“কালোত্তীর্ণ কন্ঠে এস্ִ ডি বর্মণ”
দিনের স্মরণে সারস্বত সাধনা
আজ শ্রদ্ধা স্মরণে কুমিল্লা চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবার, কথা সুরে সারস্বত সাধনায় রাহুল দেববর্মণ। মা সেই রাজবাংশের সন্তান। তাই প্রথাসর্বস্ব জমিদারী সমাজের প্রথা যে থাকবে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই প্রথা মিলিয়ে সমাজের আলাপ, কথায় বলে –
“শোন গো দক্ষিণ হাওয়া, প্রেম করেছি আমি “, এ প্রেম সারস্বত সাধনার প্রেম।
জমিদার সমাজের প্রথা সর্বস্ব আবেগ যেমন থাকবে তেমন সমাজ ছেড়ে কি প্রথা হয়, তাই তো সেখানে বহু বিবাহ ছিলো। তবে তিনি তৎকালীণ ভারত বর্ষের ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক বাহাদুরের সৎভাই মহারাজ নবদ্বীপ কুমার দেব বর্মন বাহাদুরের।আর এই কুমার দেব বর্মনের পুত্র হলেন
শচীন দেব বর্মন।
পিতা ধ্রুপদী শিক্ষক ও সেতারবাদক। তাঁর সঙ্গীত শিক্ষা চলে উস্তাদ বাদল খান এবং বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে।তারপরেই তাঁর সতীর্থ হয়ে উঠেন,
সুরসাগর হিমাংশু দত্ত,
অজয় ভট্টাচার্য,
মোহিনী চৌধুরী,
সমরেন্দ্র পাল,
কাজী নজরুল ইসলাম,
শৈলবালা দাম,
ধ্রুপদীয়া সৌরেন দাশ,
সুধীন দাশ প্রমুখ।
১৯৩১ সাল তাঁর ভাষায় বিরহের সুরে বলে,
পিতার মৃত্যুর পর আমি যেন অগাধ জলে পড়ে গেলাম। এই অবস্থায় আমি আগরতলা বা কুমিল্লাগিয়ে থাকলে রাজকীয় আরামে ও নিশ্চিন্তে নিজেদের বাড়িতে বাস করতে পারতাম এবং রাজ্য সরকারের কোনো উচ্চপদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম। আমার বড় ভাইরা আমাকে তাই করতে বললেন। আমার কিন্তু এ ব্যবস্থা মনঃপূত হলো না। নিজে একলা সংগ্রাম করে, নিজে উপার্জন করে সঙ্গীত সাধনায় জীবন কাটিয়ে দেব। মনের মধ্যে একমাত্র এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কলকাতার ত্রিপুরা প্রাসাদ ছেড়ে ভাড়া করা সামান্য একখানা ঘরে আমার আস্তানা বাঁধলাম।”
এতো প্রতিকূলতা তাঁর জীবনে তবু চলতে হবে আঙ্গিকে। আর সেখানেই,
বিরহ বড় ভাল লাগে,
সুবল রে বল বল,
বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে,
কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া…
এই প্রাপ্তি মানুষের মুখে ফিরে প্রতিধ্বনি আলাপে আবেদনে একাকার। সেখানে সাধনতত্ত্ব যে আমাদের ঋদ্ধ করবে না সেটা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। আর তাই গেয়ে ওঠে মন,
নিশিথে যাইয়ো ফুলবনে’ দেহ ও সাধনতত্ত্বে মন এক হয়ে ওঠে। একালা নয় জীবনে আপন ঘরণী সঙ্গী মীরা দেববর্মণ অন্যতম সার্থক গীতিকার ছিলেন।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে রাজগী নামক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার সঙ্গীত পরিচালনা জীবনের শুরু আর জীবনের মোড় নিজের আঙ্গিকে ফিরতে থাকে নিত্যদিন। আর উল্লেখযোগ্য গানের তালিকায় –
যদি দখিনা পবন (রাগপ্রধান)প্রেমের সমাধি তীরে (কাব্যগীতি)নিশীথে যাইও ফুলবনে (পল্লিগীতি)
বধুঁগো এই মধুমাস (পল্লিগীতি)
ওরে সুজন নাইয়া (পল্লিগীতি)
সাধনা তাঁর বৃথা নয়, তাই সে সাধনে সাফল্য হয় অবিরত। তাই হয়ত, জীবন তাঁকে এনে দেয় –
১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সঙ্গীতে নাটক একাডেমি এবং এশিয়ান ফিল্ম সোসাইটি লন্ডন থেকে সম্মাননা লাভ করেন।
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার হতে পদ্মশ্রীখেতাব লাভ করেন।
এইভাবে যিনি রাজপ্রাসাদ ছেড়ে সাধনার সম্পূর্ণতা পেতে সামান্য ঘরে আস্তানা নিয়েছিলেন, সেই সারস্বত সাধনা সম্মানে আজকের কলমে দিনের সার্থকতা।