Home অফ-বিট ভারতের অদ্ভুত এবং রোমহর্ষক ১০টি উৎসব ~ জেনে নিন…

ভারতের অদ্ভুত এবং রোমহর্ষক ১০টি উৎসব ~ জেনে নিন…

ভারতের অদ্ভুত এবং রোমহর্ষক ১০টি উৎসব ~ জেনে নিন…

ভারত বর্ষ হল একটি গল্পের বইয়ের মত। এর সমস্তটাই রোমাঞ্চকর গল্প ভর্তি। যতই বলা হোক না কেন বা যতই এর সম্পর্কে জানা হোক না কেন এর জ্ঞানের ভান্ডার অফুরান। বিভিন্ন ধরনের রোমাঞ্চকর, রহস্যময় এবং অদ্ভুত সকল ঘটনায় সমৃদ্ধ আমাদের ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি। এমনই কিছু অদ্ভুত এবং রোমহর্ষক ঘটনার এবং উৎসবের কথা আমরা আজ এখানে বর্ণনা করছি।

১. অন্ধপ্রদেশের বানি উৎসব– মারো অথবা মরো

11 Mysterious Temples Of India You Must Visit In 2021!

 

অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল রাজ্যের দেবারাগাট্টু মন্দিরে এই উৎসব পালিত হয়। প্রত্যেক দশহরায় হাজার হাজার ভক্ত লাঠি নিয়ে এখানে এই মন্দিরে মধ্যরাত্রে হাজির হয় অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। রক্তস্নাত এই সকল লোক ভোর অবধি উৎসবে মেতে থাকে এক শিব মালা – মালেশ্বেরের হাতে এক অসুরের নিধনকে কেন্দ্র করে। মন্দিরের পুরোহিতের মতে 100 বছরেরও বেশি সময় ধরে এই উৎসবটি চলে আসছে, যেখানে পূর্বে লাঠির বদলে বল্লম এবং কোদাল ব্যবহার করা হতো। এই উৎসবের সময় পুলিশি ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার ও সাহায্য নেওয়া হয়।

২. সাপের উৎসব– নাগ পঞ্চমী

Related image

ভারতবর্ষের সাথে সাপের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের রূপকথা এবং ঘটনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভারত বর্ষ ও সাপের সম্পর্ক। ভারতবর্ষকে বলা হয়” the land of snake charmers”। প্রত্যেক শ্রাবণ মাসের পূর্ণচন্দ্রের পঞ্চম দিনে সমগ্র ভারতবর্ষে এবং নেপালে নাগপঞ্চমী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে জীবন্ত ও বিষাক্ত কোবরা যেগুলির বিষ নিষ্কাশন করা হয়না,তাদের পুজো করা হয়। পুরোহিতরা হলুদ, কুমকুম এবং ফুলের পাপড়ি দিয়ে এই সকল সাপের পুজো করে। ভক্তরা এই সকল সাপকে দুধ এবং জীবন্ত ইঁদুর পর্যন্ত খাওয়ায়। বিশ্বাস করা হয় যে এই সকল সাপেরা নাগপঞ্চমীর দিনে কখনোই কোনো ভক্তকে ছোবল মারবে না।

৩. বাঘের খেলা– কেরালার পুলি কালি

Image result for kerala puli kali festival images

পুলি কালি উৎসব অনুষ্ঠিত হয় কেরালার থ্রিসুর জেলায় যেখানে রঙিন দৃশ্যপট ও শক্তি, উভয়ের প্রদর্শন হয়। ওনাম উৎসবের চতুর্থ দিনে এই উৎসব প্রশিক্ষিত আর্টিস্টদের দ্বারা অনুষ্ঠিত হয়।
উজ্জ্বল হলুদ, কালো, লাল রঙ দিয়ে আঁকা বাঘের পোশাক ও সাজ পরিহিত আর্টিস্টরা রাস্তায় নাচতে নাচতে ও ঐতিহ্যবাহী গান করতে করতে যায়। প্রতি বছর হাজার হাজার লোক এই অসাধারণ দৃশ্যের সাক্ষী থাকে।

৪. পুষ্করের উট মেলা– পুষ্কর , রাজস্থান

Image result for pushkar camelfestival images

প্রতিবছর নভেম্বর মাসে কার্তিক পূর্ণিমায় এই পুষ্করে উটের মেলা দেখতে পাওয়া যায়। 5 দিনের জন্য প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি উটের জমায়েত হয় এখানে। উটগুলিকে নিয়ে এসে সেগুলিকে পরিষ্কার করে, সুন্দর জামা কাপড় পরিয়ে, ভালো ভাবে সাজিয়ে এখানকার উটের বিউটি কনটেস্ট এবং উটের দৌড়ে নামানো হয়। এর সাথেই বাণিজ্যও চলে। বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র সহযোগে নৃত্য পরিবেশিত হয়। বিভিন্ন ধরনের খেলা, ম্যাজিক এবং সাপের কেরামতি ও এইখানে দেখানো হয়।

৫. আগুনের ওপরে হাঁটা– থিমিথি, তামিলনাড়ু

8 Unique And Offbeat Festivals Celebrated In India | siliconindia - Page 3

 

এখানে আগুনের উপরে হাঁটা হয় এবং সম্পুর্নভাবে খালি পায়ে। তামিলনাড়ুর থেকে উৎপত্তি হয়ে থিমিথি শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছে। থিমিথি একটি বিরাট বড় উৎসবের অঙ্গ যেটি প্রায় আড়াই মাস ধরে অনুষ্ঠিত হয় এবং যেখানে মহাভারতের একটি বিশেষ অংশ বর্ণনা করা হয়। দ্রৌপদী যিনি পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী ছিলেন, তাঁর বর্ণনায় এই প্রথা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরে দ্রৌপদী যখন আগুনের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন সেই আগুন টাটকা ফুলে পরিণত হয়েছিল। সেই বিশ্বাস থেকেই ভগবানের আশীর্বাদ পাবার জন্য প্রতিবছর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

৬.সৌভাগ্যের জন্য সদ্যজাতকে সুউচ্চ বাড়ীর ছাদ থেকে নিচে ফেলা– মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক

Read About This Indian Custom Of Throwing Babies Off Buildings For Luck

 

মানুষের বিশ্বাস যখন প্রশ্নাতীত হয় তখনই এই ধরনের অদ্ভুত প্রথা বছরের পর বছর ধরে সংস্কারের মতন ভারতীয় শিকড়ে গেড়ে বসেছে। এই অদ্ভুত প্রথায় কোন সদ্যজাত বাচ্চা কে হিন্দু এবং মুসলিম উভয়েই সুউচ্চ কোন বাড়ির উপর থেকে নিচে ফেলে সৌভাগ্য লাভের আশায়। মহারাষ্ট্রের সোলহাপুরের নিকটবর্তী বাবা উমের দরগায় বাচ্চাদের অন্তত 50 ফুট উপর থেকে নীচে ফেলা হয় এবং নিচের সকল লোকজন অপেক্ষা করে একটি চাদর নিয়ে যেখানে বাচ্চাটিকে উপর থেকে ফেলা হয়,ধরার জন্য। একই ধরনের প্রথা দেখতে পাওয়া যায় সন্তেশ্বর মন্দিরে কর্নাটকের ইন্দি রাজ্যে। এই জায়গায় প্রায় 700 বছরের বেশি সময় ধরে সকল পরিবার এই প্রথা মেনে চলেছে। National Commission For Protection Of Child Rights এইসকল ব্যাপারে তদন্ত করছে. এখনো পর্যন্ত সংগঠকদের তরফ থেকে কোন রকম কোন ক্ষতির খবরা খবর আসেনি।

৭. শরীরের মাংস হুকিং এবং ছুঁচ বিঁধানো– তামিলনাড়ুর থাইপুসম

 

A Mini-Guide To Singapore's Thaipusam Festival | Tripping Unicorn

মানুষের বিশ্বাস এতটাই দামি যে তা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসে। একই বিশ্বাস মানুষকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ংকর প্রথায় নিজেদেরকে শারীরিক কষ্ট দিতেও পিছপা হয়না। থাইপুসম হল তামিলনাড়ুর একটি উৎসব যা তামিল মাস থাইতে উদযাপিত হয়। ভগবান মুরুগান অথবা শিব ও পার্বতীর পুত্র কার্তিকের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের জন্য এই প্রথার অবতারনা।তারকাসুর এবং তার যুদ্ধবাজ সেনাদের বধ করার জন্য এই প্রথা সম্পন্ন হয় ভগবান কার্তিকের সম্মানে। প্রথমে 48 দিন উপবাসের পর সকল ভক্তবৃন্দ তাদের গায়ে হুক, পেরেক, শলাকা ইত্যাদি বিঁধিয়ে নিজেদেরকে ভগবানের সন্তান হিসাবে প্রতিপন্ন করে। কিছু লোক গায়ে হুকবিদ্ধ অবস্থায় ট্রাক্টর অথবা অন্য কোনো ভারী বস্তু টানার চেষ্টা করে। বিপুল পরিমাণ বাদ্যযন্ত্র এবং মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে এই ঘটনাগুলো ঘটে। দুর্বল হৃদয়ের ব্যক্তিদের জন্য এগুলি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

৮. খাদ্যের অবশিষ্টাংশে গড়াগড়ি– কর্ণাটকের মাডে স্নানা

Image result for made snana images

জাতিপ্রথা ভারতের অত্যন্ত পুরাতন একটি অত্যন্ত বাজে প্রথা। বর্তমানে যখন সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে এবং জাতিপ্রথা প্রায় বিলুপ্ত, এখনো পর্যন্ত বহু জায়গায় এই জাতি প্রথা চলে আসছে তার অন্ধবিশ্বাস ও অদ্ভুত সকল প্রথা নিয়ে। কুক্কে সুব্রামানিয়া মন্দিরে একটি বহু পুরাতন এবং অদ্ভুত প্রথা চলে আসছে যেটিকে বলা হয় মাডে স্নানা অথবা spit bath। নিচু জাতের লোকজন কলাপাতায় ব্রাহ্মণদের খাওয়া হয়ে গেলে, তার অবশিষ্টাংশের ওপর মাটিতে গড়াগড়ি খায় এবং সেই সমস্ত পদার্থ নিজেদের গায়ে মেখে নেয়। কথিত, এর দ্বারা তাদের রোগ নির্মূল হয়। এই প্রথাটি 2010 সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিন্তু আবারো 2011 সালে মালেকুদিয়া জাতির জন্য এটি আবার চালু হয়। এই প্রথাটি সম্পূর্ণ একটি অন্ধ কুসংস্কার বলে Karnataka Prevention Of Superstitious Practical (2013) ঘোষণা করে কিন্তু তবুও এই প্রথা বন্ধ করা যায়নি।

৯. হাত দিয়ে মাথার চুল তোলা– জৈন সাধুদের কেশ লোচন

Unbelievable Customs in India | Trainman Blog

 

ধার্মিক মোক্ষ অথবা মুক্তি পাবার জন্য বিভিন্ন উপায় মানুষকে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথায় বেঁধে ফেলেছে। আধ্যাত্মিকতাবাদকে নিজের আত্মার সাথে একত্র করে ফেলেছে। নিজের প্রতি ও নিজের শরীরের প্রতি অবহেলা করে জৈন এবং বৌদ্ধরা ভগবানের কাছে আত্ম নিবেদন করে। বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে মানুষের মাথার চুল তার সৌন্দর্যবর্ধক হিসাবে মানুষের মনের সাথে একাত্ম হয়ে থাকে। তাই নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্যের অবনতি ঘটাতে জৈন সাধুরা এবং সন্ন্যাসীরা নিজেদের অত্যন্ত যন্ত্রণার মাধ্যমে সকল চুল একটি একটি করে মাথার থেকে উপড়ে ফেলে নিজের হাত দিয়ে। এর ফলে যে সকল ক্ষত হয় তা ঢাকার জন্য গরুর গোবর পুড়িয়ে যে ছাই পাওয়া যায় তা তারা মাথায় মেখে নেয়।

১০. পিপের জলে ডুবে থাকা– বরুণ যজ্ঞ

Image result for festival for rain india images

জল আমাদের নতুন জীবন দান করে এবং সেই জলের ভগবানকে হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বরুণ নামে অভিহিত করা হয়। বরুণ যজ্ঞ মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ুতে হয়ে থাকে বৃষ্টির সমতা রক্ষার জন্য। এই যজ্ঞ মন্দিরের পুরোহিতরা করে থাকেন। এখানে একটি পিপে ভর্তি জলের মধ্যে পুরোহিতরা বসে ভগবান বরুণের নাম 1 লক্ষ বার জপ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here