আমাদের বাঙালিদের কাছে এখন নীলকমল, লালকমলের তুলনায় হ্যারি পটারের ক্রেজটা অনেক বেশি। হ্যারি পটার বিপদ থেকে বাঁচতে গায়ে জড়িয়ে নিত জাদুর আলখাল্লা আর নিমেষেই উধাও হয়ে যেত লোকচক্ষুর ভীড় থেকে। হ্যারি পটার পড়ে বা দেখে যাদের মনে একবারের জন্যই মনে হয়েছিল যদি ঐ আলখাল্লাটা পেতাম…তাদের অপেক্ষার দিন শেষ হতে চলেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন সেই পোশাক বাস্তব দুনিয়ায় খুব শীঘ্রই আসছে। ফিকশন ও জাদুর মায়াজাল কাটিয়ে ইনভিজিবিলিটি ক্লোক বা অদৃশ্য আলখাল্লা আসছে।
এই অদৃশ্য আলখাল্লা নিয়ে যাবতীয় পরীক্ষার পরে গবেষকরা জানিয়েছেন, অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও পাতলা এই আলখাল্লাটি তৈরি করা হয়েছে আণুবীক্ষণিক আয়তাকার স্বর্ণের ব্লক ব্যবহার করে। পোশাকটি অনেকটা মানবদেহের ত্বকের পাতলা আবরণের মতো। প্রায় ৮০ ন্যানোমিটার পুরু। এক ন্যানোমিটার = এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ। এই বস্তুটি এমনই যা দিয়ে অন্য কিছু ঢেকে দিলে তা বোঝাই যাবে না কারণ এ আবরণটি আলোর তরঙ্গকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে দেয়। তারফলে তীব্র আলোতেও আলখাল্লার নিচের বস্তু অদৃশ্য হয়ে যায় সাধারণ মানুষের চোখে।
নিজেদের চমকপ্রদ এই আবিস্কার নিয়ে বিজ্ঞানীরা বেশ আশা প্রকাশ করেছেন। যদিও এখনও অনেক গবেষণা প্রয়োজন। তবে এই পোশাক ভবিষ্যতের জন্য সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভূমিকা রাখবে পারবে বলেই তারা মনে করেন। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির বস্তুবিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক জিয়াং ঝাং বলেছেন, এই আলখাল্লা বাস্তবের বাজারমুখী করে গড়ে তুলতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
সূত্র অনুসারে সায়েন্স জার্নালে পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক অধ্যাপক ঝিংঝি লিং বলেন, মাইক্রোস্কোপিক এই আলখাল্লা ভবিষ্যতে সামরিক ক্ষেত্রে মূলত বড় কোনও গাড়ি, বিমান ব্যবহারে করা যাবে। এমনকী যুদ্ধের সময় সৈন্যদের আড়াল করবে। এছাড়াও তিনি যোগ করেন এই অদৃশ্য আলখাল্লা বাজারে এলে রূপ ও ফ্যাশন দুনিয়াতেও নতুন ট্রেন্ড আসবে। পরবর্তীকালে অদৃশ্য মাস্ক তৈরির মাধ্যমে ত্বকের ব্রণ ও বলিরেখা ঢেকে দেওয়া যাবে। আবার ফ্যাশন শোতে শরীরের কোনও একটা অংশ অদৃশ্য করে ব়্যাম্প মাতাতে পারবেন মডেলরা।