আপনার বাড়িতে বা পরিজন এর মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুটি স্কুল এর গন্ডি পেরোতে চলেছে? দেশের জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা প্রতিযোগিতার বাজারে তাকে বাতলে দিতে পারেন সঠিক পথ, যা কেরিয়ার এর সাথে সাথে নিজের জীবনের জন্যও কিছু অবসর সময় উপহার দিতে পারে ।
এই কথাটা হয়তো একেবারে সত্যি যে দুনিয়ায় এমন কোনো কাজ নেই যা ১০০% স্ট্রেস ফ্রি অর্থাৎ চিন্তাহীন. স্যালারি অর্থাৎ মাইনে বাড়ার সাথে সাথে কাজের চাপ ও বাড়বে , এই সাধারণ ধারণাটি মোটামুটি সবার মধ্যেই আছে. বিশেষ করে তাও যদি হয়
বেসরকারি চাকরি. কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধারণাটি সত্যিও বটে. যেমন ধরুন সেলস এর চাকরি. শোনা যায় এই পেশায় নাকি মানুষ যত উন্নতি করে , যত তার মাইনে বাড়ে ততই নাকি তার কাজের চাপ ও বাড়তে থাকে. কিন্তু এমন অনেক পেশাই আছে যেখানে মাইনে অপেক্ষাকৃত অনেকটাই বেশি আবার কাজের চাপ ও সেই তুলনায় অনেকটাই কম. খুব জানতে ইচ্ছা করছে না? চোখ রাখুন আমাদের পাতায়.
১০টি কমচাপযুক্ত অথচ অত্যন্ত ভালো মাইনের চাকরির সন্ধান
১. জ্যোতির্বিজ্ঞানী (Astronomers) : এই পেশার সাথে যারা যুক্ত আছেন তাদের মাইনে বছরে প্রায় ৯.৬ লক্ষ থেকে ১৮ লক্ষ . অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার সাথে সাথে মাইনে এবং পদোন্নতি দুই ই ঘটে. এই পেশার মূল কাজ হলো পরীক্ষা ও নিরীক্ষণের
মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় ঘটনার ব্যাখ্যা করা যা বাস্তবে ঘটে যাওয়া সমস্যাগুলি সমাধান করা. এনাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময় সীমা থাকে না . এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয়, যেমন পিএইচডি.
বা স্নাতোকত্তোর ডিগ্রী . ভারতের একজন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী হলেন শ্রী মেঘনাদ সাহা.
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (University Professor): একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত থাকেন যেমন বক্তৃতা প্রদান করা, অনুশীলন তৈরি করা, ছাত্রদের গবেষণাসংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করতে সাহায্য করা ইত্যাদি.
এই পেশার অন্তর্ভুক্ত মানুষেরা বছরে প্রায় ৪ লক্ষ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা আয় করার সাথে সাথে লম্বা ছুটি, সরকারি ছুটি, সীমাবদ্ধ কাজের সময় এবং আরো অনেক সুবিধা পেয়ে থাকেন. কিছু শিক্ষাসম্মেলন ছাড়া তাদেরকে কাজ সম্বন্ধীয় কোনো রকম ঘোরাঘুরি ও করতে হয় না.
৩. পথ্যব্যবস্থাবিদ্যাবিদ (Dietician): এদের সাধারণত দেখা যায়, বিভিন্ন হাসপাতালে, বেসরকারি চিকিৎসালয়ে এবং অনেক সময় স্বনিযুক্তিতে. আজকের ব্যাস্তসম্মত ও বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের ফলে সৃষ্টি হওয়া এক প্রধান সমস্যা স্থূলতা বা মেদবাহুল্যতার বিরুদ্ধে সাধারণ থেকে শুরু করে মোটামুটি সব স্তরের মানুষের সহায়ক হিসেবে কাজ করে হলো এদের মুখ্য উদ্দেশ্য. আপনার সৌজন্যমূলক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার নাই এই পেশায় সাফল্য পেতে সাহায্য করবে. সবচেয়ে বোরো
কথা আপনি আপনার সময় অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন. ফুড ইন্ডাস্ট্রি র সাম্প্রতিক অদলবদলগুলি নিয়ে এনারা প্রচুর পড়াশোনা করেন. মানুষের সমস্যার সাথে সাথে এই পেশার চাহিদাও বাড়ছে. এদের বার্ষিক আয় মোটামুটি ৪.৬ লক্ষ থেকে ১৫.৩ লক্ষ হয়ে থাকে.
৪.গ্রন্থাগারিক (Librarian): কম চাপযুক্ত কাজের মধ্যে এটি অন্যতম. একজন গ্রন্থাগারিকের প্রধান কাজ হলো গ্রন্থাগারে মজুত সমস্ত বইয়ের তালিকা তৈরি করা এবং তালিকা অনুযায়ী সেগুলি সাজিয়ে রাখা এবং সময়ে সময়ে রক্ষনা বেক্ষন করা.
এছাড়া কেউ যদি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে সেটাকে দক্ষতার সাথে সামলানো ও তাদের কাজ. গ্রন্থাগার সম্ভবত পৃথিবীর অন্যতম শান্তিপূর্ণ কাজের জায়গা. এটি একটি স্বাধীন পেশা যেখানে আপনাকে কারুর কাছে কোনো কাজের জন উত্তর দিতে হবে না.
তাই নিজের গ্রন্থাগারিকদের বার্ষিক আয় প্রায় ২.৫ লক্ষ থেকে ৯.৫ লক্ষ হয়ে থাকে.
৫. Application Software Developers: একজন অপ্প্লিকেশন সফটওয়্যারে যতবেশি দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হবেন,সুদূর ভবিষ্যতে তার পেশাগত পথ তত বেশি উন্নত হবে. তবে এদের কাজের চাপ কোম্পানি বিশেষে হয়ে থাকে. বছরে এনারা ৪.২ লক্ষ থেকে ১৮ লক্ষ বা তার বেশি ও আয় করে থাকেন. এমন অনেক কোম্পানি এ আছে যেখানে এনারা এনাদের সুবিধামতো কাজ করে থাকেন.
৬. ভূবিজ্ঞানী (Geoscientist): ভূবিজ্ঞানীদের কাজ হলো ভূপৃষ্ঠের প্রকৃতি সম্বন্ধে পড়াশোনা এবং চর্চা করা এবং তার সাথে সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার উপর এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা. এছাড়া ভূতত্ত্ব, সামুদ্রিক বিজ্ঞান, গ্রহ বিজ্ঞান, বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, মাটি বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গবেষণা করাও এনাদের কাজ. নির্দিষ্ট বিষয়ে
স্নাতকোত্তরধারী মানুষেরা এই পেশায় আসতে পারেন. সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই উঁচু পদে কাজ করা যায়. বার্ষিক আয় প্রায় ৮.৫ লক্ষ থেকে ২৭ লক্ষ.
৭. ব্যবসা বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞ (Business Analytics Expert): আপনার যদি গাণিতিক ধারণা খুব প্রবল হয় , আপনি যদি আধুনিক প্রযুক্তিগত দিক থেকে অন্যান্যদের থেকে এগিয়ে থাকেন এবং সর্বোপরি আপনার যদি স্বাভাবিক ব্যবসা সংক্রান্ত ধারণা থাকে তাহলে এই পেশা আপনার জন্য একেবারে আদর্শ. কোম্পানির অংশীদার এবং কোম্পানির কার্যকরী দলের মধ্যে এনারা সংযোগ স্থাপন করে থাকেন. শুধু তাই নয় কোম্পানির ভবিষ্যৎ কার্যাবলী এবং লাভ ক্ষতির কথা মাথায় রেখে ব্যবসা বৃদ্ধি সম্বন্ধে পরামর্শ দিয়ে থাকেন. একজন সার্থক ব্যবসা বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞের বার্ষিক আয় প্রায় ৪.৫ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ.
৮. ব্যবসা পরামর্শ (Business Consultancy): তৃতীয় পক্ষ হিসাবে এনারা আপনার ব্যবসার সমস্যাগুলি, কার্য সংস্কৃতি এবং বর্তমান কাজের গতি পর্যালোচনা করেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন. এনারা কোম্পানির উচ্চস্তরে কাজ করেন.
কোম্পানি অনুযায়ী এদের কাজের চাপ নির্ভর করে. অনেক সময় এনারা স্বনিযুক্তিতে কাজ করে থাকেন. এনাদের বার্ষিক আয় প্রায় ১৪.২ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ.
৯. জৈবিক প্রকৌশলী (Biomedical Engineering) : এনাদের প্রধান কাজ হলো জীববিজ্ঞান এবং ওষুধসংক্রান্ত সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করা. এছাড়া রোবোটিক অস্ত্র প্রচারের যন্ত্রগুলি উৎপাদন করা এবং ওষুধসংক্রান্ত সরঞ্জাম ব্যবস্থা ও পরিচালনা করা ও এদের কাজ. এনাদের প্রচেষ্টা রুগীদের যত্নের গুণাগুণ আরো উন্নত করে. একটি কম চাপযুক্ত এবং অত্যন্ত সম্মানজনক কাজ ভালোরকম পারিশ্রমিকের সাথে যা বছরে প্রায় ২.২ লক্ষ থেকে ১ ১ লক্ষ.
১০. রাষ্ট্রবিজ্ঞানী (Political Scientist): রাজনৈতিক ব্যবস্থার উৎস এবং কার্য পর্যালোচনা করা হলো এনাদের প্রধান কাজ. নির্দিষ্ট বিষয়ে স্নাতোকত্তোর বা পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা এই পেশায় এসে থাকেন. এনারা সরকারি এবং রাজনৈতিক দলে
উচ্চস্তরে কাজ করে থাকেন. বার্ষিক আয় প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ২ ০ লক্ষ.
কি, ভাবছেন তো কোন পেশাটা বেছে নেবেন ? আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, জ্ঞান, এবং দক্ষতা অনুযায়ী ওপরের যে কোনো একটি বেছে নিন. তবে হ্যাঁ মনে রাখবেন প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কিন্তু পূর্ব পরিকল্পনা থাকা দরকার. তবেই কিন্তু পেশাগত দিক থেকে
স্থিতিশীলতা এবং সাফল্য পাওয়া যায়.