Home ব্লগবাজি পথ — ৪৭ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৪৭ ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

পথ — ৪৭  ~ হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
পথ ----- ৪৭
----------------
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়




     ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় হাসানোর আগেই আমরা হেসে ফেলি। তাঁর মুখ চোখ
সর্বোপরি তাঁর শরীরী ভাষা এমনই যে আমরা না হেসে পারি না। স্কুলজীবনে সুর্যও
ছিল ঠিক এমনই একজন মানুষ। সে হাসানোর আগে তাকে দেখেই আমরা হেসে ফেলতাম। অন্তত
আমি তো হাসতামই।
     আমাদের পাশের গ্রাম তালবোনা-য় সূর্যর বাড়ি ছিল। অদ্ভুত একটা ভাঙা সাইকেল
নিয়ে সে স্কুলে আসত। এই সাইকেলটা দেখেও হাসি পেত। সিট খোলা, মানে সাইকেলে
চাপার সময় সিটটা লাগিয়ে নিয়ে সে চালাত। অন্যসময় সিটটা তার স্কুল-ব্যাগে
থাকত। কখনও বাসে চেপে আবার কখনও কারও সাইকেলের পিছনে চেপে আবার কখনও হেঁটেও
স্কুলে আসত। তার হাঁটার ভঙ্গিমাটা অদ্ভুত। বুক চিতিয়ে হাঁটত।
     পণ্ডিতবাবুর পিরিয়ডে একজন অন্তত মুখে হাত দিয়ে বাইরে বেরোবেই। সে হল
সূর্য। সোজা স্কুল থেকে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে গোটা বাজারটা ঘুরে নিয়ে তবে
স্কুলে ঢুকত।      তখনও টিভির অত রমরমা হয় নি। আমাদের পাড়ায় একজনের বাড়িতে
মাত্র টিভি ছিল। তাই তখন ক্রিকেট খেলার খবর জানতে হলে রেডিওই একমাত্র ভরসা
ছিল। হঠাৎ আমাদের ক্লাসঘর থেকে রেডিওর ধারাবিবরণী ভেসে এল। কে রেডিও এনেছে?
আমরাও রীতিমতো অবাক। কে একাজ করল? এরকম ঘটনা তো আগে কখনও ঘটে নি। জীবন
বিজ্ঞানের স্যার ভয়ঙ্কর রেগে গেছেন। তখন ভারত সফরে ইংল্যান্ড এসেছে। তাই রেডিও
কেউ আনতেই পারে। স্যার চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন। আমরা নিজেরাই নিজেদের ব্যাগ দেখা
শুরু করলাম। কারও ব্যাগেই কিছু পাওয়া গেল না। স্যার বেশ রাগ রাগ ভাব নিয়েই
চেয়ারে বসতে যাবেন এমন সময় আবার রেডিও বেজে উঠল। এবার স্যার চিৎকার শুরু
করলেন। কিন্তু কিছু লাভ হল না।
     ক্লাস শেষ হতেই সৃর্য আমাদের বলল, "কেমন বোকা বানালাম বলত?" একমাত্র তখনই
আমরা জানতে পারলাম, এ সূর্যেরই কাজ। আমরা রীতিমতো অবাক। মুখে এইভাবে কেউ আওয়াজ
করতে পারে নাকি! আমাদের অনুরোধে সূর্য আরও একবার করে দেখাল। কী অসাধারণ! না
শুনলে কেউ মনেও আনতে পারবে না, মুখ দিয়েও একটা রেডিও বানানো যায়! কী অসাধারণ
দক্ষতা!
     এই সূর্য কখনও ক্লাসে বসেই গরুর ডাক, কুকুরের ডাক ডাকত। আমরা সবাই
সূর্যের কাজে কেউ না কেউ এক আধদিন স্যারের হাতে মার খেয়েছি। কিন্তু তার প্রতি
আমাদের কোনো রাগ ছিল না। স্যারকে দিয়ে আমরা তাকে কখনও মার খাওয়াই নি। বরং
উল্টোটাই ঘটত। সূর্য না এলে আমাদের স্কুলে এসে কোনো আরাম নেই। স্কুলে এসে
সূর্যের মুখটা দেখলে তবেই আনন্দ।


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here