বঙ্গের ভোটে হিংসার সেই ট্র্যাডিশনই বজায় রইল। প্রথম দু’দফার চেয়েও মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় চরম অশান্তির সাক্ষী থাকল রাজ্য। শাসকদল থেকে বিরোধী দলের প্রার্থীরা আক্রান্ত হলেন বিভিন্ন প্রান্তে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন শাসকদলের প্রার্থী-কর্মীরা। দিনভর দাপট দেখিয়ে গেলেন গেরুয়া গুণ্ডারা। তাদের গুণ্ডামিতে প্রাণ খোয়াতে হয়েছে হুগলির গোঘাটের তৃণমূল বুথ সভাপতিকে। আর দিনভর সেই গুণ্ডামি দেখেই চোখ বুজে রইলেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। ঠাণ্ডি ঘরে বসে বাংলার ভোটকে তামাশায় পরিণত করেছেন ‘বিজেপি বান্ধব’ প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক। আর তৃতীয় দফার ভোটের পরেই প্রশ্ন উঠেছে, জনগনের করের টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ করে ভোটের নামে তামাশার অধিকার নির্বাচন কমিশনকে কে দিয়েছে? কাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বঙ্গের ভোট পরিচালনা করা হচ্ছে?
প্রথম দু’দফাতে কার্যত অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে ব্যর্থ হয়েছিল নির্বাচন কমিশন। নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি কার্যত ফস্কা গেরো হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তৃতীয় দফায় যেহেতু শাসকদলের শক্ত ঘাঁটিতে ভোট হচ্ছে তাই অশান্তির আশঙ্কা ছিলই। মঙ্গলবার ভোট শুরু হতেই শুরু হয় সমাজবিরোধীরা অবাধ তাণ্ডব। গোঘাটে তৃণমূল বুথ সভাপতিকে ধাক্কা দিয়ে গুণ্ডামির সূচনা করে গেরুয়া দুষ্কৃতীরা। আরামবাগে আক্রান্ত হন তৃণমূল প্রার্থী সুজাতা মণ্ডল। তাঁকে বাঁশ দিয়ে মারা হয়। খানাকুলের তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নাজিবুল করিমও আক্রান্ত হন। তাঁকেও বাঁশ পেটা করা হয়। উলুবেড়িয়ায় গেরুয়া গুণ্ডাদের হামলার মুখে পড়েন তৃণমূলের ডাকসাইটে নেতা নির্মল মাজি।
পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি ও আইএসএফের প্রার্থীরাও। ফলতার বিজেপি প্রার্থী বিধান পাড়ুই, শ্যামপুরের বিজেপি প্রার্থী তনুশ্রী চক্রবর্তী ও উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী পাপিয়া অধিকারীও আক্রান্ত হয়েছেন। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রেহাই পাননি জগৎবল্লভপুরের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সাবির আহমেদও। দিনভর গেরুয়া গুণ্ডাদের তাণ্ডবে যখন ত্রস্ত সাধারণ ভোটাররা, তখন তাঁদের অভয়দানের চেয়ে ঠাণ্ডি ঘরে বসে দিবানিদ্রাতেই মগ্ন থেকেছেন অবাধ (নাকি অশান্তির) ভোট করানোর দায়িত্ব নিয়ে আসা বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। সাংবাদিকদের কাছে বার বার বলেছেন, ‘সব কুছ ঠিক হ্যায়।’
দিনভর তৃণমূল কংগ্রেস ও সংযুক্ত মোর্চার নেতারা বার বার নালিশ নিয়ে ছুটলেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাবের দফতরে। আর নিরীহ, গোবেচারা ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক হাসিমুখে সব অভিযোগ শুনে নির্লিপ্ত কণ্ঠে আওড়ে গেলেন একটাই বাক্য- দেখছি, খোঁজ নিচ্ছি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বঙ্গে কার্যত বিধানসভার ভোট পরিচালনা করতে গিয়ে চরম অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক। ভোটকে প্রহসনে পরিণত করেছেন।