#বেঙ্গালুরু: শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া অনেকেরই স্বপ্ন থাকে। বাচ্চা বয়সে অনেকেই বলে থাকে বড় হয়ে শিক্ষক হবে। আর সেই স্বপ্ন ধরে এগিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষকতা পেশা হিসেবে বেছেও নেয়। এই প্রবণতা মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মধ্যেই দেখা যায়। তবে, সমীক্ষা বলছে গত বেশ কয়েক বছরে শিক্ষকের সংখ্যা দেশে শিক্ষিকাদের থেকে অনেক বেশি ছিল। প্রাইমারি হোক বা আপার প্রাইমারি, সেকেন্ডারি হোক বা হায়ার সেকেন্ডারি, সব ক্ষেত্রেই এই রেশিওতে মহিলাদের সংখ্যা কম ছিল। ২০১২-১৩ সালের সমীক্ষা বলছে, দেশে সে সময় ৪২.৪ লাখ শিক্ষক থাকলেও শিক্ষিকার সংখ্যা ছিল ৩৫.৮ লাখ। তবে, এই কয়েক বছরে একাধিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। প্রথমবার দেশে শিক্ষিকার সংখ্যা শিক্ষকের সংখ্যাকে পিছনে ফেলেছে।
২০১৯-২০২০ সালের ইউনিফায়েড ডিসট্রিক্ট ইনফরমেশন অন স্কুল এডুকেশনের (U-DISE) করা সমীক্ষা বলছে, দেশে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত দেশে ৯৬.৮ লাখ মানুষজনের মধ্যে শিক্ষিকার সংখ্যা ৪৯.২ লাখ। এই দুই সমীক্ষার ফলাফলকে পাশাপাশি রাখলে বোঝা যাবে, গত সাত বছরে এই ক্ষেত্রে মহিলাদের সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশেরও বেশি। আর শিক্ষকের সংখ্যা ৪২.৪ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭.৭ লাখ।
সমীক্ষার মাধ্যমে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মোটের উপর শিক্ষিকার সংখ্যা বেশি হলেও তা শুধুমাত্র বেশি প্রাইমারিতে। বাকি, সেকেন্ডারি বা হায়ার সেকেন্ডারিতে মহিলাদের সংখ্যা পুরুষদের থেকে কম।
প্রি-প্রাইমারিতে শিক্ষকের সংখ্যা ২৭ হাজারের কাছাকাছি যেখানে, সেখানে শিক্ষিকার সংখ্যা ১ লাখের চেয়েও বেশি। প্রাইমারিতে আবার এই রেশিওটা অনেকটা কাছাকাছি। শিক্ষিকার সংখ্যা ১৯.৬ লাখ ও শিক্ষকের সংখ্যা ১৫.৭ লাখ। তবে, এর পর এই রেশিওতে পরিবর্তন দেখা যায়। আপার প্রাইমারিতে মহিলাদের সংখ্যা ১০.৬ লাখ ও শিক্ষকের সংখ্যা ১১.৫ লাখ। এই ব্যবধান বাড়তে শুরু করে সেকেন্ডারিতে। এখানে মহিলাদের সংখ্যা ৫.২ লাখ ও পুরুষদের সংখ্যা ৬.৩ লাখ। এর পর উচ্চ মাধ্যমিক বা হায়ার সেকেন্ডারিতেও শিক্ষকের সংখ্যা শিক্ষিকার সংখ্যাকে ছাপিয়ে যায়। এই স্তরে শিক্ষকের সংখ্যা ৩.৭ লাখ ও শিক্ষিকার সংখ্যা ২.৮ লাখ।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি মূলত কেরল, দিল্লি, মেঘালয়, পঞ্জাব ও তামিলনাড়ুতে।
তথ্য বলছে, সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকের সংখ্যা শিক্ষিকার তুলনায় অনেকটাই বেশি। তবে, বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষিকার সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেশি।
এবিষয়ে টিচার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মায়া মেনন বলছেন, “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পেশাগুলির মধ্যে শিক্ষকতা অন্যতম বলে আমি মনে করি। তাই এই পেশায় মহিলা ও পুরুষের সংখ্যায় সমতা থাকা উচিত। আসলে বাচ্চাদের এমন শিক্ষক দরকার যিনি পুরুষের চিন্তাধারা নিয়ে পড়ানোর পাশাপাশি মহিলাদের চিন্তাধারা নিয়ে পড়াতে পারবেন। তবে, এদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক স্তরে মহিলাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় কারণ তাঁরা অনেক বেশি যত্ন নিতে পারেন বলে অনেকের ধারণা রয়েছে। তবে, এক্ষেত্রে পুরুষরাও কম যান না। এই ধারণা থেকে বেরোতে না পারলে আমরা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ব কোনও এক লিঙ্গের প্রতি।”
মায়া মেনন আরও বলেন, এদেশে বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন ভিন্ন। পাশাপাশি যোগ্যতার ক্ষেত্রেও একটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তাই পুরুষদের প্রবণতা তৈরি হয় মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ানোর কারণ তাতে বেতন বেশি হয়। বিশেষ করে সরকারি স্কুলে। অন্যান্য দেশে এই ধরনের পদ্ধতি নেই বলে, সেখানে পুরুষ ও মহিলাদের রেশিওতে সমতা বজায় থাকে সমস্ত স্তরেই।
প্রসঙ্গত, এই U-DISE রিপোর্টটি শিক্ষা মন্ত্রকের স্কুল এডুকেশন ও লিটারেসি থেকে বার্ষিক প্রকাশ করা হয়েছে।
Tags: School, School Teacher