Israel-Hamas War: হামাসকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিল ইসরায়েল। রীতিমত চরম হুঁশিয়ারি। যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে সম্মত হতে হবে হামাসকে। ওদিকে হামাসও নাছোড়বান্দা। ইসরায়েলের ফাঁদে কি পা দেবে? জিম্মি মুক্তি চুক্তি না করলে, ক্ষমতা হারাতে পারেন নেতানিয়াহু। বিপদ তো দুকুলেই। যুদ্ধ বিরতি চুক্তি না হলে তছনছ হয়ে যাবে রাফা। আশঙ্কা সত্যি হবে না তো? চুক্তিতে কি এমন লেখা আছে? যার কারণে এত কিছু ভাবছে হামাস? শেষমেষ তাহলে কি চুক্তিতে রাজি হয়ে যাবে হামাস আর ইসরায়েল? কী লেখা আছে গাজা বাসীর ভাগ্যে?
জিম্মি চুক্তিতে রাজি হতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে ৭ দিনের সময় দিয়েছে ইসরায়েল। এই সময়ের মধ্যে যদি হামাস চুক্তি না করে, তাহলে কিন্তু গাজার রাফাতে হামলা শুরু করবেন নেতানিয়াহু। এমনটাই হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই আল্টিমেটাম কবে দেওয়া হয়েছে, সেটা এখনো জানা যায়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন বলছে, এক মিশরীয় কর্মকর্তা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, চুক্তিতে সম্মত হতে হামাসকে নাকি আগামী শুক্রবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইসরায়েল। দেখুন, বিগত কয়েক মাস ধরেই কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রাফাতে হামলার চালানোর হুমকি দিয়ে আসছেন। গাজা জুড়ে চলছে যেন হামলার তান্ডব লীলা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত, হামাসকে সমূলে নির্মূল করতে পারেনি ইসরায়েল। উপরন্তু হামাসের কাছে এখনো জিম্মি হয়ে রয়েছে ইসরায়েলের বহু নাগরিক। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, ইসরায়েল তার ঘরের অন্দরেও বেশ চাপে।
এই মুহূর্তে ইসরায়েলের সামনে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি ভীষণ ইম্পরট্যান্ট। অন্তত নেতানিয়াহুর কাছে নিজের গদি ধরে রাখতে জিম্মি মুক্তি করতেই হবে। ইসরায়েল হামাসকে জব্দ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু একশো শতাংশ সফল হয়নি। ওদিকে হাল ছাড়তে নারাজ হামাসও। স্যারেন্ডার করেনি ইসরায়েলের কাছে। কিন্তু মাঝখান দিয়ে, চরম দুর্দশায় পড়েছে গাজাবাসী। বর্তমানে রাফাতে রয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। এখানে হামলা চালানো মানে বুঝতেই তো পারছেন। প্রচুর মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। শোনা যাচ্ছে, বিদেশে অবস্থানরত হামাস নেতারা আপাতত চুক্তিটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। এই চুক্তির মাধ্যমে আদৌ যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হবে কিনা, নাকি শুধুমাত্র সাময়িক সময়ের জন্য যুদ্ধ বিরতি হবে, সেই বিষয়টিও তারা বিবেচনা করছে। তবে কূটনৈতিক মহল মনে করছে, হামাস এখন বেশ আশঙ্কায় রয়েছে। যদি এই চুক্তিতে তারা রাজি হয়ে যায়, আর পরবর্তীকালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে, যদি পুনরায় ইসরায়েলি সেনারা গাজায় হামলা শুরু করে, তখন কী হবে? শেষে দুই কুল নিয়ে ভরাডুবি হতে পারে হামাসের।
আপাতত যে চুক্তির গুঞ্জন উঠেছে, সেই চুক্তির প্রস্তাব বলছে, প্রথম ধাপে ৪০ দিন যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে হামাস মুক্তি দেবে ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে। অর্থাৎ কয়েক ধাপে ধাপে যুদ্ধ বিরতি থাকবে।দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধ বন্ধ থাকবে প্রায় ৬ সপ্তাহ, আর এই সময়কালে আরও বেশি সংখ্যক জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হবে। আর যদি দুই পক্ষ অর্থাৎ ইসরায়েল আর হামাস নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নেয়, তাহলে যুদ্ধ আরও এক বছরের জন্য বন্ধ থাকতে পারে। মানেটা বুঝতে পারছেন? আভাস কিন্তু বলছে, বিষয়টা এগোচ্ছে যুদ্ধ বিরতির দিকে। সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার দিকে নয়। তার মানে সাময়িক সময়ের জন্য যুদ্ধ বন্ধ হলেও, পরবর্তীকালে ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে পুনরায় যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখনও কিন্তু একইভাবে টার্গেট হবে গাজা।
এই যুদ্ধের সমাধানের উত্তর এখনো খুঁজে পাচ্ছেন না কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু আপাতত গাজার যা অবস্থা, জাতিসংঘ যেভাবে উদ্বেগে রয়েছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে গাজায় একটা স্থায়ী সমাধান চাই। একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ভীষণ দরকার। ওদিকে আবার ফিলিস্তিনিদের গাজার উত্তর অঞ্চলে আদৌ যেতে দেওয়া হবে কিনা, এই বিষয় নিয়েও চুক্তিটা ঝুলে আছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মতে, কোন বাধা ছাড়াই গাজাবাসী উত্তরাঞ্চলে যেতে পারবে। সেখানে থাকা তাদের ঘরবাড়ি ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি তৈরি হয়েছে, একটা নতুন সম্ভাবনা। এই চুক্তিটা তৈরিতে বেশিরভাগ অবদান রয়েছে মিশর আর ইসরায়েলের। হামাসের সঙ্গে এই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কই তিক্ততার। হয়ত, হামাস চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে নতুন প্রস্তাব দিতে পারে। এমনটাই মনে করছে মার্কিন কিছু গণমাধ্যম।
তবে হামাস ইসরায়েলের যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মানার সম্ভাবনা যে একেবারেই ক্ষীন, তা নয়। হামাসের পক্ষ থেকে, যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মানার কয়েকটা সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের কথায়, এই প্রস্তাব হামাসের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে, কারণ এই চুক্তিতে মেনে নেওয়া হয়েছে হামাসের বেশিরভাগ দাবি । এই মুহূর্তে হামাস যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে, ততই মঙ্গল। যুদ্ধ বিরতির সুফল পাবে গাজার মানুষ। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা, একটা টেকসই শান্তি, মানে যুদ্ধ বিরতি নিয়েও আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন। যা অবসান ঘটাতে পারে গাজা যুদ্ধের। আর একটা কথা, এই খসড়া প্রস্তাবের সব শর্ত কিন্তু ইসরায়েল মেনে নেয়নি। তবে এই শর্তগুলো তৈরি করতে সহায়তা করেছে, যেখানে বলা হয়েছে উভয় পক্ষেরই কথা। গুরত্ব পেয়েছে উভয়পক্ষের স্বার্থ।
ভূ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই চুক্তি হয় তাহলে খুবই ভালো, আর যদি একবার ভেঙে যায়, তার পরিণাম হতে পারে ভয়াবহ। ইসরায়েল থেমে থাকবে না। গোটা বিশ্বের কাছে এত কোণঠাসা হওয়ার সত্ত্বেও, কিন্তু নিজের স্ট্যান্ড পয়েন্ট থেকে এক চুলও নড়েনি। তার মানে অবিলম্বে ইসরায়েল রাফায় স্থল।অভিযান শুরু করবে। যেখানে এই মুহূর্তে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েল এখন শুধু হামাসের জবাবের অপেক্ষা করছে । হামাসের প্রতিনিধিরা, মিশর এবং কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানাবে তাদের সিদ্ধান্ত। ওদিকে কায়রো সফরে গিয়েছে ইসরায়েলের মোসাদ, শিন বেট এবং সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দল। মিশর কিন্তু দুই পক্ষকেই এক বছরের যুদ্ধ বিরতিতে সম্মতি জানানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ধীরে ধীরে দুই পক্ষ কোথাও গিয়ে যেন একটু সমঝোতায় আসতে চাইছে। হামাসের দাবি ছিল, উত্তর গজায় ফিলিস্তিনিদের অবাধ বিচরণ মুক্ত হতে হবে। ইসরায়েল সেই চুক্তিতে রাজি হতে পারে। এই চুক্তির আলোচনার মাঝে কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত। গাজার পাশাপাশি রীতিমত তান্ডব চলছে পশ্চিম তীরে।
দেখুন, এত আলাপ-আলোচনা চলছে কেন বলুন তো? কারণ গাজা ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি খুব সহজ কাজ নয়। কূটনৈতিক চাপে পড়ে বহুদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি নিশ্চিত করতে চাপ দিচ্ছিল । মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের তরফ থেকে, কায়রোতে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। হামাস একদিকে যেমন তার প্রাথমিক দাবি-দাওয়াতে অনড় ছিল, ঠিক তেমনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছিলেন, হামাস ধ্বংস আর হেফাজত থেকে জিম্মি মুক্তি না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। যদি নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে দুই পক্ষই সরে আসে তবেই যুদ্ধবিরতি সম্ভব। আর দুই পক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে, যুদ্ধবিরতি কখনোই সম্ভব নয়। বরং যুদ্ধের পরিনাম হবে আরো মারাত্মক। তবে ইসরায়েল তার দাবি থেকে সরে আসতে বাধ্য। কারণ যেভাবে জিম্মি মুক্তির দাবিতে তেল আবিবে মিছিল চলছে, তাতে একটু হলেও ভীত নেতানিয়াহু ।
এই তো, গত মাসেই জিম্মি চুক্তির দাবিতে প্রায় এক লক্ষ মানুষ তেল আবিবে সমাবেশ করেছে ,।ইসরায়েল সরকারের বিরুদ্ধে। রীতিমত উত্তপ্ত দেশটা। ঘরের অন্দরেই যখন চাপ বাড়ছে, তখন যুদ্ধ বিরতি ছাড়া আপাতত ইসরায়েলের সামনে ভালো কোন অপশন নেই। মূলত গাজায় যারা জিম্মি রয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যরাই ইসরায়েলের সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করছে। হতাশা প্রকাশ করছে, ইসরায়েলি সরকারের অক্ষমতা নিয়ে। প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসেছে ইসরায়েলের রাজনৈতিক বিভাজন। এমনি থেকেই, সম্প্রতি ইসরায়েলের রাজনৈতিক পরিস্থিতিখুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। এবার সেই বিভাজন আরো গভীর আকারে প্রকাশ করল। নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিক্ষোভকারীরা এক ধরনের অনড় অবস্থান নিয়েছে। আপাতত জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের আশঙ্কা, চুক্তি ছাড়া এই যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, তত বেশি মৃত্যুর মুখে পড়বে বন্দিরা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়