যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুকাণ্ড কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিংয়ের অভিযোগ সামনে। কিন্তু ঠিক কী হত বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনী হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে জানিয়েছেন, ১০-১৫ বছর আগেও এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল না। আমাদের সময় ছোট কাগজে মোড়া চিরকুট দিত। সেটাতে যে শব্দ থাকত সেটা নিয়ে একটা করে টাস্ক করতে হত। সেটা মজার ছিল। তবে রাত বিরেতে মদ ঢালার একটা ব্যাপার ছিল সিনিয়রদের জন্য। কিন্তু যত দিন গিয়েছে ততটাই প্রথম বর্ষের প্রতি সিনিয়রদের ব্যবহার ততই নিষ্ঠুর হয়েছে। ঠিক কেমন হত এই নিষ্ঠুরতা?
সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে শুরু করেছেন একাধিক প্রাক্তনী। তাঁদের একাংশের মতে, ভয়াবহ সেই নির্যাতন। রাত তিনটের পরে নির্যাতন নতুন করে শুরু হত। সেটা বলে বোঝানো যাবে না।
এক প্রাক্তনী সংবাদমাধ্য়মের সামনে জানিয়েছেন, হস্টেলে অলিখিত ‘বাবা’ পদ ছিল। অর্থাৎ সিনিয়রদের মধ্য়ে যিনি একটু হর্তাকর্তা তিনিই হলেন বাবা। সেই বাবাই সর্বেসর্বা। আর জুনিয়ররা তাদের সামনে সন্তানসম নয়। জুনিয়রদের কার্যত বাড়ির পরিচারকদের মতো ব্যবহার করা হত।
তবে কয়েকজনের মতে, প্রত্যন্ত গ্রামের গরিব সরল সাধাসিধে ছেলেদের ‘মুরগি’ করতেন সিনিয়র দাদারা। কিন্তু যিনি এই র্যাগিংয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনিও হয়তো গ্রাম থেকেই এসেছেন। তাঁর বাবাও হয়তো গরিব দিনমজুর। কিন্তু যাদবপুরে মাস ছয়েক থাকলেই নাকি যাদবপুরিয়ান হয়ে যায়। আর তারপরই সেই ফেলে আসা গ্রাম, সহজ সরল জীবন সব অতীত। যত দিন যায় ততই দাপট বাড়তে থাকে। হস্টেলে শিকড় ক্রমেই গভীরে যেতে থাকে। আর তার সঙ্গে বাড়তে থাকে দাপট।
পাস আউট হয়ে যাওয়ার পরেও থেকে যান অনেকেই। নামেই অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি। কিন্তু বাস্তবে বছরের পরে বছর চলে এই কাণ্ড।
আর মৃত ছাত্রের বাবাও কার্যত জানিয়ে দিয়েছেন, ধৃত প্রাক্তনী ছিলেন হস্টেলের বাবা। তার কথামতোই সব চলত।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই কার্যত আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছেন অভিভাবকদের অনেকেই। তবে প্রশ্ন উঠছে যে যাদবপুর বরাবর বামপন্থার ঝান্ডা ওড়ায় সেখানেই গ্রামের গরিব ঘরের ছাত্রদের স্বপ্নকে এভাবে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তারপরেও হুঁশ ফেরে না কর্তৃপক্ষের। নেই সিসি ক্য়ামেরা। দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্ত চিন্তার আতুরঘর বলে পরিচিত। সেই যাদবপুরেই এভাবেই প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার উপর সিনিয়রদের অত্য়াচারের অভিযোগ।