যতবার বাংলা সফরে এসেছেন অমিত শাহ, ততবারই তিনি বাংলায় ২০০-র বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসার দাবি জানিয়েছেন। আজও কোচবিহার থেকে সেই একই দাবি করেন অমিত শাহ। আর অমিত শাহকে পাল্টা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওনাকে নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়ার চ্যালেঞ্জ জানালেন।রাজ্যের বিধানসভা ভোটে দাঁড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অমিত শাহকে বলুন না বাংলায় ভোটে লড়তে। উনি যদি জিতে যান, তাহলে বাংলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানাব।’ আসন্ন ভোটে তাঁর দল ২২১ আসনের বেশি পাবে বলেও আত্মপ্রত্যয়ী কণ্ঠে দাবি করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে নন্দীগ্রামের জনসভা থেকে নিজেকে নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর প্রায় ছয় বছর পর প্রথম নন্দীগ্রামে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখান থেকে শুভেন্দুকে হারানোর জন্য নিজেকে নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এও জানান যে, সম্ভব হলে তিনি নন্দীগ্রাম আর ভবানীপুর দুটি আসন থেকেই প্রার্থী হবেন। ভবানীপুর আর নন্দীগ্রামকে তিনি বড় বোন আর মেজো বোন বলেই সম্বোধন করেন। যদিও বিজেপি এখনও কোনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি, সেহেতু বলা যাচ্ছে না যে নন্দীগ্রাম থেকে বিজেপির প্রার্থী কে হবেন? তবে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীই হবেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে যে, যেই অমিত শাহকে এতদিন ধরে বহিরাগত বলে নিশানা করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই অমিত শাহকে তিনি নিজেই কি করে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ জানান?
এদিনের অনুষ্ঠানে প্রথম থেকেই কার্যত বিজেপিকে তুলোধনা করতে শুরু করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপির বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ এনে বলেন, ‘বিজেপি আগে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করত। এখন জাতি নিয়ে রাজনীতি করছে। বাংলাতে কখনও যা হয়নি, তাই হচ্ছে। বাঙালিকে বাংলাদেশি বাঙালি আর এপারের বাঙালিতে ভাগাভাগি করছে। মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ আর সিবিআই-আয়কর দিয়ে ভয় দেখানোর রাজনীতি করছে। শুধুই গুণ্ডামির রাজনীতি চলছে। কিন্তু আমাকে ধমকে-চমকে কিছু করতে পারবে না। বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতির কাছে কোনও কারণেই মাথানত করব না।’এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের প্রশ্নে জিততে পারবে না জেনে বিজেপি গুণ্ডামির রাজনীতি শুরু করেছে। কিন্তু একটা কথা পরিস্কার জানিয়ে রাখতে চাই, ভিন রাজ্য থেকে বহিরাগতদের এসে কিছুতেই বাংলাকে লুঠতে দেব না। দিল্লি থেকে কেউ কেন বাংলাকে নিয়ন্ত্রণ করবেন? বাংলায় বসে বাংলাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
আরেকদিকে, আজ কোচবিহার থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে অমিত শাহ বলেন, আমি ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ২০ টি আসন জয়ের লক্ষ্য রেখেছিলাম। মমতা দিদি তখন বলেছিলেন যে আমরা আন্ডা পাবো। কিন্তু আমরা আন্ডা পাইনি। বাংলার মানুষ আমাদের দুহাত ভরিয়ে দিয়েছে, আমরা ১৮ টি আসন পেয়েছি, এবারের ভোটেও আমরা ২০০ আসন পাব। এবারের নির্বাচন ঐতিহাসিক হতে চলেছে।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে অমিত শাহের মতো ধুরন্দর রাজনৈতিক ব্যক্তির গণনা খুব একটা খারাপ হয় না। উনি যেই যেই রাজ্যে জয়ের দাবি করেন, যেই কয়টি আসন পাওয়ার দাবি করেন, সেখানে বিজেপি ওনার আশা অনুযায়ীই ফল করে। আর এটাই শাসক দলের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।