Singur Dakat Kali: মায়ের পুজো শেষেই উঠত হা রে রে রে রব! খোদ রঘু ডাকাত করতেন এই মায়ের পুজো। মায়ের আশীষ নিয়েই চলত দেদার লুটপাট। জানেন বাংলার বুকে কে এই ভয়ঙ্করী দেবী? যার মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হাড়হিম করা ইতিহাস। এই ডাকাতকালীর কথা শুনলে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এই মন্দিরের আনাচে কানাচে কেবলই রহস্য। মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে স্বয়ং রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের যোগসূত্র। জানেন কোথায় এই ভয়ঙ্কর দেবীর মন্দির? কী এই দেবীর মহিমা? কেনই বা দেবীকে নিয়ে মানুষের মনে এত ভয়?
বাংলার ডাকাতদের সঙ্গে কালী মায়ের যোগসূত্র আজকের নয়। এই সম্পর্ক বহু প্রাচীন। অতীতেও মায়ের পুজো সেরে তবেই ডাকাতি করতে বেরোতেন তারা। ডাকসাইটে রঘু ডাকাত থেকে শুরু করে গগন ডাকাতের মত ভয়ঙ্কর সব মানুষজন সকলেই ছিলেন মায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত। শোনা কথা, তারাও নাকি এই মায়ের নির্দেশেই ডাকাতি ছেড়ে সভ্য সমাজে ফিরে এসেছিলেন। জানেন কোথায় রয়েছে সেই মন্দির? কী এই মন্দীরের ইতিহাস?
গৌরচন্দ্রিকা ছেড়ে বরং সোজা প্রসঙ্গেই আসা যাক। আজ আমরা বলছি প্রায় ৫০০ বছরেরও প্রাচীন এক মন্দিরের কথা। মন্দিরটি রয়েছে এই বাংলাতেই। মন্দিরটি রয়েছে হুগলির সিঙ্গুরে। শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরকে ঘিরে জনশ্রুতি কম নয়। এমন নানা কথা শোনা যায় যা হয়ত আপনার বিশ্বাস করতেও অসুবিধা হবে। তবে স্থানীয়রা কিন্তু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন সেইসব কাহিনী। সেই সাথে ভীষণ সমীহও করেন এই ডাকাত কালীকে।
এলাকাবাসীর বিশ্বাস, এই মন্দিরের দেবী খুবই জাগ্রত। এই বিশ্বাসে আসেপাশের তিন গ্রামে আর কোনও কালীপুজো হয়না। এমনকি বাড়িতেও কালী মায়ের ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার অবধি রাখেনা কেউ। হ্যাঁ, এলাকাবাসী এতটাই সমীহ করে চলে মা-কে। আর সমীহ করবেনাই বা কেন। সিঙ্গুরের ডাকাতকালী মন্দিরের ইতিহাসও যে বেশ গা ছমছমে।
জনশ্রুতি বলছে, এই ডাকাত কালীর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ডাকাত সর্দার সনাতন বাগদীর হাতে। তিনি নিজেই মায়ের পুজো করতেন। তবে তার মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যায় মায়ের আরাধনা। শোনা যায়, এই ঘটনার বহু বছর পর জঙ্গলের মধ্যে এই মায়ের সন্ধান পান গগন ডাকাত। তিনিই ঘট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, নিয়মিত মায়ের পুজো করতেন তিনি। পুজোর সময় ঘট থেকে ফুল পড়লে তবেই সেদিন ডাকাতি করতে বেরোতেন গগন ডাকাত।
জনশ্রুতি এখানেই শেষ নয়। বলা হয় এই ডাকাত কালীর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে স্বয়ং রামকৃষ্ণ দেবেরও। কথিত ইতিহাস, একদা অসুস্থ ঠাকুর রামকৃষ্ণকে দেখতে মা সারদা এই পথেই রওনা দেন। এমন সময় রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত মায়ের পথ আটকে দাঁড়ায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে। আর তখনই নাকি সারদাদেবীর মধ্যেই রক্তচক্ষু মা কালীর মুখ দেখতে পেয়েছিল তারা। ভয়ে থরহরি কাঁপতে থাকে রঘু ডাকাত ও গগন ডাকাত।
শোনা কথা, সেই রাতে নাকি ডাকাতদের অনুরোধে সেখানেই থেকে যান মা সারদা। ডাকাতদের আস্তানায় মা-কে নাকি রাতে খেতে দেওয়া হয় চাল কড়াই ভাজা। সেই থেকে মায়ের নৈবদ্যের থালায় আজও চাল কড়াই ভাজাই দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, রয়েছে আরও বহু জনশ্রুতি। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের তর্ক বিতর্কও রয়েছে বিস্তর। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে যদি কিছু রয়েছে তাহলে তা হল মায়ের প্রতি ভক্তদের অগাধ বিশ্বাস।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়