কাফের সামনে গৃহবধূর খুন হওয়ার ঘটনা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার ৬ মাস পরও শান্তি ছিল না প্রাক্তন স্বামী তথা খুনের মূল অভিযুক্ত ইরতিখ শাকিবের। গত সোমবার রাতে কড়েয়া থানা এলাকার একটি কাফের সামনে খুন হন শাকিবের প্রাক্তন স্ত্রী আরিবা ইকবাল। খুন করেন স্বয়ং ইরতিখ শাকিব। বিবাহবিচ্ছেদের পর তাঁরা পৃথক থাকতেন। কিন্তু তার পরও শাকিব পিছু ছাড়েনি আরিবার। প্রাক্তন স্ত্রীর গতিবিধির উপর নজর রাখত শাকিব। আর পূর্ব পরিকল্পনা করেই শাকিব সোমবার কাফেতে ঢুকে আরিবাকে তাঁর বন্ধুদের সামনেই চপার দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। আরিবা পালাতে গেলেও ছুটে গিয়ে আবার তাঁকে কোপায় শাকিব বলে অভিযোগ।
শাকিব এই কাজ করেছিল অন্য একটি কারণে। শাকিব ভেবেছিল বিবাহবিচ্ছেদের পর আরিবা আর্থিকভাবে ভেঙে পড়বে। সামাজিকভাবে সমস্যার জায়গায় পৌঁছে যাবে। কিন্তু শাকিবের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। বরং বিবাহবিচ্ছেদের পর শাকিবের থেকে ভাল থাকতে শুরু করেছিল আরিবা। সামাজিক–আর্থিক কোনও সমস্যাই হয়নি। বরং আরিবা আরও একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তাতে আরিবা ভালই ছিল। এটাই সহ্য করতে না পেরে পরিকল্পনা করে আরিবাকে খুন করে শাকিব। পুলিশ সূত্রে এই খবরই মিলেছে। এমনকী আরিবাকে খুন করে কোনও অনুশোচনা নেই শাকিবের। আর এক যুবকের সঙ্গে আরিবার সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরেই এই খুন সে করেছে বলে পুলিশের জেরার দাবি করেছে শাকিব।
আরও পড়ুন: অযোগ্য শিক্ষকদের সংখ্যা বদলের তথ্য দিল এসএসসি, সুপ্রিম কোর্ট তলব করল প্রমাণ
শাকিব নজর রাখতে গিয়ে দেখেছিল, আরিবা বিবাহবিচ্ছেদের পর ভালই আছে। অথচ শাকিব নিজেই অতটা ভাল নেই। আরও গভীরে গিয়ে জানতে পারে আরিবা এক নতুন যুবকের সঙ্গে প্রেম করছে। তাই আর্থিক এবং সামাজিকভাবে ভালই আছে। তখনই এক ছক কষে শাকিব। আর জোগাড় করে ফেলে মাংস কাটার চপার। এরপর সোমবার বৃষ্টির রাতে কড়েয়া থানা এলাকার নাসিরুদ্দিন রোডে অন্ধকারে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে শাকিব। কাফেতে বসে কফি মগে তুফান তুলে হাসতে দেখতে পায় আরিবাকে। আর তা সহ্য করতে না পেরে সেখানে প্রবেশ করে এই খুনের ঘটনা ঘটায় সে। রক্তাক্ত আরিবাকে এসএসকেএমে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অভিযুক্ত ইরতিখ শাকিবকে গ্রেফতার করে কড়েয়া থানার পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ২০১৬ সাল থেকে অভিযুক্তের সঙ্গে আলাপ আরিবা ইকবালের। ২০১৮ সালে শাকিবের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার মামলা দায়ের করে আরিবার পরিবার। তখন আরিবা নাবালিকা ছিল। পুলিশ মেয়ের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শাকিবকে গ্রেফতার করে। তার পরে একদিন জামিন পায় শাকিব। ২০১৯ সালে শাকিব আর আরিবার বিয়ে হয়। শাকিবের সঙ্গে বিয়ের পর প্রথমে ভালই কাটছিল। কিন্তু শাকিব দোকানে কাজ করে আরিবার ভরণপোষণ করতে পারছিল না। সেখান থেকেই শুরু হয় সম্পর্কের অবনতি। এখান থেকেই দু’জনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। অন্য সম্পর্কে আরিবা জড়িয়ে পড়েছে জানতে পেরেই সোমবার তাঁর উপরে চড়াও হয়ে খুন করে শাকিব।