ফটো-ফ্রেম
****************************
ওই যে... ওটা কার ফটো ? দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে অতিথি, রঙ ওঠা দেওয়ালে ...
দাঁড়ান একটু, বহুদিন ধূসর ফ্রেমের কাঁচটা মোছা হয়নি, বললাম শক্ত চোয়ালে,
ওটা আমার বড় ছেলে নেই এখন ।
লিউকেমিয়ায় চলে গেলো বয়স ষোল যখন,
কি অদ্ভুত বলুন তো, এই সেই দিন আমাকে বলেছে,
এখন সম্পূর্ণ সুস্থ লাগছে, ইস্কুল যেতে ভীষণ ইচ্ছা করছে ।
এক সময় ইস্কুলে না যাওয়ার জন্য জ্বরের ভান করতো,
আজ এসেছিল পূজা, দীপালী, ভিকি, সুশান্ত,
আমার ছেলের বন্ধু আন্তাকশারী খেলছিল ওরাই,
একসাথে সকলে মিলে হই হই চিৎকার করে আনন্দ যেমন হয়ই,
আমি জানি ওরা সকলে আমার ছেলেটাকে প্রচন্ড ভালোবাসে,
ছেলেটার সুরটা বারবার কেটে যাচ্ছিল ওদের সুরের পাশে ।
শেষ কেমো দিয়ে ওকে যখন বাসায় আনলাম রাখতে,
মনে হোল যেন না’ফোটা কুসুমকলি ঝরে ঋতুর সংকেতে ।
কেঁদে বলল বাবা পূজাকে ফোন করি, ধরে’না,
কেন এত অবহেলা, ক্যান্সার তো ছোঁয়াচে’না,
একটু হাঁপিয়ে বলে পূজা এখন ভিকির সাথে প্রেম করে,
বললেই পারত, লজ্জা পাচ্ছিল তাকাতে বসলো গিয়ে দূরে,
পূজা আস্তে আস্তে আমার থেকে সরে যায়,
ক্যান্সারের কথা শুনে, এটাই সাভাবিক এ’রকমই হয়,
আজকাল স্যামির সাথে কথা বলে আমার সময় কাটে,
স্যামির সাথে ফেসবুকে পরিচয় ওর পাঠানো ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টে,
ফোনে আনন্দ দেয়, ও’যে সমকামী তা চ্যাটে আমাকে জানায়,
স্যামি, শর্ত ছাড়াই ভালোবাসে আআমায়,
একজন ক্যান্সার রোগী আমার যে কিছু করার নেই,
সত্যই আমি ভাবি, ছেলেটার কি ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নেই?
আমি নিজেই চমকে উঠি, কি নিস্পৃহ, কেমন শীতল,
নিজের ঘায়ের ভিতর পাখাটা ঝাপটায় চোখটা ছলছল ।
ছেলেটা সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছিল ডাক্তারের হোক জয়,
শেষে ক্যান্সারের হোল জয়, যাবার আগে ডাইরিটা স্যামিকে দিতে বলে যায় ।
একটা কথা, স্যামি কিছুদিন ফোনে ছেলেটাকে সমকামী আলাপে আনন্দ দিয়েছিল,
তাতে ক্ষতি কিসের ? মৃত্যুমুখী ছেলেটা শেষে, একটু আনন্দ পেয়েছিল ।
শেষ বেলায় বলেছিল, পূজা ভালো থাকুক, খুব মিস করব স্যামিকে,
বাবা মা, আর ছোট্ট বোনটাকে ।
কি সহজে সব হয়ে গেলো ব্যক্ত,
চোয়ালটা তখনও ছিল পাষাণের মতো শক্ত ।।
অতিথি চলে গেলে, আবার ধূসর ফ্রেমের কাঁচটা মুছি,
জিজ্ঞাসু চোখে, ছেলেটাকে দেখি, কত কষ্টে ওকে বড় করেছি,
ফ্রেমের ভেতর আমার ছেলেটা বাসকরে সুখে,
চেয়ে থাকে রাগ-অভিমানহীন, নিষ্পলক চোখে ।।
নীল-অভিজিৎ ~ 04/07/2017
Related