Categories: অফ-বিট

Sugar Processing: ফ্যাক্টরিতে আখ হয়ে যায় বিষ! চিনি তৈরির পদ্ধতি জানলে অবাক হবেন


Sugar Processing: মিষ্টি ছাড়া বাঙালির ঠিক চলে না মুখে মিষ্টি পড়লে সঙ্গে সঙ্গেই মন খুশি। মিষ্টি বলতেই মনে পড়ে ঝকঝকে সাদা চিনির দানা। মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে কিংবার তরকারির স্বাদ বাড়াতে চিনির বিকল্প খোঁজা মুশকিল। চিনি কিভাবে তৈরি হয়? কমবেশি সবাই জানেন আখ থেকে চিনি তৈরি হয়, কিন্তু সাদা ঝকঝকে চিনির দানা আখ থেকে তৈরি করা কি এতই সোজা? আখ উপকারী, কিন্তু সাদা চিনিকে বলা হয় বিষ! কারণটা আছে তৈরির পদ্ধতিতে। আজ গল্পে গল্পে চলুন চিনির ফ্যাক্টরিতে, যেখানে সরাসরি আখ থেকে তৈরি করা হয় সাদা ঝকঝকে আপনার অত্যন্ত পরিচিত চিনি।

মিষ্টি ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। অল্প হলেও মোটামুটি সবাই মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন। প্রায় দুই হাজার বছরের আগে থেকে মানুষ মিষ্টির স্বাদ বুঝেছে, মিষ্টির স্বাদ মুখে লাগলেই মনের মধ্যে সুখের অনুভূতির সৃষ্টি হয়। খুশি হয়ে যায় মন। আসলে মিষ্টি ডোপামিন নামক এক হরমোনকে সক্রিয় করে তোলে, যার কারণে আমাদের মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মন ভালো হয়ে যায়।

আখের রস বা জুস থেকে চিনি ব্যবহার করা হয়। সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করা হয় লাল আলু। প্রথমে জমি থেকে আখ কেটে বান্ডিল বেঁধে সরাসরি নিয়ে আসা হয় ফ্যাক্টরিতে। আখের রস থেকে চিনি তৈরি করার মাঝে রয়েছে বেশ কয়েকটি ধাপ। প্রত্যেক ধাপে আলাদা আলাদা মেশিন ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি মেশিনের ভিন্ন ভিন্ন কাজ রয়েছে। প্রথমে চপার মেশিনে দিয়ে আখ ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নেওয়া হয়। ছোট ছোট করে কেটে নিলে ভালোভাবে ধুয়ে পেষা যায়। তারপর আখের টুকরো চলে যায় আরেকটি মেশিনে, যাকে বলা হয় ক্র্যাসিং মেশিন। টুকরো গুলো ভালোভাবে পিষের রস বের করে নেওয়া হয়। আলাদা করে নেওয়া হয় রস আর আখের খোসা। সুগার ইন্ডাস্ট্রিতে খোসাকে বলা হয় ব্যাগাস। যা জ্বালানি রূপে ব্যবহার করা যায়, অনেকেই আছেন যারা ফ্যাক্টরি থেকে এই খোসা বস্তা বন্দী করে কিনে নিয়ে যান, আবার কিছু কিছু ফ্যাক্টরিতে ওই খোসা সরাসরি জ্বালানির জন্য ব্যবহার করা হয়। খোসার সঙ্গে আখের খোসা এবং রস আলাদা করার জায়গাকে বলা হয় মিলহাউস। এখানে উৎপাদন হওয়া আখের রস পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রসেস হাউসে। ফ্যাক্টরির এই অংশে এবার চলবে যাবতীয় প্রক্রিয়া। এখানেই তৈরি হবে আপনার পরিচিত সাদা ঝকঝকে চিনি। প্রায় ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম করে মেশানো হয় কিছু উপকরণ, যাতে রসের মধ্যে থাকা অ্যাসিডের মাত্রা কমে যায়। মেশানো হয় মিল্ক অফ লাইম। তারপর প্রায় ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রস ভালোভাবে গরম করে কিছু উপাদান মেশানো হয়। যার কারণে ময়লা আর কেমিক্যাল গুলো নিচে বসে যায়। হাই টেম্পারেচারে ফোটাল সাদা ঝকঝকে রস আলাদা হয়ে গিয়ে সিরাপে পরিণত হয়। সেই সিরাপ পাঠানো হয় আলাদা মেশিনে। সিরাপ ভালোভাবে শক্ত করে দেওয়া হয় ক্রিস্টালের আকার।

বিশেষজ্ঞরা বারংবার সাদা চিনিকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। তুলনা করেন বিষের সঙ্গে। অনেকেই সতর্ক হয়ে চিনির নেশা ছাড়তে চেষ্টা করেন, কিন্তু শত চেষ্টা করেও পারেন না। মিষ্টি জিনিস দেখলেই জিভে জল চলে আসে, তখন নিজেকে সামলানো বেশ কঠিন। আসলে চিনি এক ধরনের আসক্তি। প্রাচীনকালে কিন্তু চিনি ছিল না। তখন মানুষ খাবার মিষ্টি করতে ব্যবহার করত মধু কিংবা মিষ্টি ফল, যা ধীরে ধীরে শরীরের মধ্যে নানান ধাপে রক্তে মিশত, কিন্তু বর্তমানে প্রক্রিয়াযত্র চিনি অর্থাৎ রিফাইন্ড সুগার সরাসরি রক্তে মিশে এফেক্ট ফেলছে মস্তিষ্কে। আসলে চিনির ক্ষেত্রে একটা সমস্যা রয়েছে। আপনি যদি লবণ বা নোনা জাতীয় খাবার খান তাহলে কিন্তু আপনার জিভের স্বাদগ্রন্থি বলে দেবে যে যথেষ্ট হয়েছে। আর খাওয়ার দরকার নেই। চিনির ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। স্বাদ গ্রহণ থেকে পুরোপুরি তৃপ্ত হওয়ার কোন সংকেত প্রেরণ করে না। তাইতো অনেকেই আছেন যাদের কাছে দশ পনেরোটা রসগোল্লা খাওয়া কিংবা গোটা প্যাকেট কুকিজ খাওয়া কোন ব্যাপারই নয়। আমেরিকান হার্ট ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, সাদা ঝকঝকে চিনি আপনার খাবার ইচ্ছাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আর যদি না খান তখন হয় উইথড্রয়াল। নেশার জিনিস ছাড়ার পরে শরীরে যেমন অনুভূতি হয় ঠিক তেমনটাই হবে। প্রতিদিন চিনি খাওয়ার পর যদি হঠাৎ চিনি ছেড়ে দেন তাহলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের অভাব দেখা দেবে। আপনি বদমেজাজি হয়ে যাবেন, খিটখিট করবেন, সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন। চিনির প্রতি আসক্তি কারোর কম, কারোর বেশি। আপনার প্রতিদিনের খাবার যেমন ভাত রুটি ফলমূল নানা ধরনের সবজির মধ্যে শর্করা আছে যা হজম হওয়ার পর বেশ কয়েকটি ধাপে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। গ্লুকোজ থেকেই আপনি শক্তি পান, কিন্তু সাদা চিনির ক্ষেত্রে হয় একেবারে উল্টো। আসলে সাদা চিনি হলো সুক্রোজ যা ভাঙে না, সরাসরি রক্তে মিশে যায়। বর্তমানে অনেকেই তাই সাদা চিনির পরিবর্তে বেছে নিচ্ছেন লালচে আখের চিনিকে। গোটা বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারংবার চিনি আর লবণ সম্পর্কে সতর্ক করছেন। বারবার বলছেন এগুলোর ব্যবহার কমাতে। কিন্তু খাবারের স্বাদ আনতে এই দুটো জিনিসকে বাদ দেওয়া মুখের কথা নয়। তাই একটু ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে ঝকঝকে ঝরঝরে মিহিদানা চিনির বদলে বেছে নিতে পারেন মোটা দানার বাদামি চিনি। এটি তুলনামূলকভাবে একটু স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়



খবরটি “খবর ২৪ ঘন্টা” অ্যাপে পড়ুন

খবর ২৪ ঘন্টা

Recent Posts

Sundarbans forest worker killed: সুন্দরবনের ইতিহাসে প্রথম চোরাশিকারিদের হাতে বনকর্মী মৃত্যু, খুনের মামলা রুজু

চোরশিকারীদের হাতে বনকর্মী খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করল সন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশ।…

1 hour ago

দেশের প্রেসিডেন্ট ও বিদেশমন্ত্রীকে নিয়ে ভেঙে পড়ল ইরানি হেলিকপ্টার

তেহরান: ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদোল্লাহিয়ানকে নিয়ে একটি হেলিকপ্টার দেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ি…

1 hour ago

CPM leader arrest with money: ভোটের মধ্যে সীমান্তে প্রচুর বাংলাদেশি মুদ্রা সহ ধৃত CPM নেতা, শাস্তির দাবি TMC-র

সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে গরু পাচার বা সোনা পাচারের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এবার সীমান্তে প্রচুর…

2 hours ago

Hotel owner beaten: হোটেল থেকে AC-র রিমোট, চাবি চুরির চেষ্টা, বাধা দেওয়ায় তারাপীঠে আক্রান্ত মালিক

টাকা বা সোনা নয়, এসির রিমোট, চাবি চুরির চেষ্টা, তাও আবার একটি হোটেল থেকে। আর…

2 hours ago

২৫ দিন পর বাড়ি ফিরে এলেন ‘তারক মেহতা…’র ‘নিখোঁজ’ অভিনেতা গুরুচরণ সিং

ডেস্ক: দিনপঁচিশেক ‘বেপাত্তা’ পর বাড়ি ফিরে এলেন হিন্দি সিরিয়ালের অভিনেতা গুরুচরণ সিং। জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘তারক…

3 hours ago

Illegal construction: বেআইনি নির্মাণ কীভাবে রুখতে হবে? সব পুরসভাকে পুস্তিকা পাঠাল পুর দফতর

গার্ডেনরিচ কাণ্ডের পরে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কলকাতা পুরসভা। তবে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ শুধু…

3 hours ago