ধর্মগুরুদের নিয়ে মাতামাতি ভারতবাসীর প্রাচীন অভ্যাস ৷ বিরিঞ্চিবাবার গল্পের ছায়া বাস্তব জীবনের প্রতি পদে ৷ তাও হুঁশ ফেরেনা কারোরই ৷ সুনাম ও দুর্নাম দুদিক দিয়েই খ্যাত বা কুখ্যাত হয়েছেন এই গুরুরা ৷ কিন্তু ভাঁটা পড়েনি তাদের জনপ্রিয়তায় ৷শুধু সাধাণ মানুষ নন, সেলেব্রেটিরাও রয়েছেন তাদের ভক্তের তালিকায় ৷ ইতিমধ্যেই ১৪ জন ‘ভন্ড বাবার’ তালিকা প্রকাশ করেছে অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদ। সেই ‘ভন্ড বাবা’-র তালিকায় রয়েছে আসারাম, রাধে মা, নারায়ণ সাঁই, নির্মল বাবার মতো ব্যক্তিদের নাম। নাম রয়েছে রাম রহিমেরও। তালিকা বলছে এই ধর্মগুরু ও গুরু মাদের সন্দেহজনক কাজকর্মের জন্যই এত দুর্নাম। আখড়ার ঘোষণা অনুযায়ী, এমন ‘ভন্ড-সাধু’র সংখ্যা আপাতত ১৪ ।
এখানে সেরকম কয়েক জন তথাকথিত ধর্মগুরুদের কান্ড কারখানার হদিশ রইল-
১. গুরমিত সিংহ রাম রহিম শুধু নামেই ধর্মগুরু। তিনি পরতেন আধুনিক পোশাক। সিনেমাতেও অভিনয় করতেন তিনি৷ ঝলমলে পোশাক গায়ে মিউজিক ভিডিওতে তার বিকট নাচের দৃশ্যও বিরল নয়। হরিয়ানা-পাঞ্জাবে অন্তত পাঁচ লাখ ভক্ত ছিল গুরমিত রাম রহিমের। তাদের দাবি, সারা বিশ্বে গুরু রাম রহিমের ছয় কোটি ভক্ত আছে। তবে বিতর্কের জেরে আপাতত শ্রীঘরে তিনি৷
ডেরা সাচ্চা সওদা নামের একটি সম্প্রদায়ের নেতা এই রাম রহিমের হরিয়ানার সিরসায় ছিল প্রকাণ্ড হাই-টেক আশ্রম। রাম রহিমকে গত বছর ২৫ অগাস্ট হরিয়ানার একটি আদালত ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে৷
২. রাম রহিমের হরিয়ানাতেই আরেক স্বঘোষিত ধর্মগুরু রামপালকে গ্রেফতারের ঘটনাও সাড়া ফেলেছিল দেশে৷ স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১ (সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচনা), ১২১(এ) (দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র), ১২২ (ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্র সংগ্রহ) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। খুনের চেষ্টা, দাঙ্গা ও বেআইনিভাবে আটক রাখার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ২০১৪ সালে তার আস্তানা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে গেলে ভক্তদের বাধার মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। মহিলাদের টয়লেট থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় সিসিটিভি।
৩. ভারতের আরেক জনপ্রিয় ধর্মগুরু স্বামী নিত্যানন্দও জড়িয়েছেন যৌন কেলেঙ্কারিতে। পরমহংস নিত্যানন্দ নামের এই গুরুর বিশ্বব্যাপী ২০ লক্ষ ভক্ত রয়েছে বলে দাবি করা হয়ে থাকে। একটি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে এক অভিনেত্রীর সাথে আপত্তিকর দৃশ্যেও দেখা যায় তাকে । তার আশ্রমে অভিযান চালিয়ে মেলে মাদকদ্রব্য ও জন্মনিরোধক সামগ্রীও।
৪. আরেক ‘জনপ্রিয়’ ধর্মগুরু রাধে মা৷ এই গুরু মাকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ এক ভক্তের অনুরোধে তিনি নাকি পণের দাবিতে নির্যাতন চালিয়েছিলেন ভক্তের পরিবারের বধূর উপরে৷ এছাড়াও একাধিকবার হিন্দি গানের সঙ্গে অশ্লীল ভাবে নাচতে দেখা গেছে তাঁকে৷ অথচ এই সাধ্বী-অন্ত-প্রাণ পরিচালক সুভাষ ঘাই৷ স্ত্রী মুক্তাকে নিয়ে তিনি প্রায়ই যান রাধে মায়ের চরণে৷
৫. এছাড়াও রয়েছেন Oneness University-র প্রতিষ্ঠাতা কল্কি ভগবান৷ এই সাধকের আশ্রম চেন্নাইয়ে৷ তাঁর ঘরানার প্রচারিত মত হল, মহাবিশ্বে সবাই সমান৷ কেউ কারও থেকে কম নয়৷ আবার বেশিও নয়৷ এই দর্শনে মুগ্ধ তারকা ঋত্বিক রোশন, শিল্পা শেঠি৷ অন্যদিকে কল্কি ভগবানের বিরুদ্ধেই আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে ভুরি ভুরি৷
৬. অমৃতসরের রাধাস্বামী সত্সঙ্গ বিয়াসও রয়েছে জনপ্রিয় অথচ ভন্ড সাধুদের তালিকায়৷ এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কথা ছাড়া এক পা’ও নাকি নড়ে না শাহিদ কাপুরের পরিবার৷ শাহিদ নাকি স্ত্রীকেও পেয়েছেন গুরুর খুঁজে দেওয়া সম্বন্ধে৷ ধর্মীয় এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা জমি দখল করেছে৷ এক গুরুদ্বারের জমি নাকি তারা হস্তগত করে নিয়েছে৷ এই নিয়ে এখন বিতর্ক তুঙ্গে৷
৭. রবি শঙ্করকে কে না চেনে৷ ওঁর আর্ট অফ লিভিং বলতে একসময় অন্ধ ছিলেন শিল্পা শেঠী৷ তিনি ছাড়াও ওঁর তারকা ভক্ত নেহাত্ কম নয়৷ দিয়া মির্জা, লারা দত্তা নিয়মিত তাঁর আশ্রমে যাতায়াত করেন৷ তিনি তিনদিন ধরে ধর্মীয় উত্সব করেছিলেন গত বছর৷ অভিযোগ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যমুনা নদীর ১০০০ একর পলিজমি৷ যা সারাতে সময় লাগবে ১০ বছর৷ অর্থ প্রয়োজন ৪২ কোটি৷ আদালতে এই মামলায় ভৎসিত হন তিনি৷
৮. সত্য সাঁই বাবা :
তিনি নিজেকে দাবি করেন শিরডির সাধক সাঁই বাবার এক অবতার বলে৷ তাঁর তারকা ভক্তের সংখ্যা অগণিত৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম অমিতাভ বচ্চনের পরিবার৷ জীবদ্দশায় তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক জালিয়াতি, যৌন হেনস্থা, বুজরুকি-সহ একাধিক অভিযোগ উঠেছ৷ যদিও কিছুই প্রমাণিত হয়নি৷ আজও ভক্ত স্রোতে টান পড়েনি তার৷
৯. ওশো রজনীশ :
তাঁর সান্নিধ্যে বিনোদ খান্না হয়ে গিয়েছিলেন সন্ন্যাসী বিনোদ ভারতী৷ খ্যাতির শীর্ষে থাকার সময়েই ছেড়ে দিয়েছিলেন অভিনয়৷ পরবর্তী কালে পারভিন বাবি ও মহেশ ভাটও তাঁর ভক্ত হয়েছিলেন৷ ওশোর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ উঠেছিল কেচ্ছার, যে তাঁর নামই হয়ে গিয়েছিল সেক্স গুরু৷
১০. নিজের যৌন কেচ্ছা দিয়ে দেশে সাড়া ফেলেছিলেন আশারাম বাপু৷ গ্রেফতার হয়েছিলেন নাবালিকা ধর্ষণের মামলায়। রয়েছে নারী শিষ্যদের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও তৈরির অভিযোগও। পিতার মতো পুত্র নারায়ন সাইয়েরও একই রকম অভিযোগ রয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলে লাগাতার ধর্মীয় বাণী প্রচার আর ভজন গোটা ভারত জুড়ে আশারাম বাপুর কোটি কোটি ভক্ত তৈরি করেছিল, সেই সঙ্গে উত্তর ভারতের নানা রাজ্যে তিনি তৈরি করেছিলেন বিশাল সব আশ্রম ও বহু কোটি টাকার সম্পত্তি।