পর্যটন প্রিয় বাঙালির কাছে মধুপুরের একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের দেওঘর জেলায় অবস্থিত মধুপুর শহর। সেখানেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলিডে হোম রয়েছে। কিন্তু, সেই হলিডে হোমটি জবরদখল করে বেআইনি কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই হলিডে হোম দখল হওয়ার অভিযোগ অনেক আগেই উঠেছিল। কিন্তু, তারপরেও কোনও পদক্ষেপ না করায় এবার হলিডে হোমের আশেপাশের বাসিন্দারা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অভিযোগ জানালেন।
আরও পড়ুন: দেশে সার্বিকভাবে ষষ্ঠ সেরা, রাজ্যের অনুদানপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রথম CU, গর্বিত মমতা
ওই হলিডে হোমের পাশে রয়েছে অমরদীপ পাণ্ডে নামে এক ব্যক্তির বাড়ি। জানা গিয়েছে, গত সপ্তাহে তিনি তাঁর এক আত্মীয়কে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আসেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা হলিডে হোম দখল এবং বেআইনি কার্যকলাপ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। অমরদীপের অভিযোগ, তিনি আগে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনও সুরাহা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তিনি সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, তৎকালীন রাজ্যপাল হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় পঞ্চাশের দশকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের জন্য হলিডে হোমটি দান করেছিলেন। পরে ১৯৯০ সালে এই হলিডে হোম খুলে দেওয়া হয়। তবে এরই মধ্যে ২০১৮ সালে হলিডে হোম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তের পরেই ওই হোলিডে হোমের দায়িত্বে থাকা কর্মীকে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপরেই ঘটে বিপত্তি। মধুপুর থেকে কয়েকজন বাসিন্দা দাবি করেন ওই সম্পত্তি তাঁদের। তা নিয়ে আদালতে মামলাও চলে। আর এবার ওই হলিডে হোম জবরদখল হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, মধুপুরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন প্রতিনিধিরা। কিন্তু, তারপরেও আর কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সংগঠনের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী পরিষদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই হলিডে হোম বিক্রির চক্রান্ত করা হচ্ছে। কিন্তু, তা হতে দেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এই অভিযোগ আসছে। এই ঘটনায় তারাও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।
উল্লেখ্য, মধুপুরের দু’টি পাথুরে নদী রয়েছে। কথিত আছে, যার জল খেলে পেটের রোগ দূর হয়ে যায়। এখানে এখনও যোগাযোগের বড় মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি। বৈদ্যনাথ ধাম ও নওলখা মন্দিরে রয়েছে উত্তম স্থাপত্যের নিদর্শন, জৈনদের শ্রেষ্ঠ তীর্থক্ষেত্র পরেশনাথ পাহাড়। এখানকার উৎকৃষ্ট মানের লোহার হাতা, খুন্তি, কড়াই পর্যটকরা কিনে নিয়ে যান। এছাড়াও, দেওঘরের দুগ্ধজাত মিষ্টির মধ্যে পেড়া, রাবড়ি, ছানার মুড়কি, কাঁচাগোল্লার জনপ্রিয়তা রয়েছে। মধুপুরের আশপাশের মাঠ, ঘাট, পাহাড় দেখতে সেখানে ভিড় করেন পর্যটকরা। ফলে সবদিক থেকেই মধুপুর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।