সরকারি নথিতে রাস্তাটি পূর্ত দফতরের। ওই রাস্তাটি বিশ্বভারতীর বলে দাবি করে সেটি ফেরত চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ওই রাস্তাটি উপাসনা গৃহের সামনে দিয়ে গিয়েছে। যদিও বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর ওই চিঠির জবাব দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ সম্পর্ক ভাল নয়। তাছাড়া এই রাস্তা নিয়ে রাজ্যের পক্ষ থেকে কোনওরকম নির্দেশিকা আসেনি। সুতরাং এখনও রাজ্য সরকারের আয়ত্তে ওই রাস্তা। এই আবহে ওই রাস্তার উপর ‘দাদাগিরি’ করার অভিযোগ উঠল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে। আর তা নিয়ে শনিবার জোর বিবাদ বাঁধল কবিগুরুর জায়গায়।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? শনিবার দুপুরে পর্যটকদের নিয়ে একটি টোটো ওই রাস্তায় ঢুকেছিল। তাঁদের গন্তব্য ছিল রবীন্দ্র ভবন। অভিযোগ, উপাসনা গৃহের সামনের ওই রাস্তায় টোটো ঢুকতেই সেটিকে আটকে দেন নিরাপত্তারক্ষীরা। টোটো চালক আটকে দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তখন নিরাপত্তারক্ষীরা বলেন, ‘এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ।’ সরকারি রাস্তায় টোটো ঢুকতে দেওয়া নিয়ে দু’পক্ষের কথা কাটাকাটিতে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। অবশেষে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। আর তাঁরাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আজ, রবিবার সকালেও এমন একটা ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্রের খবর।
তারপর ঠিক কী ঘটল? এই ঘটনা এখন ওখানকার সব টোটো চালক জানতে পেরে গিয়েছেন। তাই তাঁরা আন্দোলন গড়ে তোলার কথা ভাবতে শুরু করেছেন। দুর্গাপুজোর আগে তেমন কিছু ঘটলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হবে। ২০১৭ সালে উপাসনা গৃহের সামনের সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওই রাস্তায় স্বেচ্ছাচারিতা চালানোর অভিযোগ ওঠে। তখন ২০২১ সালে আবার সেই রাস্তা নিজেদের দখলে নেয় রাজ্য সরকার। সেপ্টেম্বর মাসে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকেই ওই রাস্তা নিজেদের আয়ত্তে আনতে জোর চেষ্টা করছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: কালীঘাটের বাড়ি থেকে হাজার পুজোর উদ্বোধন, ভার্চুয়াল মাধ্যমেই দেবেন বার্তা
আর কী জানা যাচ্ছে? এই রাস্তা আছে পূর্ত দফতরের অধীনে। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সেটি ফিরে পেতে মুখ্যমন্ত্রীকে দু’বার চিঠি লিখেছেন। কিন্তু অমর্ত্য সেনের সঙ্গে জমি জটিলতার সময় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে দাঁড়ানোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন উপাচার্য। আর তখনই থেকেই সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তারপরই শনিবার দেখা গেল, নিরাপত্তারক্ষীরা পর্যটকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করল। এই ঘটনার কথা এখন রাজ্য প্রশাসনের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। ওই রাস্তায় দাদাগিরি দেখাচ্ছে বিশ্বভারতী। এই ঘটনার পর শান্তিনিকেতনের টোটো চালকরা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে খবর।