ওয়েব ডেস্কঃ সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন রহস্যময় জায়গা সম্পর্কে আমরা জানবার চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু এমন অনেক আশ্চর্য শহর বা দেশ আমাদের এই পৃথিবীতে আছে যার সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানিনা। সেই সকল অদ্ভুত এবং অত্যাশ্চর্য শহরগুলি সম্পর্কে জানবার জন্য আজকে আমাদের এই তথ্যমূলক খবর। আসুন জেনে নেয়া যাক পৃথিবীর এই রকমই কয়েকটি দেশ সম্পর্কে।
১. কুবের পেডি– অস্ট্রেলিয়া ( coober pedy, Australia)
এই সমস্ত শহরটি মাটির তলায় অবস্থিত। 1915 সালে এটি মাটির তলায় খনির মধ্যে তৈরি করা হয়। যারা এটি তৈরি করেছিলেন, সাধারণত পৃথিবীর উপরে অত্যন্ত বেশি তাপমাত্রা হবার কারণে (১২৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট,৫১ সেন্টিগ্রেড) মাটির নিচে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডায় এই শহরটি নির্মিত হয়। মাটির নিচেই এই শহরটিতে রয়েছে বিভিন্ন দোকান, গীর্জা, সভাঘর এমনকি পৃথিবীর প্রথম ফোর স্টার হোটেল পর্যন্ত। শহরটি নামকরণ করা হয়েছে কুপা পিটি ( kupa piti) থেকে যার অর্থ “হোয়াইট ম্যান’স হোল”( whiteman’s hole)
২. সেফচাওয়েন, মরক্কো ( Chefchaouen, Morocco)
পৃথিবীর সকল ট্যুরিস্টদের অন্যতম আকর্ষণ এই শহরটি মরক্কোর উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই শহরটির বিশেষত্ব হল এই শহরটির সমস্ত বাড়ি এবং রাস্তাঘাট নীল রঙে আবৃত। 1930 সালে জিউয়িস বসবাসকারীরা এই শহরটিকে নীল রং করে দেয়। এই শহরটিতে প্রায় দু’শটি হোটেল আছে যেখানে সকল ইউরোপিয়ান ট্যুরিস্টরা সারাবছর আসতে থাকে। শুধু তাই নয় এটি মরক্কোতে সব থেকে বৃহৎ হাসিস ব্যবসার জন্য বিখ্যাত।
৩. কলমা– ক্যালিফোর্নিয়া ( Colma, California, U.S.A)
এই শহরটিতে অবস্থিত বেশিরভাগ মানুষই মৃত। অর্থাৎ এখানে জীবিত মানুষের থেকে মৃত মানুষের কবর একটা বড় অংশ জুড়ে আছে। এখানে প্রায় আঠারো শ মানুষ জীবিত অবস্থায় কলমা তে বসবাস করে, সেখানে প্রায় পনেরো লাখ কবর এই শহরে রয়েছে। তাই এই শহরটিকে কবরখানা শহর বলা যেতেই পারে।
৪. মনসিয়াত নাসের– ইজিপ্ট ( Manshiyat Nasser, Egypt )
এই বস্তু শহরটি আসলে আবর্জনা দিয়ে ঢাকা। এর কারণ হল এর নিকটবর্তী প্রতিবেশী ইজিপ্টের রাজধানী কায়রো যার কোন আবর্জনা ফেলার সিস্টেম নেই। তাই এই শহরের সকল ব্যক্তি আবর্জনা সংগ্রাহক। কায়রোর তরফ থেকে এবং এদের একটি নাম দেওয়া হয়েছে যাকে বলা হয় “জাব্বালিন”(Zabbaleen) অর্থাৎ আবর্জনা মানুষ ( garbage people in arabic)। শুনতে যথেষ্ট আশ্চর্যজনক হলেও যখন কায়রোর মিউনিসিপাল সরকার একটি প্রাইভেট কোম্পানীকে আবর্জনা সরাবার জন্য ভাড়া করেছিল 2003 সালে, তখন এই শহরের লোকজন নিজেদেরকে একটি প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল যে কে সবথেকে বেশি আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারে। অবাক করার মতো বিষয় হলেও এটাই সত্যি।
৫. বামনদের গ্রাম — চীন ( Dwarf village)
এই গ্রামের সমস্ত বাসিন্দারা কেউই চার ফুট তিন ইঞ্চি অর্থাৎ 130 সেন্টিমিটারের বেশি লম্বা নয়। এই গ্রামের বাসিন্দারা এই গ্রামটি তৈরি করেছিল নিজেদেরকে বাইরের জগতের লোকজনের নিগ্রহ থেকে বাঁচাবার জন্য। কারণ তারা বেঁটে বলে বাইরের লোকজনের কাছে হাস্যাস্পদ এবং নিগৃহীত হত। বর্তমানে এই গ্রামটিতে তারা তাদের নিজস্ব পুলিশ ফোর্স এবং দমকলের ব্যবস্থা করেছে। নিজেরাই নিজেদের রোজগারের উপায় করেছে। এই গ্রামের একশো কুড়ি ঘর লোকজন তাদের ঘরগুলিকে একটি ভিন্ন ধরনের আকৃতিবিশিষ্ট গৃহে পরিণত করেছে এবং এই জায়গাটিকে পৃথিবীর বিভিন্ন ট্যুরিস্টদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিণত করেছে। এখানে একটি জীবন্ত থিম পার্ক ও রয়েছে।
৬. মনউই ( Monowi, NE)
এই শহরের সকলেই এলসি আইলার নামটির সাথে বহুল পরিচিত, এই কারণে নয় যে তিনি এই শহরের মেয়র, বরং এই কারণে যে তিনি এই শহরের একমাত্র বাসিন্দা। 1930 সাল থেকেই এই উত্তর নেব্রাস্কার শহরে দেড়শ বাসিন্দা বসবাস করত। 2000 সালে কমতে কমতে এই শহরের জনসংখ্যা একটিমাত্র দম্পতিতে এসে দাঁড়ায়, এলসি এবং তার স্বামী রুডি যিনি কিছুদিন আগেই গত হয়েছেন। বর্তমানে 70 এর বেশী বয়সী আইলার মনোয়াই ট্যাভার্ন বিয়ার পরিবেশন করেন এবং তাঁর স্বামীর প্রায় 5000 সংগৃহীত বইয়ের একটি এক কক্ষ লাইব্রেরী চালান।
৭. লঙয়ারবায়েন– নরওয়ে ( Longyearbyen, Norway)
এই জায়গা প্রচন্ড ঠান্ডা, কিন্তু সেটা কিছুই নয় বরং নরওয়ের এই সুন্দর শহরটিতে আসল ব্যাপার হল যে কেউ এখানে মারা যেতে পারবে না। অর্থাৎ এখানে যে কেউ বসবাস করতে পারে কিন্তু মৃত্যুর পরে তাকে এখানে কবরস্থ করা যায় না। তার কারণ হলো এখানকার প্রচন্ড ঠান্ডায় মৃত শরীর গুলিতে পচন ধরে না এবং সেগুলি সহজেই মাটিতে মিশে যায় না, একই রকম থেকে যায় বছরের পর বছর। তাই এখানে মাইনাস তাপমাত্রায় 1918 সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর পরে এই শহরে কোন রকম কবর দেবার ব্যবস্থা নেই।
৮. রেনেস – ল- চ্যাটো, ফ্রান্স ( Rennes – le – Chateau, France)
এই ছোট্ট এবং সুন্দর ফ্রেঞ্চ পাহাড়ি শহরটি এর নিজস্ব রহস্যময়, গুপ্ত ধনসম্পত্তি, পৌরাণিক গাথা, রহস্যময় সকল মার্ডার, বিভিন্ন ধরনের প্রথা এবং খ্রীষ্টানদের বিভিন্ন গুপ্ত ব্যাপারের জন্য বিখ্যাত। ড্যান ব্রাউন হয়তো এই কারণেই তাঁর অন্যতম সফল এবং সুপারহিট দ্য ভিঞ্চি কোড এই বিতর্কিত জায়গায় শ্যুট করেছিলেন।
৯. গিবসনটন– ফ্লোরিডা, ( Gibsonton, Florida)
ফ্লোরিডা হল এই মজাদার শহরটির আঁতুড়ঘর তার কারণ এই শহরে শুধুমাত্র সরকারিভাবে সার্কাস শিল্পের রিটায়ার্ড লোকজন বসবাস করেন। এই শহরটির বিশেষত্ব এখানে প্রচুর মিউজিয়াম রয়েছে যেগুলি সার্কাসের জীবনযাত্রার কাহিনী বর্ণনা করে।
১০. এলিসটা– রাশিয়া ( Elista, Russia)
রাশিয়ান এই শহরটিকে দাবার শহর বা chess city বলা হয়। এই শহরের স্থপতি এবং কারিগরেরা দাবা খেলা সম্পর্কে এতটাই পাগল ছিল যে তারা এই শহরটি তৈরী করার সময় দাবার ছক এবং এই খেলা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে সমস্ত শহরটি তৈরী করেছে।
১১. কাওলুন– হংকং (Kowloon, Hong Kong )
1994 সালে ধ্বংস হবার আগে পর্যন্ত কাওলুন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ঘন জনবসতিপূর্ণ একটি শহর ছিল যেখানে প্রায় 6.5 একর জমিতে 50 হাজার বা তার বেশি সংখ্যক লোকজন বসবাস করত। সতেরশো শতাব্দীর সময় এই শহরটি চীনা মিলিটারি দ্বারা আবিষ্কৃত হয় এবং স্থানীয় দুর্গ হিসেবে এটি তখন ব্যবহৃত হতো। 1950 সালের কাছাকাছি সময় এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এই পরিত্যক্ত শহরটি বর্তমানে অপরাধ করার জন্য আদর্শ জায়গা। অপরাধীদের মুক্ত অঞ্চল হিসাবে এটি এখন ঘোষিত। সমস্ত ধরনের দুষ্কর্ম এখানে করা হয়ে থাকে যেগুলি ট্রায়েডদের (Triads) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেহেতু এই শহরে কোন রকম কোন সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই তাই এখানকার বাড়িগুলি কোন রকম কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মিত এবং একটি বাড়ির ওপর আরেকটি বাড়ি নির্মিত হতে থাকে কোন সাবধানতা ছাড়াই। এইভাবে এই শহরটির জনসংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সাথে সাথে বেড়ে চলেছে অপরাধ এবং অপরাধীর সংখ্যাও।
১২. দ্য ভিলেজেস– ফ্লোরিডা ( The villages, Florida, U.S.A)
ফ্লোরিডার এই সম্প্রদায়টি দাবি করে যে এখানে কোন আবাসিক 19 বছরের কম হবে না এবং প্রতিটি গৃহে অন্তত একজন ব্যক্তি থাকবেন যার বয়স হতে হবে 55 বছরের ওপর। এই গ্রামের বসবাসকারী আবাসিকদের মূল উদ্দেশ্য হলো একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। বিশেষ করে সেই সকল ব্যক্তিদের জন্য, যারা নির্দিষ্ট একটি বয়সের পরে তাঁদের রিটায়ার্ড জীবন সুস্থ ও আনন্দপূর্ণ ভাবে কাটাতে চান।