পথ ----- ৮
--------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
ঠিক কবে থেকে পথের প্রতি এই টান সেটা বছর সময় হিসেব করে বলা বেশ কঠিন।
তবে এটা বেশ মনে পড়ে আমি তখন ক্লাস ফাইভ কি সিক্সে পড়ি, সবাই যখন দলবেঁধে
খেলতো আমি না খেলে এক একদিন পথ দিয়ে একা হেঁটে যেতাম। অনেকক্ষণ একা একাই
ঘুরতাম। তার মানে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, আমি ছোটোবেলায় সকলের সাথে না
খেলে একা একাই ঘুরে বেড়াতাম। এটা একেবারেই ঠিক নয়। গ্রামে যত ধরনের খেলা হতো
সব খেলাতেই আমি যোগ দিতাম। দলবেঁধে খেলতে আমার মোটেই খারাপ লাগতো না। তবে
যেদিন মন খারাপ লাগতো সেদিন কারও সাথে খেলতাম না।
যা পারি না তা পারি না ; যা ভালো লাগে না তার থেকে দূরে থেকেছি। কোনোদিন
জোর করে কোনো কিছুকে মনে ভালো লাগাই নি ----- এটা আমার সেই ছোটোবেলার অভ্যাস।
তাই যেদিন খেলতে ইচ্ছে করতো না সেদিন নিজের সাথে জোর করতাম না। পথ ধরে সোজা
হেঁটে যেতাম। কারও সাথে সেদিন কথা বলতাম না। নির্জনতা আমার বরাবরের প্রিয়।
তাই কিছুটা হেঁটে গিয়ে কোনো গাছের নিচে এসে বসতাম। পথের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
কিছু কি ভাবতাম? সেইসময় বয়স অনুপাতে নিশ্চয়ই কিছু ভাবতাম। আমার মতো করে
ভাবনারা আমার কাছে আসতো। পরে একটু বয়স হলে বুঝতে পেরেছি পথ আমার কাছে
রক্তমাংসের চরিত্র হয়ে হাজির হতো।
ফিরে আসতাম একরাশ ভালোলাগা নিয়ে। মনে হতো পথের সঙ্গে যেন কত কথা বলে
এসেছি। নিজের দুঃখ কষ্টের বোঝা পথকেও দিয়ে এসেছি। এক একবার নিজের সঙ্গেও খুব
করে ভেবেছি। আচ্ছা আমার পথ কি শুধুই পায়ে চলা পথ? পথ মানে কি শুধুই দৃশ্যত
একটা এগিয়ে চলার মাধ্যম। মোটেই না। মানুষের পায়ে চলার পথ ----- সে তো স্বজন।
সে কাছে এলে সারা শরীর জুড়ে একটা আনন্দের বাতাবরণ। কিন্তু সবসময় পথ আমার
কাছে এইভাবে ধরা দিত না। যেমন, গ্রীষ্মের দুপুর। প্রখর রোদ। কখনও এই রোদও আমার
কাছে পথ হয়ে ধরা দিয়েছে। কারণ তাকে মাধ্যম করে আমি যেখানে খুশি যখন খুশি
বেরিয়ে পড়তে পেরেছি। গভীর রাতের অন্ধকার। সেও আমার কাছে পথ। তাকেও সামনে
রেখে আমি যখন তখন উধাও হয়ে যেতে পেরেছি। পথ আমার কাছে সবসময় বন্ধুর মতো কাছে
কাছে থেকেছে। যখন তার সঙ্গে থেকেছি তখন আর তৃতীয় কারও প্রয়োজন অনুভব করি নি।
*********************
হরিৎ:28/05/2017
Related