দূষণ গোটা বিশ্বের একটা বড় সমস্যা। তাই জলবায়ু নিয়ে বড় সম্মেলন এবং বৈঠক বসে থাকে ভারতে এবং ভারতের বাইরের দেশগুলিতে। প্রত্যেক বছর কোন দেশে কত দূষণ এবং কোন রাজ্যে কত দূষণ তার একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই আবহে এবার একটা খারাপ খবর সামনে এসেছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে রাজ্য তথা দেশের অতি দূষিত শহরের তালিকায় ঢুকে পড়তে পারে শৈলনগরী দার্জিলিং! অর্থাৎ, সুন্দর প্রকৃতি আর পরিবেশের মধ্যে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য দার্জিলিংকে বেছে নেওয়ার আগে এবার দু’বার ভাবতে হবে। সম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী দু’বছরের মধ্যে রাজ্যের সপ্তম এবং দেশের ১৩২তম অতি দূষিত শহরের তকমা পেতে পারে ‘পাহাড়ের রানি’।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? কোনও শহরের বাতাস কমপক্ষে পাঁচ বছর কেন্দ্র নির্ধারিত বায়ুমানের মাপকাঠি পূরণ করতে না পারলে তাকে অতি দূষিত বলা হয়। এই নিয়ে এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এদিকে ‘অ্যাটমোস্ফিয়ারিক এনভায়রনমেন্ট’ শীর্ষক জার্নালে কলকাতার বোস ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডঃ অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক মনামি দত্ত এবং কানপুর আইআইটির ডঃ অভিনন্দন ঘোষের একটি যৌথ গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এমন ছ’টি শহরকে তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা ভারতীয় মানের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সকলের কপালে।
কোন ছটি শহরের উল্লেখ রয়েছে? ওই সমীক্ষা রিপোর্টে যে ছ’টি শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি হল— আসানসোল, রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর, কলকাতা, হাওড়া, হলদিয়া এবং ব্যারাকপুর। তবে এসব শহরের তুলনায় দার্জিলিংয়ের পরিবেশ অনেক শুদ্ধ এবং স্নিগ্ধ বলেই মনে করা হতো। এখন এই গবেষণা বলছে, সেই ধারণা পাল্টে গিয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২১—এই সময়কালে গবেষণাটি করা হয়েছিল। দার্জিলিংয়ের বাতাসে পিএম–১০ (ধুলো এবং ধোঁয়ার অতি ক্ষুদ্র দূষক কণা)–র উপস্থিতির উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, মার্চ–মে এবং ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি মাসে দার্জিলিংয়ের বাতাসে পিএম ১০–এর ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতীয় মান হল প্রতি ঘনমিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রাম। তাই অতি সূক্ষ্ম দূষক কণার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে ২০১৪ সাল থেকে পিএম–১০ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে।
কেন এমন পরিস্থিতি দার্জিলিংয়ে? এই বিষয়ে বোস ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডঃ অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কলকাতা ও শহরতলিতে ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পাহাড়ি অঞ্চলে তা মানা হচ্ছে না। সেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের প্রবণতা নেই। তাছাড়া খোলা আকাশের নীচে কাঠ, কয়লা পোড়ানো হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে পর্যটকদের আনাগোনা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, ডিজেল–চালিত জেনারেটরের অতিরিক্ত ব্যবহার এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে। দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ না করলে অতি দূষিত শহরে পরিণত হবে শৈলশহর।’