কলকাতা হাইকোর্টের তীব্র ভর্ত্সনার পর সক্রিয় হল নির্বাচন কমিশন। লাগামছাড়া করোনা সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের বাকি দু’ দফার জন্য একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করল তারা। বৃহস্পতিবার সন্ধে ৭টা থেকে সেই নির্দেশিকা কার্যকর হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারকে কেন্দ্র করে করোনা সুরক্ষাবিধি ব্যাপক ভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ রীতিমতো ক্ষুব্ধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ১৬ এপ্রিল সর্বদল বৈঠক ডাকে। সেই বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী সভা-সমাবেশে কার্যত নৈশ কার্ফু জারি করে। কিন্তু তার পরেও অবাধে কোভিড সুরক্ষাবিধি লঙ্ঘন করা হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বড়ো পদক্ষেপ করতে হল কমিশনকে।
কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী রোডশোয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে সাইকেল/বাইক/গাড়ি নিয়ে মিছিল। এমনকি ৫০০-র বেশি লোকের জনসভাও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের নির্দেশে বলা হয়েছে, কমিশন ‘গভীর ক্ষোভের’ সঙ্গে লক্ষ করছে, রাজনৈতিক দলগুলি এবং প্রার্থীরা জনসমাবেশে কোনো রকম সুরক্ষাবিধি মানছেন না। তাই কোনো রোডশো বা সাইকেল,বাইক,গাড়ি নিয়ে মিছিলে অনুমতি দেওয়া থাকলে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনকে তীব্র ভর্ত্সনা করে কলকাতা হাইকোর্ট। কোভিড ১৯-এর মারাত্মক দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আট দফার বিশাল নির্বাচনকে যে ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার জন্য কমিশন হাইকোর্টের কাছে তীব্র তিরস্কৃত হয়। বিশেষ উদ্বেগের সঙ্গে হাইকোর্ট লক্ষ করেছে, নির্বাচনী প্রচার কোভিড সংক্রমণ ছড়ানোর সহজ মাধ্যম হলেও নিজেদের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এটা ঠেকাতে কমিশন যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি।
আদালত বলে, ‘নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তবু এই কোভিড পরিস্থিতিতে ভোট নিয়ে তারা কী করছে? কমিশন শুধু সার্কুলার জারি করছে আর জনগণের হাতে সব কিছু ছেড়ে দিচ্ছে। নির্দেশ রূপায়ণ করার ক্ষমতা কিন্তু নির্বাচন কমিশনেরই।’
‘টি এন শেশন যা করেছিলেন তার দশ ভাগের এক ভাগ কাজও করছে না কমিশন’ – এই মন্তব্য করে বিচারপতিরা কমিশনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কমিশন যদি ব্যবস্থা না নেয়, তা হলে আদালতই নেবে।
নির্বাচনের দিনগুলিতে কোভিড সুরক্ষাবিধি প্রয়োগ করা নিয়ে হাইকোর্টে তিনটি জনস্বার্থের আবেদন জনা পড়ে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ওই তিন আবেদনের শুনানির সময় কমিশনের তীব্র নিন্দা করে। শুক্রবারের শুনানিতে কমিশনের কাছ থেকে হলফনামা চেয়েছে আদালত।