সমসাময়িক **************************** শুনছো, ছেলেটা তো বড় হচ্ছে, ওর সামনে মদ খাওয়াটা খুব বিরত্বের কাজ? তনু এখন ভাল মন্দ বলা ছেড়ে দিয়েছে, নিজের কপালকেই দিন রাত দায়ী করে যায় মেয়েটা। ১২ বছর হল প্রলয় অার তনুর বিয়ে হয়েছে, ছেলে নামী স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে। তনুর থেকে প্রলয় প্রায় ১১ বছরের বড়। ওদের প্রেমটাও বেশ অাঁটোসাটো ছিল, বাড়ির কারো কথা না শুনে একদিন পালিয়ে বিয়ে করে নেয় ওরা, তারপর থেকে সব ঠিকঠাকই চলছিল, ভুল বোঝাবুঝি দূরে রেখে দুই পরিবার অাবদ্ধ হল। দু'জনার ভালবাসা পরিণতি পেয়ে তনুর কোলে এল ফুটফুটে কুহুক। ভালবাসা এই ভাবে এক সাথে থেকেও যে একা করে দেয় জানা ছিলনা তনুর। সেই ছোট মেয়েটি যে নিজের কেরিয়ায়ের কথা না ভেবে বিয়ে করে নিয়েছিল, যে সংসার কি ভাবে করতে হয় না জেনেও ঝাঁপ দিয়েছিল বিশ্বাস করে, এখন সে নিজের মত থাকে ছেলেকে নিয়ে। নিজের হাতে প্রলয়ের ব্যাবসা, ছেলে, সংসার সব সামলাচ্ছে, ৩২ বছরের তনু কেমন যেন বুড়িয়ে গেছে, সে সাজতে ভালবাসত খুব, এখন ঠিক করে অায়নার দিকে তাকায়না অার, হয়ত নিজের কাছেই অপরাধী হয়ে উঠেছে অাজকাল। প্রলয় দিন রাত মদ খেয়ে খেয়ে এখন সব কিছুই হারিয়েছে, স্বপ্ন, ক্রিয়েটিভিটি, শরীর-স্বাস্থ্য, চোখের দৃষ্টি,নিজেকে অার সবাইকে ভাল রাখার মানসিকতাও। প্রলয়ের ছোট ভাই, মা সবাই অনেক করে বুঝিয়েছে, কারো কথাই ওর মনে ধরেনি, ও মদ নিয়েই বেঁচে অাছে। সারাদিন রাত ঘুম, অার ঘুম ভাঙলেই মদ, বছরে একবার করে নার্সিং হোম প্রলয়কে যেতেই হয়। অার তনু নিজেকে নিজের মত তৈরী করে নিয়েছে, স্নান করানো থেকে খাওয়ানো সবটাই নিজে হাতে করে সে প্রলয়কে ভাল করে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। ছেলে যদি কখনো প্রশ্ন করে সেই উত্তর তনু তৈরী রেখেছে, কখনো পালিয়ে যাবে না যুদ্ধ থেকে, একটা করে দিন, রাত, ঘুমের ঔষধ, সাথে ফেসবুক, পুরনো কিছু কাছের মানুষ গুলোকে এক এক করে খুঁজে পাচ্ছে তনু। নতুন করে একটু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে সে। কিন্তু প্রলয়ের কিছু হলে? ভাবতে পারে না.... তনুর গল্পের শেষ এখনও নিজেও জানে না সে, কিছু কিছু 'ভালবাসা' হয়ত তনুর মত মেয়েদের সোহাগে ভাল 'বাসা' হয়। কিছু 'বাসা' অাবার ভাষাহীণ হয়ে সম্পর্কের বিভাজন তৈরী করে। রাতে এখনও মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে তনু, প্রলয়ের বুলেট চেপে সে গাইছে "এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বলো তো"।। ~গোধূলী~ 16/05/2017