Home অফ-বিট “ভাষা দিবস ” ~ রক্তের চাদরে লেখা অমর ২১ শে…

“ভাষা দিবস ” ~ রক্তের চাদরে লেখা অমর ২১ শে…

” হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে, ঘোরে হাতে হাতে,
মিছিলের পতাকা হয় বারবার রক্তাপ্লুত শার্ট “~ শামসুর রহমান…
 
ভাষা মনের অব্যক্ত কথার বাহক। কিন্তু এই ভাষা যদি মাতৃভাষা হয় তবে তো জীবন সাবলীল হয়ে যায়। মায়ের মুখের কথা যা সময়ের সাথে সদ্যজাতকের কান আর মনের মরমী কথা, তার প্রেমটাই তো আলাদা। এ যেন সেই রাধার কথা ” কানের ভিতর দিয়ে মরমে পশিল গো, আকুল করিল মোর প্রাণ”। তাই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বাংলা ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার গড়তে তৎপর হলো ১৯৪৭ সাল। আসুন ইতিহাসের সাক্ষীগোপাল হয়ে আজ-কাল ধরে এগোতে থাকি পরিণতির দিকে।
Image result for ভাষা বিদস -অমর ২১ শে
সময়টা নভেম্বর মাস, পাকিস্থানের এডুকেশনাল কনফারেন্স “চলছে, উদ্যোগী হলেন সেই সময়ের শিক্ষামন্ত্রী “ফজিজুল রহমান “, আগত সকল প্রতিনিধিরা বলছেন উর্দূ একমাত্র রাষ্টীয় ভাষা হবে। প্রতিষ্ঠা করতে বিরোধিতা করেন, আর বাংলাকে সম অধিকার দিতে দাবী জানান, আর ৭ ই নভেম্বর সেই উদ্যোগকে হাতে নিয়েই সংসদে দাবি উত্থাপন। আর এখানেই শুরু হলো শত শত নাগরিকের স্বাক্ষর নিয়ে স্মারকপত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে পেশ। বিশ্ববিদ্যালয় তখন সমাবেশ আর মিছিলের ডাকে সামিল। দাবি বাংলাভাষার স্বীকৃতি।

Image result for ভাষা বিদস -অমর ২১ শে

১৯৪৮ সাল, পূর্ব পাকিস্থানে “স্টুডেন্টস লিগ ” এর জন্ম। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তখন শেখ মুজিবর রহমান। এরা অ্যাণ্টি বেঙ্গলী পলিসির বিপক্ষে সোচ্চার প্রতিবাদী বৃন্দ। ধর্মের আড়ালে চাপান্তরের প্রতিবাদে বিবিধ ক্যাম্প করা হয়েছিল। ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরেই প্রথম বিল পেশ করা হলো। কিন্তু বাধ সাধেন লিয়াকৎ আলি খান ও খাজা নাজিমুদ্দিন। বার বার উত্থাপনের পরেও বিধি বাম হয়ে ধরা দেয়। এরপর ১১ শে মার্চ ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়। আর এই দিনই সমাবেশ শেষ হওয়া মিছিলে পুলিশি হামলা আর গ্রেফতার হন শামসুল হক, কাজী গোলাম, মাহবুব, শেখ মুজিবর রহমান, শওকত আলী, অলি আহাদ।
Image result for ভাষা বিদস -অমর ২১ শে

গ্রেফতার কিন্তু বৃথা নয়, কারণ খাজা নাজিমুদ্দিন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্থান দিতে একটি অঙ্গীকার নামায় সই করলেও, জিন্নাহ তা বাতিল করেন। জিন্নার মতে “উর্দু “ই পাকিস্থানের একমাত্র ভাষা। তাঁর ভাষায় ” The state language therefore, must obviously be Urdu, a language that has been nurtured by a hundred millions Muslims of this sub – continent,…………. nearest to the language used in other Islamic countries “.
Image result for ভাষা বিদস -অমর ২১ শে
এই ব্যক্তিতা প্রতিবাদের মিছিল বয়ে আনে। তবে জিন্নাহ ঢাকা ত্যাগের পর বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলন আরো বিস্তৃত হয়। কিন্তু জিন্নার মৃত্যুর পর নাজিমুদ্দিন জিন্নহের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। ১৯৪৯, ৯ ই মার্চ মৌলানা আকরাম খানকে চেয়ারম্যান করে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ “Dhaka University State Language Movement Committee “গঠিত হয়। ১৯৫০ সালের ১৪ ই নভেম্বর উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯৫১ সালের ১১ মার্চ The Dhaka University State Language Movement “বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণার পাশাপাশি একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয়। ১৯৫১ সালের ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন ছিল The Dhaka University State Language Movement Committee, সমাবেশে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব, অলি আহাদ, গাজীওল হক প্রমুখ।
Image result for ভাষা বিদস -অমর ২১ শে
১৯৫২ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, পাকিস্থান সরকার ২১ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে পাশাপাশি ১৪৪ নং ধারা জারি করে সকল সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিলে সমাবেশ ও ১৪৪ ধারা ভাঙার অপরাধে গুলি বর্ষণ। মৃত্যুর মুখে লুটিয়ে পড়ে আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, রফিকউদ্দিন আহমেদ। ভাষার মুখেতেই মিলিয়ে যায়, আর হিংস্রতার তালে তাল রেখে অহিউল্লাহ নামে এক ৯ বছরের শিশু মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। আর প্রতিবাদের রাশিচক্র মিছিলের মুখে এক হয় হাজারো মানুষ। বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ” দি মর্নিং নিউজ “, আগুণের লেলিহান শিখা হুতাশনের মতো গ্রাস করে। তবুও থামেনি ছাত্র সমাজ, নুরুল আমিন তড়িঘড়ি করে স্বীকৃতির প্রস্তাব আনেন আর তা পাশ হয়ে যায়। ১৯৫৫ সালের ৩ রা ডিসেম্বর ভাষা আন্দোলনের দাবী বাংলা একাডেমী যাত্রা শুরু করে।
এবার সেই ব্রহ্মমূহুর্ত এসে উপস্থিত, ১৯৫৬ সালের ১৬ ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্থানের গণপরিষদে বাংলাকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, আর সংবিধানের অন্তর্গত করার জন্যই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়। ১৯৫৬ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে বাংলা আর উর্দু পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৫৭ সালের ৩ রা মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে পাকিস্থানের সংবিধানে কার্যকারী করা হয়। ১৯৫২ সালের পর থেকেই বাংলা ভাষাকে রাষ্টীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়ার লক্ষে, শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই জাতীয় দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়।
Image result for ভাষা বিদস -অমর ২১ শে

এই ২১ শে ফেব্রুয়ারি হলো শহীদ রক্তের ঋণ। ঘন ঘন পথ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আলাপ। বারে বারে আর্তি আর নিবেদনের সাথে অপেক্ষা প্রতিষ্ঠার। রক্তে ভেজা তুলির আঁকড়ে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি। এই স্বাধীনতা হলো বীজ বপন আর আবাদযোগ্য ভূমি। রোপনের সাথে স্বাধীনতা বীজ আর ফসলের অঙ্গীকার – ২১ শের ভোর।

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here