ওয়েব ডেস্কঃ ভারত-ইংল্যান্ডের মহিলা বিশ্বকাপ ফাইনাল শুরু হওয়ার আগে থেকেই নানা ঘটনার সূত্রপাত হতে শুরু করে। এদিন নাকি অক্ষয় কুমার স্টেডিয়াম পর্যন্ত খালি পায়ে হেঁটে এসেছিলেন।
টানটান উত্তেজনার এক গেম শুরু হয়ে যায়। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহারণে মিতালিরা। সেখানে সারা দেশ ও গোটা বলিউড কামনা করছে বিশ্বকাপ ঘরে আনুক মহিলারা। সকলেই শুভেচ্ছা জানিয়ে ট্যুইট করেছেন। তার মধ্যেই চরম অশালীন ইঙ্গিত করে বসলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ঋষি কাপুর।
প্রবীণ এই অভিনেতা কী বলেছেন শুনলে অবাক হবেন — ২০০২-এ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের পর লর্ডসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জার্সি ওড়ানোর ছবি দিয়ে ঋষি কাপুর দাবি করেন, সেই কাজটির পুনরাবৃত্তি হোক। আর এতেই ট্যুইটারে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।
প্রসঙ্গত, স্মৃতির ব্যালকনিতে লর্ডসে মহারাজকীয় কায়দায় জার্সি খুলে সৌরভের ইংরেজ ক্রিকেটারকে জবাব দেওয়ার সে অভিব্যক্তি আজও মানুষের মনে রয়েছে। মিতালিরা লর্ডসে যখন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেললেন, তখন সেই ঘটনাই মাথায় আসে। সবাই অদ্বিতীয়াদের জয় চেয়েছিলেন, তাবলে সৌরভের সেই জার্সি ওড়ানো ঘটনার পুনরাবৃত্তি মহিলাদের থেকে কেউই চাইবেন না। কাল ঋষি কাপুর যে পুনরাবৃত্তি দাবি করেছেন তা নেটিজেনরা মোটেও ভালো চোখে নিচ্ছেন না।
ঋষি কাপুর বিষয়টি কোনও খারাপ মানে করে বলতে চাননি বলে পরে দাবী করেন। আসলে তিনি মিতালিদের জয়ের কথাই বলতে চেয়েছিলেন। পরে অস্ৱস্তিতে পরে ঋষি কাপুর ফের ট্যুইট করেন লেখেন…কী ভুল টা বলেছি! আমি সৌরভকেই জার্সি ওড়াতে বলেছি, যত সব নোংরা মন…
টিম ইন্ডিয়া আজ হেরে গেল। ৯ রানে চতুর্থবারের জন্য ওয়ার্ল্ডকাপ জিতল ইংল্যান্ড। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে অভিজ্ঞতার অভাব চোখে এলো মিতালিবাহিনীর। জেতা ম্যাচের চাবিকাঠি অধরা থাকলেও স্পন্সরবিহীন এই দল বুঝিয়ে দিল ২০০৫ সালের মতো ভারত ফাইনাল খেলতে পারে। মিতালি-ঝুলনদের লড়াই মনে রাখবে মানুষ। যেখানে ইংল্যান্ডের মহিলাদের বিশাল চেহারা, ওয়েল ট্রেন্ড বডি সেখানে ভারতীয়দের দেখলেই বোঝা যায় সেভাবে যত্ন তারা পাননি।
তবু লড়াই তো করেছে। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত আসার পথটা দীর্ঘ। আজও ৪ উইকেটে ১৯১ ছিল যা গুটিয়ে গেল ২১৯ রানে ভারতের। ইংল্যান্ডকে কম রানে আটকে রাখলেও মিতালিদের বিশ্বকাপ হাতে তোলা হল না। আঠাশ রানে সাত উইকেট তাসের ঘরের মতো গেল। কারণ অভিজ্ঞতা। সেই মাইন্ড ম্যানেজার এই ভারতীয় দলে অভাব। আসলে সেই টাকার অভাব। কোহলিদের মতো যত্ন তারা পাননি। তাই মানতে হল হার। তবু লড়াই করেছিল।
মেঘলা আবহাওয়া, তার উপরে ঢালু লর্ডসের পিচে ২২৯ মোটেও হেলাফেলার স্কোর ছিল না। অভ্যাসে না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয় বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের। শেষের দিকে ভাল বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। এদিন শুরুতেই ফের আউট হয়ে যান স্মৃতি মনধানা। সেখান থেকে খেলা ধরেন পুনম রউত ও ভারতের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান অধিনায়ক মিতালি রাজ। মিতালিকে যখন সেট হলেন ঠিক তখনই রান আউট হয়ে গেলেন। ১৭ রানে মিতালি আউট হওয়ার পরে ক্রিজে এলেন আগের ম্যাচের নায়ক ‘পাঞ্জাবি হ্যারিকেন’ হরমনপ্রীত কৌর।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৭১ রানে অপরাজিত ছিলেন। আজ সেখান থেকেই যেন শুরু করেছেন। তাঁর হাত থেকে বেশ কয়েকটা ধাঁধানো ছক্কা। অন্যদিকে রক সলিড পুনম রউত। দু’জনের পার্টনারশিপ ভারতকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছিল। অর্ধ শতরান করার পর আউট হলেন হরমনপ্রীত, কিছু বল তিনি অতিরিক্ত খেলেছিলেন। তখন ঝুঁকি নেওয়ার দরকার আদৌ ছিল না। ১৩৮ রানে পড়ল ৩ উইকেট। ১৯১ রানে পড়ল চার নম্বর উইকেট। সেট ব্যাটসম্যান পুনম রউত ৮৬ রানে আউট হলেন। এরপর থেকে আসা আর যাওয়া। অকারণ তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন ভারতীয় মহিলারা। এর আগে অবশ্য বোলিংয়ে বাংলার ঝুলন গোস্বামী দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন। দশ ওভারে ৩টি মেডেন ওভার সহ ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন।
১৯১ রানে পড়ল চার নম্বর উইকেট। রউত আউট হলেন। তিনি সেট ব্যাটসম্যান। তাঁর দেখে খেলা উচিত ছিল। পুনম আউট হওয়ার পরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল মিতালির দল। তবে এই ফাইনাল পর্যন্ত লড়াইটা ভুলবে না ভারতবাসী। শেষ উইকেট যাওয়ার পরে মুখ ঢেকে ফেলেন মিতালিরাজ। তবু সাহসগুলো ছিল। অভিজ্ঞতার অভাবের জন্য হারতে হল, বৃষ্টি ভেজা লর্ডসে। এখন একটাই আশা এবার হয়তো মহিলা ক্রিকেট নিয়ে দেশ ভাববে। অন্তত লাইভ সম্প্রচারটুকু হবে চ্যানেলে খেলাগুলি। স্পন্সর আসবেন। তবে যেন টাকার লোভে পেশাদার খেলার দিক থেকে ফোকাস নষ্ট না হয় সেটুকুই অদ্বিতীয়াদের কাছে আশা করব।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্যুইটারে লিখেছেন, “মহিলা ক্রিকেটাররা নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন আজ। দারুণ দক্ষতা ও ধৈর্য দেখিয়েছেন তাঁরা। দলকে নিয়ে আমরা গর্বিত।”