসুখকে আটকে রাখতে পারেনি।

রবি ঠাকুরকে না জেনেই রবি উদযাপন
বাঙালির সম্পত্তি নিয়ে ছেলেখেলা বাঙালি করে

বহুকাল এসব দেখেছি, তাই তোমায় আর আদর করিনি
তুমি গুরুদেব ট্যাগ নও...তুমি মনের মানুষ রবি ঠাকুর

তিন
লেন্স প্যান করতেই দেখলাম একটা টেবিল
সামনে জানলা। লিখছেন রবি ঠাকুর। প্রচন্ড স্পিডে।
কলম ছেড়ে পেনসিলের সীসা...হয়তো গোরা রিরাইট করছে
আমি তো কথাও বলতে পারলাম না, ছুঁতেও পারলাম না
ভগবানের স্থানও দিতে পারলাম না।
এক আত্মা সহযোদ্ধা। ভাষা, প্রকৃতি ও মানুষের জন্য লিখছে।
লিখুক। আমি নেট চ্যাট করি।

সময় নষ্ট করতে জানে বাঙালি...পড়তে নয়।

চার
নতুন করে রবি ঠাকুরকে - ঠাকুরে উন্নীত করতে চাই না।
বলতে চাই না তোমার গানের জন্য তুমি বিখ্যাত। লেখার জন্য নয়।
আসলে আধুনিক মানুষ দ্রুত গতির, স্মৃতিহীন। স্ট্যাটাস নির্ভর।
এক দিনের হুজুগে রবি ব্যঞ্জনা।

অস্থির ধর্ষিত সময়ে দাঁড়িয়ে একদিনই মানুক।
রবি উপনিষদ একদিনও তো উপলব্ধি করুক...

ভুলে মেরে দিয়েছিলাম বাইশে শ্রাবণও আছে লিস্টিতে
রবি ঠাকুর তোমার দুই দিন জন্মদিন...বাকি দিন তুমি শুধু আমার
ব্যক্তিগত আমার।

পাঁচ
ডেনরাইট খাওয়া ছেলেগুলোকে আজ শোনালাম
“আমার মুক্তি আলোয় আলোয়...”
ওরা বুঝল না। বীরপুরুষ শোনাতেই খুব হাসল।
আমি ওদের আজ খাওয়ার খাওয়ালাম।
শেষে আইসক্রিম খেতে চাইল।

একটি ছেলে এগিয়ে এসে বলল স্কুলে পড়ে তার ভাই
সে বলেছিল...আমাদের ছোট নদী চলে ঝাকে ঝাকে
আমি শুনে হাসতে বা কাঁদতে পারলাম না
বুকটা চিনচিন করে উঠল।

ছয়
তোমরা যে রবি ঠাকুরকে গুরুদেব বলো
আমি তাকে বলি বেঁচে থাকার মরুদ্যান।
আমি লিখতে জানি না। শিখতেও চাই না আর।
আমি তো পেয়েছি মহাকাশে মহাকালো মাঝে
কেবল তাকেই। কেবল স্কুলছুট রবি-কে।

আমিও অচল সমাজে রবি। অপদার্থ। ঠিক তোমার মতো।
রবি ঠাকুর অপদার্থ না হলে সাহিত্য সাম্রাজ্য তৈরি করতেন না।
কেবল নিজের সম্পত্তির দলিল দেখাশুনো করতেন।
শান্তিনিকেতন আসলে অপদার্থের ফসল।

আপনার বিজ্ঞ। এই অপদার্থতার মানে বুঝতে চাইবেন না।

আমি প্রচন্ড কাঁদছি। কেন তা জানি না। হয়তো...

সাত
যে রবিকে তোমরা চিনে নিয়েছ,
সেই রবি ডিজিট্যাল যুগে এলে
পেজের লাইক কয়েকশো কোটি ছাড়িয়ে যেত।

আম্বানি, আদানি, বিড়লা, টাটা তোমরা টাকা সম্পদে
এই বুদ্ধি সম্পদকে ছুঁতে পারতে না।

অথচ দেখো আমি আজ একবেলা পান্তা খেয়ে থাকি।
কারণ আমি রবি ঠাকুরের বয়ফ্রেন্ড।
আট
নিজস্ব অনেক কিছুই হাতের মুঠোতে করতে চাই।
সবুজে মিশতে চাই।
কারণ আমি বিশু পাগলার মতো রবিকরবীকে খুঁজেছি।
বিশ্বাস করুন পাইনি।

কেউ রবি ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করে ঠিকানা দিতে পারেন...
খুব দরকার।

নয়
রবিকরবী। আমাদের নিজস্ব হংস বলাকা গাছ।
লাগিয়েছিলাম।
জল দিইনি।
রবি ঠাকুরও জল দেয়নি।
তবু প্রতি পঁচিশে বৈশাখ সে জেগে ওঠে।
রবিকরবী ফুঁটছে মাঝ আকাশে, দীপ্তিময়।

দশ
রাত থেকে দিন, দিন থেকে রাত।
প্রচন্ড এক যন্ত্রণা।
তোমায় আদর করতে না পেরে আমি
রবি ঠাকুরের গান শুনেছি। বিশ্বাস করো
আমার যন্ত্রণা কমেছে।
রবি ঠাকুর আসলে পেন কিলার।
এই যুগের ইয়ো সংস্কৃতিরা
বুঝতে পারল না।

এগারো
আমার হিসেব অনেকটা অন্যরকম।

তা বুঝতে গেলে পেরিয়ে এসো রবি সাগর।
জানি সে আধুনিক নেট নির্ভর নয়
প্রকৃতি চ্যাটিং সেখানে বেশি।
স্বাভাবিক, তোমরা তো গাছ দেখনি।
দেখেছ এসি বাটন। রবি ঠাকুর প্রাকৃতিক এসি
বানিয়েছিলেন। খোঁজ করো, শিকড়ে...

বারো
রবি ছায়া কখনই প্রভাবিত করেনি।
কারণ আমার পাগলামোটা তার দর্শন নিয়ে নয়
শুধু তার প্রেম নিয়ে।

“আমি রোজ প্রেম পড়ি”
যে মেয়েটি বলেছিল, তাকে অদৃশ্য চুমু দিয়েছি আজ
কারণ আমি প্রেম পড়ছি রবি ঠাকুরে-
শিশু, শিশুভোলানাথ, সহজপাঠের সময় থেকেই...

 সোমাদ্রি সাহা : 08/05/2017

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here