Home ব্লগবাজি শেষের পথে ~ বৈশাখী চ্যাটার্জী

শেষের পথে ~ বৈশাখী চ্যাটার্জী

শেষের পথে   ~  বৈশাখী চ্যাটার্জী

শেষের পথে

বৈশাখী চ্যাটার্জী

*********************************

দীর্ঘ দিন পর আজ শরীরটা একটু সুস্থ বোধ করছে -দীপ্তর ,আগের সপ্তাহে সমস্ত
রিপোর্ট গুলো হাতে এসেছে -বাড়ির লোকের মুখ দেখে- দীপ্তর বুঝতে একটুও অসুবিধা
হয়নি নিজের রোগটির কথা, যদিও কেও তাকে কিছু বলে না -তবুও কথা বলতে বলতে সবার
চোখে জল এসে যায় আজকাল -দীপ্ত সব বোঝে সে তার বাবা -মায়ের বড় ছেলে -একটি ছোট
বোন আছে তার -আজ কাল ভীষণ নির্লিপ্ত লাগে দীপ্তকে -স্কুল এর চাকরিটা এই সবে
মাত্র পেয়েছিল -কি আনন্দ করে মা সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে এসেছিল -জীবন ভীষণ
অনিশ্চিত মনে হয় এখন !কিন্তু ঠিক আর কতটা সময় বাকি আছে -এটা বুঝতে চায় সে
-সবাই চেষ্টা করে চলেছে তার কাছ থেকে সব কিছু গোপন করার -এই সময় কাওকে কিছু
বলতে মন চায় না আর -তবুও যেন অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে মনে হয় -বিছানা ছেড়ে
উঠে পড়ে দীপ্ত ,শ্রী এর সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয়নি -সেই স্কুল জীবনের প্রেম
-দীপ্ত জানে শ্রী এর প্রতি মুহূর্তের নিঃশ্বাসে সে কতটা জড়িয়ে- কাল যদি আর
সময় না পায় -আরও অনেক গুলো কাজ -না কোন মৃত্যু ভয় তাকে তারা করছে না -নিজেকে
ভীষণ শান্ত করে নিয়েছে এক মুহূর্তে -জামাটা পড়ে নিয়ে কি এক অজানা বোঝাপড়ায়
বেরিয়ে পড়ে সে -,
ঘরের বাইরে সমস্ত পৃথিবী সেই একই রকম -কারও তো কোন মুখ ভার নিয়ে
-কোথাও কোন মন খারপ নেই -গাছের পাতা নড়ছে -মেঘ ভাসছে -যেমন পৃথিবী তেমনি আছে
-একটি মানুষের আসন্ন মৃত্যুর কোন শোক নেই সেখানে -দীপ্ত এগিয়ে চলেছে রাস্তা
ধরে -অবাক হয়ে দেখছে-সমস্ত দোকান -পাট -বাজার -হাট -গুমটি -ফুটপাত ,সবাই
নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে- কারো কোন আফসোস নেই -কেও একটু ও দুঃখী নয় -বুকের ভিতরটা
টনটন করে ওঠে -চোখে থেকে দুফোটা জল বেরিয়ে আসে -কি ভীষণ ব্যর্থ মনে হচ্ছে -এত
বড় পৃথিবী কেন সেখান থেকে চলে যেতে হচ্ছে তাকে -কি অপরাধ ??ভাবতে ভাবতে শ্রী
এর বাড়ির সামনে এসে হাজির হয় -মনটা ভীষণ ভারী হয়ে এসেছে -শরীরটাও যেন চলতে
রাজি নয় আর -শ্রী চিরদিন দীপ্ত কে খুব বেশি করে বোঝে -ঘরে এসে বসে দীপ্ত –
মনের বাঁধন -নিজেই তো কথা দিয়েছিল কোনদিন ছেড়ে যাবেনা -আজ চলে যাবার ডাক এসে
গেছে -কি বলবে সে শ্রী কে -ক্ষমা করতে বলবে, ভুলে যেতে বলবে -শ্রী এর হাতটা
ধরে কেঁদে ফেলে দীপ্ত তার যে আজ আর কিছুই বলার নেই – আজ শ্রীও কাঁদছে -খুব
কাঁদছে ,তারপর চোখের জল মুছে নেয় -সোজা শক্ত হয়ে দাঁড়ায় -দীপ্তর মাথাটা বুকে
নিয়ে খুব আদর করে তাকে -যদিও সব কিছুর সান্তনা হয় না –
আজ প্রায় ছয়মাস হয়ে গেল লড়াই করে চলেছে দীপ্ত -জটিল কর্কট রোগ
-কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে নিচ্ছে জীবনকে -বাকি ছিল কিছু স্বপ্নের পূর্ণ হওয়া -বাকি
ছিল জীবনকে দেখা -কিন্তু সেদিন পৃথিবী জানিয়েছিল কারো জন্য পৃথিবী থেমে থাকে
না -থাকে না সময় -সব নিজের গতিতে প্রবাহিত হয়ে চলে নিজের মতই -তুমি সেখানে
নিমিত্ত -প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে চলে যেতে হয় –
শেষ নিঃশ্বাসের সঙ্গে চলছে শেষ বোঝাপড়া -নিজের আপনজনের কাছে আজ
সে কাঁদতে চায় না -সবাই কাঁদছে -সে হাসতে চায় আজ -বলতে চায় -কোন অভিযোগ নেই
জীবনের কাছে কিন্তু পারে না -আজ ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করছে -মা কে খুব জোড়ে
জড়িয়ে ধরে দীপ্ত -কিছুতেই সে যাবে না -কিন্তু অন্য দিক থেকে আর এক বিরাট টান
-সব কিছুকে ছিন্ন করে দেয় -মৃত্যুর পারাবার -সবাইকে যেতে হবে সেখানে কোন ক্ষমা
নেই যেন -চোখ দুটো বুজে যায় হাতের মুঠোয় শক্ত করে মাকে ধরে রেখেছে -জীবন থেকে
বিদায় নিচ্ছে জীবন– শেষ বার হেসে নেয় সে -এটাই তো দিয়ে যাবার ছিল এই হাসি -হা
এটাই তার শেষ কাজ সে হাসছে -শেষ -শেষ হাসি ॥

 বৈশাখী:07/06/2017

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here