হাতে আর দু’দিন বাকি। তারপরই ১৫ অগস্ট। দেশ আবার নতুন করে স্বাধীনতা দিবস পালন করবে। এটা ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু ওদের কি আছে স্বাধীনতা? ওদের নেই আর পাঁচটা বাচ্চার মতো সুন্দর পরিবেশে লালন–পালন হয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ। কেন জানেন? কারণ ওরা যৌনকর্মীদের সন্তান। সোনাগাছির পর রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম যৌনপল্লী বসিরহাটের মাটিয়ায়। সরকারি হিসাব বলছে, সেখানকার যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় হাজার। সমাজের আর পাঁচটা বাচ্চার মতো এই যৌনপল্লীর শিশুরা শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য থেকে অনেকটাই দূরে। তবে এবার একটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। যা তাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
এদিকে নিষিদ্ধপল্লীর অন্ধকার গলিতে তাদের বেড়ে ওঠা। অথচ তারাও চায় খেলতে আর পাঁচটা বাচ্চার মতো। পড়াশোনা করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে। আসলে তাদের তো কোনও দোষ নেই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। আর এখান থেকে বেরতে চায় চিরতরে। কিন্তু সেই সুযোগ হয়ে ওঠে না। কারণ যৌনপল্লী থেকে বাইরে গিয়ে যখন তারা অন্য স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে যায় তখনই চলে আসে নানান কটূক্তি। যা সহ্য করতে হয় তাদের অনেক কষ্ট করে। অন্য বাচ্চাদের অভিভাবকদের অনীহা থেকে ভর্ৎসনা বুঝিয়ে দেয় তারা বেড়ে উঠছে অন্ধকার গলিতে। এটাই তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তাই এই কচিকাঁচাদের বেড়ে উঠতে এবং তাদের স্বাধীনতার পথ খুঁজে দিতে ১৫ অগস্ট তারা এক নতুন উপহার পেতে চলেছে।
ঠিক কী উপহার পাবে তারা? অন্যদিকে এবার যৌনপল্লীর ভিতরেই তাদের জন্য তৈরি হচ্ছে পড়াশোনার সমস্তরকম ব্যবস্থা। বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার জবি থমাস কে–এর নির্দেশে মাটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার তাপস ঘোষের সহযোগিতায় এবং বসিরহাট দুর্বার সমিতির মাটিয়া শাখার উদ্যোগে বসিরহাট ২ নম্বর ব্লকের মাটিয়া যৌনপল্লীতে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে এক শিক্ষাঙ্গন। যেখানে ওই সমস্ত যৌনপল্লীর যৌনকর্মীদের সন্তানদের নতুন আলোর পথে নিয়ে যাবে। আর সেই পথ ধরেই তারা একদিন স্বাধীন হবে।
আরও পড়ুন: ‘আয়নায় নিজের মুখ দেখুন’, প্রধানমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
আর কী থাকছে সেখানে? এখানে যৌথ উদ্যোগে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দুর্বার সমিতির কর্মী অসীম সরকার বলেন, ‘শুরু করেছিলাম ৬ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে। এখন সেটা ২২ জনে এসে পৌঁছেছে। এদের যে আগ্রহ পড়াশোনা করার সেটা চোখে পড়ার মতো। এখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা হবে। তারপর তারা হাইস্কুলে চলে যাবে। আগামী দিনে এরা অনেক বড় জায়গায় পৌঁছবে বলে আশা করছি।’ ইতিমধ্যেই এই স্কুলের পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য পাঠ্যপুস্তক, খেলার জিনিসপত্র এবং আসবাবপত্র–সহ সমস্ত কিছু প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। অপেক্ষা শুধু উদ্বোধনের। যৌনকর্মীরা জানান, তারা তাদের সন্তানকে বাইরে পড়াতে গেলে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হন। এই উদ্যোগকে তারা সাধুবাদ জানাচ্ছেন।