মধুর স্বাদ নেননি এমন মানুষ পাওয়া ভার। দুধের সঙ্গে মিশিয়ে, রুটিতে, স্যালাডে আমরা অনেকেই নানাভাবে মধু খেয়ে থাকি। নিয়মিত খান বা না খান আপনার ঘরে মধু আছেই আছে। কি, ঠিক বলেছি তো! যেমন স্বাদ, তেমনই তার পুষ্টিগুন। সেই প্রাচীন কাল থেকেই আয়ুর্বেদে মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে।এখন তো মধু ছাড়া রূপচর্চার কথা ভাবাই যায় না।শীতে প্রতিদিন এক চামচ মধু আপনাকে সুস্হ সবল রাখতে খুবই কার্যকরী। কিন্তু জানেন কি, এই মধু সংগ্রহ করতে কত ফুলে বসতে হয় মৌমাছিদের? এক কেজি মধু সংগ্রহ করতে মৌমাছিদের কতটা পথ ঘুরতে হয় জানলে আপনার চোখ কপালে উঠবে। একটি মৌমাছি সারা জীবনে কতটা মধু সংগ্রহ করে জানেন?জানেন, গোপনে কি কি চলে মৌচাকের ভেতর!চলুন সেই সব অবাক করা সব কিছু জেনে নেওয়া যাক এই প্রতিবেদনে।
মধু একটি উচ্চ ওষধিগুণ সম্পন্ন ভেষজ তরল। এতে রয়েছে নানা রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের ক্ষমতা।একথা আপনাদের সকলেরই জানা। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, এই মধু সংগ্রহের জন্য কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়’ মৌমাছিদের? একটা ফুলে কতটুকু মধু থাকে তা তো দেখেছেন। তাহলেই ভাবুন, এক চামচ মধুর জন্য কত ফুলে ঢুঁ মারতে হয় তাদের। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত একটানা সেই কাজ করে চলেছে একটা মৌচাকের হাজারেরও বেশি মৌমাছি। সেই দৃশ্যটা কল্পনা করুন একবার।পতঙ্গবিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে অবাক করা নানান তথ্য। তাঁরা হিসেব কষে দেখেছেন, ১ কেজি মধু সংগ্রহ করতে এগারোশো মৌমাছিকে প্রায় ৯০ হাজার মাইল পথ ঘুরতে হয়। ঠিক শুনেছেন, নব্বই হাজার মাইল। যা চাঁদের কক্ষপথের দৈর্ঘ্যের প্রায় তিনগুণ! আরও অবাক হওয়ার বিষয় হল, ১ কেজি মধু জমা করতে প্রায় ৪০ লক্ষ ফুলের পরাগরেণু সংগ্রহ করতে হয় কর্মী মৌমাছিদের। অর্থাৎ, ৫০০ গ্রাম মধুর জন্য ২০ লক্ষ ফুলের পরাগরেণু লাগে।
সবকিছু ঠিক থাকলে একটা গোটা মরসুমে প্রায় ৫৫ কেজি মধু জমা করে কর্মী বা শ্রমিক মৌমাছিরা।
তাহলেই বুঝুন, কতটা পরিশ্রমী এরা। তবে একটি শ্রমিক বা কর্মী মৌমাছি তার সারা জীবনে মাত্র অর্ধেক চা চামচ মধু তৈরি করতে পারে। এবার আসি তাদের রাণীর কথায়। একটি মৌচাকে একটি মাত্র রাণী মৌমাছি থাকে৷ ওই চাকে আরও একাধিক স্ত্রী মৌমাছিকে ‘গোপনে’ লালন করে শ্রমিক বা কর্মী মৌমাছিরা। যদি কোনও কারণে রাণী মৌমাছির মৃত্যু হয় তাহলে নতুন রাণী চাই তো।তা সুনিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা কিন্তু সেই কাজে কেন এতো গোপনীয়তা?
আসলে একটি রাণী মৌমাছিকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে মৌচাক। কিন্তু কোনও কোনও ডিম থেকে স্ত্রী মৌমাছিরও জন্ম হয়। তবে তা পাঁচকান করা হয় না। সেটিকে কর্মী মৌমাছিরা লুকিয়ে রাখে। কারণ, রাণী মৌমাছির নজরে পড়লে ওই শিশু স্ত্রী মৌমাছির মৃত্যু নিশ্চিত! এতটাই রাগী তিনি। পরে শিশু স্ত্রী মৌমাছিটি বড় হলে তাকে লড়াই করে ওই মৌচাকের কর্তৃত্ব অর্জন করতে হয়। নয়তো আলাদা হয়ে পৃথক মৌচাক গড়ে তোলে ওই স্ত্রী মৌমাছিটি৷ রাণী মৌমাছি পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০টা পুরুষ মৌমাছির সঙ্গে মিলিত হতে পারে। একে বলা হয় “দ্য মিটিং ফ্লাইট”। যৌন মিলনের পরেই পুরুষ মৌমাছি মারা যায়৷ এই জন্যই মৌমাছির মিলনকে “দ্য ড্রামাটিক সেক্সুয়াল সুইসাইড” বলা হয়৷ একদম অন্য রকমের জীবনযাপন, তাই না?
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়