বিশ্ববাসী অ্যানাবেলকে সিনেমায় দেখেছিল। হয়তো ভয় এর চোটে হাত দিয়ে মুখ ঢাকা দিয়েও আঙুলের ফাঁক দিয়ে আজ সন্ধ্যেতে আবার দেখবে। অ্যানাবেল না হউক, কঞ্জিউরিং সিনেমাটা আছে নিশ্চয়ই। সেই কঞ্জিউরিং সিনেমার শুরুতেই প্রথমে একটি পুতুল দেখানো হয় যেটার উপর ভিত্তি করে সিনেমার গোড়াপত্তন, তেনার নাম অ্যানাবেল। এই পুতুল অ্যানাবেলকে ঘিরে রয়েছে কিছু সত্যিকারের ইতিহাস। তাহলে আসুন আজ জেনে নেই সেই ইতিহাসটি।
আমেরিকার কোন এক শহরে সত্তর দশকে অ্যাঞ্জি এবং ডোনা নামের দু’জন নার্সিং ইন্সটিউটের ছাত্রী একসাথে একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকত। ডোনা তার ২৮তম জন্মদিনে তার মায়ের কাছ থেকে পুতুল জন্মদিনের উপহার হিসেবে পেয়েছিল। পুতুলটা দেখতে এত কিউট ছিল যে, ডোনা সেই পুতুলটাকে সবসময় তার বিছানার পাশে রাখত। কিন্তু সে কখনও ভাবেনি যে তার মার দেওয়া এই পুতুল একসময় তাদের দুশ্চিন্তার কারণ হবে…
একদিন ডোনা আর অ্যাঞ্জি বাড়িতে ফিরে এসে দেখে যে, ডোনার পুতুলটি অন্য একটি জায়গায় পরে আছে। প্রথমে বুঝতে পারেনি কিন্তু যত দিন যেতে লাগল পুতুলের স্থান পরিবর্তনের ঘটনা তত ভয়াবহ হতে থাকে। এমনকি তারা একদিন এটাও দেখতে পায় যে, সেই পুতুলটি তাদের বিছানায় পরে আছে কিন্তু তাদের স্পস্ট মনে আছে যে তারা সেটাকে তাদের শেলফে রেখে গিয়েছিল। ল্যূ নামের তাদের এক ছেলে বন্ধুর কাছে সেই পুতুলটি সন্দেহজনক মনে হতে লাগল। তার ধারণা, যা ঘটছে তার পেছনে এই অশুভ পুতুলের হাত রয়েছে। সেই জন্যে সে ডোনাকে বলেছিল যে পুতুলটাকে যেন ফেলে দেয়। আধুনিক সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা ডোনার কাছে এসব অশুভ ভূত প্রেত শুধুই কুসংস্কার মনে হতে লাগল। সেই জন্যে সে ল্যু এর কথায় কোন পাত্তা দিচ্ছিল না। কিন্তু একদিন যখন ডোনা তার সেই পুতুলটাকে রক্ত মাখা অবস্থায় তার বিছানায় শোয়ে থাকতে দেখে, এরপর আর এসব সে সহ্য করতে না পেরে দ্রুত করে এক ওঝাকে ডেকে আনে।
ওঝাকে ডেকে আনার পর ওঝা তার আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমে জানতে পারল যে, ডোনা আর অ্যাঞ্জি যে বাড়িতে থাকে সে বাড়ির আগে একটি বড় ময়দান ছিল আর সেই ময়দানে অ্যানাবেল হিগেন নামের এক সাত বছর বয়সী মেয়েকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই বাচ্চা অ্যানাবেলের আত্মার নাকি ডোনাকে খুব পছন্দ হয়েছে এবং সে এই পুতুলের উপর ভর করে তাদের সাথে থাকতে চায়। সেই আত্মা তাকে এটাও জানায় যে, সে তাদের কোন ক্ষতি করবে না, শুধুমাত্র সে তাদের সাথে থাকতে চায়। দয়ালু ও নরম মনের ডোনা এ কথা শুনার পর অ্যানাবেলের আত্মার প্রতি তার সহানুভূতি জন্মায়। সে সেই আত্মাটিকে তাদের সাথে থাকতে দেয়। কিন্তু এইটা যে তাদের সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাঁড়াবে, তা তারা কখনও ভাবেনি।
অন্যদিকে সেই ছেলে বন্ধু ল্যু একদিন স্বপ্নে দেখতে পায় যে, সেই পুতুলটি তার পায়ের কাছে বসে আছে। তার মনে হয় তার পা যেন অবশ হয়ে আছে। আর সেই অবশ পা বেয়ে অভিশপ্ত পুতুলটি তার বুকের উপড়ে উঠে এবং তার বুকে, মুখে আর মাথায় আঁচড় দিতে থাকে। এই দুঃস্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ভাবতে থাকে, নিশ্চয়ই মেয়েরা আহত হয়েছে। যদিও সেই ঘটনা সেখানে থেমে থাকেনি। একদিন যখন ল্যু আর অ্যাঞ্জি বেড়াতে যাচ্ছিল, তখন তারা ডোনার রুম থেকে কিছু খচখচ আওয়াজ শুনতে পায়। সেই শব্দ শুনে ল্যু ডোনার রুমের দরজা খুলে দেখে যে, রুমের সবকিছু ঠিক আছে, শুধুমাত্র সেই পুতুলটি ঠিক নেই। পুতুলটিকে সে বিছানার এক কোনায় পড়ে থাকতে দেখে। সে যখন পুতুলটির দিকে এগিয়ে যায়, তখন হঠাৎ তার নাকে কিসের যেন পোড়া গন্ধ লাগে। সে এই পোড়া গন্ধের উৎস খোজার চেষ্টা করে কিন্তু এর মধ্যে সে হঠাৎ তার বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতে শুরু করে। তার বুকের দিকে তাকাতেই দেখে, তার বুকের মাঝে নখের আঁচড়। ঠিক যেন কেউ নখ দিয়ে আঁচড় এঁকে তার উপর আগুনের ছ্যাঁকা দিয়ে রেখেছে । তার বুঝতে দেরী হয়নি যে এসব কিছু এই অভিশপ্ত পুতুলেরই কারসাজি।
তার এই আঁচড় এত দ্রুততার সাথে মুছতে শুরু করল যে, দুই দিনের ভেতর তা পুরোপুরি মুছে গেল। এমন পরিস্থিতিতে তারা বুঝতে পারল যে, অনেক বিপদজ্জনক কিছুর একটার সাথে জড়িয়ে গেছে তারা। তাদের অনেক বড় কারও সাহায্য দরকার। তারা তখন শরনাপন্ন হল তখনকার বিখ্যাত এক্সরসিজম স্পেশালিষ্টের কাছে, যাদের নাম এ্যাড এবং ল্যরেন ওয়ারেন। ল্যরেন দম্পতি পরে জানতে পারলেন যে, পুতুলটি আসলে অভিশপ্ত ছিল না। পুতুলটি শুধু আত্মার একটি মাধ্যম ছিল মাত্র। আর সেই আত্মার মূল লক্ষ্য ছিল ডোনার, যেটাকে ভর করে সে আবার মানবত্ব লাভ করবে।
পরবর্তীতে একজন পাদ্রীকে দিয়ে তাদের অ্যাপার্টমেন্টকে এক্সরসিজমের মাধ্যমে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ওয়ারেন সেই পুতুলটিকে তাদের সাথে নিয়ে যান। পুতুলটিকে তাদের সাথে নিয়ে যেতে রাস্তায় ওয়ারেনদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এরপর সেই পুতুলটি ওয়ারেন এর বাড়িতে আবার তার আগের কার্যকলাপ দেখাতে শুরু করে। এক রুম থেকে অন্য রুমে বিচরণ করতে থাকে পুতুলটি। এ্যাড এই অবস্থার স্বাভবিক করার এক ক্যাথলিক বিশপ ডাকেন পুতুলটিকে এক্সোরসিজমের মাধ্যমে জন্য বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই পাদ্রি পুতুলটির বিদ্রুপ করায় সেই পাদ্রিকে এর ফল ভোগ করতে হল। সেখান থেকে পাদ্রি বাড়িতে ফেরার সময় তার কারের ব্রেইক ফেইল হয় এবং এক দু্র্ঘটনায় তিনি মারা যান। পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় লরেন সেই পুতুলটিকে পবিত্র জল দিয়ে ধুয়ে একটি সুরক্ষিত শোকেইসে তালাবদ্ধ করে রাখেন। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্তও সেই পুতুলটি লরেনদের সংগ্রহশালায় একইরকম ভাবে আবদ্ধ আছে। সেই পুতুলটিকে দেখলে
এখনও এমন মনে হয় কিছু একটা এখনও তার মাঝে জীবিত আছে। সেই জিনিসটা অপেক্ষায় আছে, কখন সে এই খাঁচা ছেড়ে বের হবে, আর কখন সে নতুন কারও শরীর খুজে বের করবে তার অমরত্ব লাভের জন্য।