এক সময় গ্রামেগঞ্জে অবাধে বিচরণ করে বেড়াত শকুন। তবে গত দু’দশকের মধ্যে ভারতে শকুনের সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। আর হোয়াইট ব্যাকড, স্লেন্ডার বিলড, লং বিলড প্রজাতির শকুন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুনও কমে গিয়েছে। এই অবস্থায় সঙ্কটাপূর্ণ এই পাখিদের সংরক্ষণের উপর জোর দিয়েছে বন দফতর থেকে শুরু করে পশুপ্রেমীরা। সেরকমই অসুস্থ হয়ে পড়া ১৫ টি শকুনকে সুস্থ করে প্রকৃতিতে ফেরাল বন বিভাগ। হিমালিয়ান গ্রিফন ভালচার প্রজাতির এই শকুনগুলিকে অসম বন বিভাগ এবং বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির প্রকৃতিতে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কামরূপ জেলার রানি বেলগুড়ির সংরক্ষিত অরণ্যে শকুনদের ছাড়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সাঁতরাগাছিতে ঝিলে কমছে পরিযায়ী পাখীর সংখ্যা, বড় বিপদের ইঙ্গিত বলছেন বিশেষজ্ঞরা
জানা গিয়েছে, এই শকুনগুলি অপ্রাপ্তবয়স্ক লোহারঘাট বনাঞ্চল লাগোয়া গ্রামে খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। পরে শকুনগুলিকে উদ্ধার করে বেলগুড়ি শকুন সংরক্ষণ কেন্দ্রে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলে শকুনগুলির। অবশেষে ধীরে ধীরে শকুনগুলি সুস্থ হয়ে ওঠে। এরপর সেগুলিকে প্রকৃতির কোলে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেইমতোই শকুনগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সবকটি হিমালিয়ান শকুন সুস্থ বলে জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্পের অন্তর্গত রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের আধিকারিক সচিন রানাডে।
যদিও সুস্থ হওয়ার পরেই শকুনগুলিকে ছাড়া হয়নি। তার আগে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে প্রথমে শকুনগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপরে চিকিৎসকরা ছাড়পত্র দিলে তবে সেগুলিকে মুক্ত করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই ধরনের শকুন মূলত হিমালয়ের উচু পার্বত্য অঞ্চলে প্রজনন করে থাকে। তবে শীত পড়তেই সেগুলি তরাই অঞ্চলে নেমে আসে। আর এপ্রিল হলেই গরমে আবার সেগুলি পাহাড়ে ফিরে যায়।
শকুনগুলি কেন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তাই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এ বিষয়ে আধিকারিকরা জানিয়েছেন, লোহারঘাট এলাকায় একটি পথ কুকুরকে মেরে ফেলা হয়েছিল। খাবারের টানে শকুনগুলি সেখানে উড়ে যায়। এরপর মৃ্যু কুকুর খাওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে কুকুরকে মেশানো হয়েছিল বলে অনুমান রানাডে সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের। তবে শুধু বিষই নয়, শকুনের প্রজাতি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গবাদি পশুর দেহে ব্যথা উপশমের ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করার ফলেও।
বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, এই ওষুধ থাকা মৃত পশুর মাংস খাওয়ার ফলে শকুনের শরীরে বিষক্রিয়া দেখা দেয়। তারফলে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তারপর থেকে এই ওষুধ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে লুকিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রসঙ্গত, শকুনকে বাঁচাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শকুন প্রজনন কেন্দ্র করে তাদের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।