আজ শুভ বিজয়া দশমী। বাঙালীর বৃহত্তম শারদীয় উৎসবের সমাপনী দিবস। শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গার আবাহন হয়েছিল। দেবী দুর্গা অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক। এ বিজয় অর্জিত হয় আদ্যাশক্তি মহামায়ার সক্রিয় ভূমিকায়। মাতৃরূপিণী মহাশক্তি দুর্গা অশুভ শক্তির কবল থেকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ও ভক্তকুলকে রক্ষা করেন। অশ্রুসজল নয়নে ভক্তবৃন্দ বিদায় জানাবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে ৷ উৎসব শেষে বিষাদের সুর ৷ মণ্ডপে-মণ্ডপে চলছে সিঁদুরখেলা, মিষ্টিমুখ ৷ চলছে শুভেচ্ছা বিনিময় ৷ এবার কৈলাসে ফিরবেন মা। আবারও একবছরের অপেক্ষা ৷ বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা ঘোড়ায় চড়েই কৈলাসে ফিরবেন। আপনাদের সবাইকে জানাই বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা । বাঙালী জীবনে উৎসব আনন্দের সকল অনুষঙ্গে মিষ্টি ছাড়া কি চলে? আর সেটা যদি হয় নিজের হাতে তৈরি মিষ্টি তাহলে তো কথাই নেই । বিজয়া দশমীতে বাঙ্গালীদের মিষ্টি মুখ মাস্ট । তাই আজ আপনাদের জন্য রইল পাঁচটি মিষ্টির রেসিপি ।
ক্ষীর কদম্ব
উপকরণ
- দুধ ১ লিটার
- খোয়া ক্ষীর / মেওয়া ৫০০ গ্রাম
- ঘি
- কন্ডেন্সড মিল্ক
- চিনি ২ কাপ
- চিনি পাউডার
- গুঁড়ো দুধ
- লেবুর রস
রসগোল্লা বানানোর প্রণালী
দুধ গরম করে ফুটে উঠলে তাতে ১ থেকে ২ চামচ লেবুর রস দিয়ে দিন ।
দুধ ঘনহয়ে আস্তে আস্তে ছানা ছানা হয়ে যাবে।
ছানা নামিয়ে একটা পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ঢেলে নিন।
পাতলা কাপড়ে বেঁধে টাঙ্গিয়ে রাখুন যাতে ছানা থেকে ভালো করে জল ঝরে যায়।
ছানা দুইভাগে ভাগ করে নিন ।
এক ভাগ ছানা হাত দিয়ে ভালো করে মেখে নিন ।
মাখা ছানা দিয়ে ছোট ছোট বল বানিয়ে নিন।
একটি পাত্রে এক কাপ চিনি আর তিন কাপ জল দিয়ে পাতলা করে চিনির রস বানিয়ে নিন।
ছানার বলগুলো ফুটন্ত রসে ছেড়ে মিডিয়াম আঁচে ২০ থেকে ২৫ মিনিট ঢাকা দিয়ে রান্না করলে রসগোল্লা তৈরি হয়ে যাবে।
ক্ষীরকদম্ব বানানোর প্রণালী
আগে থেকে ভাগ করে রাখা বাকি ছানার সঙ্গে আধা কাপ মেওয়া, কন্ডেন্সড মিল্ক ও ঘি একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে গ্যাসে মিডিয়াম আঁচে বসিয়ে দিন।
বারেবারে নাড়তে থাকুন।
যখন দেখবেন ঘন হয়ে গেছে তখন নামিয়ে ফেলুন।
ক্ষীর দেখতে অনেকটা আটার ডো-এর মতো হয়।
এবার রসগোল্লা থেকে রস চিপে বের করে নিন।
যতগুলো রসগোল্লা হয়েছে ঠিক সেই কয়টা বলের আকার ক্ষীর দিয়ে বল বানিয়ে ফেলুন।
এবার ক্ষীর এর বলগুলো বাটির মতো বানান অর্থাৎ মাঝাখানে গর্ত করে এর ভেতরে রসগোল্লা দিয়ে বাটির মুখ ভালো করে বন্ধ করে দিন হাত দিয়ে চেপে।
এবার মেওয়ায় কোট করে নিন একটা একটা করে।
ঘণ্টা খানেক ফ্রিজে রেখে দিন সেট হবার জন্য ।
তৈরি হয়ে গেল ক্ষীরকদম্ব।
ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন সুস্বাদু ক্ষীর কদম্ব ।
রাজভোগ
উপকরণ
- ১ লিটার দুধ
- লেবুর রস
- ১ চা চামচ ময়দা
- ১ চা চামচ সুজি
- খোয়া ক্ষীর
- এলাচ গুঁড়ো
- চিনি
- ১ চা চামচ গোলাপ জল
- জাফরান
প্রণালী
ছানা তৈরির জন্য গ্যাসে একটি পাত্রে দুধ গরম বসিয়ে দিন ।
দুধ ফুটে উঠলে -এর মধ্যে ৩ / ৪ চামচ লেবুর রস দিয়ে দিন ।
গ্যাস বন্ধ করে ঢেকে রাখুন ।
১০ মিনিট পর পাতলা কাপড় দিয়ে ছানা ছেঁকে নিন ।
ভালো করে ধুয়ে চিপে নিন ও ঝুলিয়ে রাখুন মিনিট পাঁচেক।
জল ঝরে গেলেই ছানা তৈরি।
খুব ভালো করে ছানা মেখে নিয়ে এতে ময়দা ও সুজি দিয়ে আবার মেখে নিন।
খোয়াক্ষীর , এলাচ গুঁড়ো ও গোলাপ জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
ছানার মিশ্রণ ১২/১৪ টি সমান ভাগে ভাগ করে নিয়ে হাতে গোল বলের মতো তৈরি করে ভেতরে খোয়া ক্ষীরের পুর দিয়ে বলের মুখ বন্ধ করে দিন।
লক্ষ্য রাখবেন পুর যেন ভেতর থেকে বের না হয়ে যায়।
একটি প্যানে ৩ কাপ চিনি ও ৩ কাপ জল দিয়ে পাতলা চিনির রস তৈরি করে নিন।
কিছুক্ষণ পর চিনির রসে জাফরান দিন।
এবার পাতলা চিনির রসে ছানার বলগুলো দিয়ে দিন।
ছানার বল দিয়ে গ্যাসের আঁচ বাড়িয়ে ৪ থেকে ৫ মিনিট রান্না করুন ।
আবার ওপর থেকে এক কাপ গরম জল দিয়ে আরও ৫ মিনিট ছানার বল গুলি রান্না করুন ।
ছানার বলগুলো ফুলে প্রায় দ্বিগুণ হলে বুঝবেন আপনার রাজভোগ তৈরি।
এবার গ্যাস বন্ধ করে নামিয়ে নিন।
তৈরি জিভে জল আনা সুস্বাদু রাজ ভোগ ।
ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন মজাদার মিষ্টি ‘রাজভোগ’ ।
সন্দেশ
উপকরণ
- দুধ ১ লিটার
- চিনি ১ কাপ
- এলাচ গুঁড়ো ১ চিমটি
- লেবুর রস ১ টেবিল-চামচ
- পেস্তাবাদাম কুচি
- ঘি
- এক চিমটি নুন
- কনডেন্সড মিল্ক
প্রণালী
১ লিটার দুধ ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
ফুটে উঠলে তাতে লেবুর রস দিয়ে নাড়াতে থাকুন।
ছানা ও জল আলাদা হয়ে গেলে ছেঁকে নিন।
যদি প্রয়োজন হয় আরও ১ / ২ চামচ লেবুর রস দিতে পারেন।
ছানা থেকে চেপে চেপে জল বের করে নিন।
ছানাতে জল থেকে গেলে সন্দেশভালো হবে না।
ছানা হাত দিয়ে ভালো করে মথে সঙ্গে চিনি এবং এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে নিন ।
একটি ননস্টিক প্যান / কড়াইতে ঘি দিয়ে এলাচ ফোড়ন দিয়ে গ্যাসের আঁচ কমিয়ে ছানা বসিয়ে দিন।
ঘনঘন নাড়তে থাকুন।
এতে ২/৩ টেবিল-চামচ কনডেন্সড মিল্ক ও এক চিমটি নুন দিয়ে দিন ।
চিনি গলে একটু আঠাআঠা হয়ে গেলে নামিয়ে ট্রেতে বা প্লেটে ছড়িয়ে দিন ।
কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা হলে পছন্দ মতো আকারে কেটে নিন ।
ওপরে পেস্তা বাদামকুচি ছড়িয়ে দিন।
তৈরি আপনার জিভে জল আনা সন্দেশ ।
আপনার প্রিয়জনকে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন নিজের হাতে তৈরি সন্দেশ ।
লবঙ্গ লতিকা
উপকরণ
- চিনি
- ঘি বা তেল ২ টেবিল চামচ
- খোয়া ক্ষীর
- এলাচ
- দারচিনি
- লবঙ্গ প্রয়োজনমতো
- ময়দা ১ কাপ
- নুন
- তেল
প্রণালী
চিনির রস বানানোর জন্য ২ কাপ জলে ২ থেকে ৩ কাপ চিনি ও ১ টুকরো দারচিনি ও ৪ টি ছোট এলাচ দিয়ে চিনির রস তৈরি করে নিন ।
লক্ষ রাখবেন চিনির রস যাতে গাঢ় হয় ।
ময়দায় সামান্য নুন ও তেল দিয়ে মেখে ডো তৈরি করে নিন ।
ঘিতে দারচিনি ভেজে তুলে নিন।
ক্ষীর , চিনি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
ছোট ছোট লুচি বেলে তার মাঝখানে পুর দিয়ে চারকোনা পরোটার মতো ভাজ করে নিন ।
ভাজের ঠিক মাঝখানে একটি করে লবঙ্গ দিয়েআটকে দিন।
লবঙ্গ এমন ভাবে ঢোকাবেন যেন এর ওপরের ফুলটা বাইরে থাকে।
ডুবো ঘি / তেলে ভেজে নিন।
উভয় পাশে সুন্দর বাদামি রং আসা পর্যন্ত ধীরে ধীরে ভাজতে থাকুন।
গ্যাসের আঁচ মিডিয়াম রাখবেন ।
সব গুলি ভাজা হয়ে গেলে চিনির রসে ৫ থেকে ১০ মিনিট রেখে দিন ।
তৈরি স্বাদের বাহার লবঙ্গ লতিকা ।
চিনির রস থেকে উঠিয়ে পরিবেশন করুন সুস্বাদু লবঙ্গ লতিকা ।
নারকেলর মালাই বরফি
উপকরণ
- নারকেল বাটা ২ কাপ
- ঘন দুধ ১ কাপ
- সুজি ২ টেবিল চামচ
- ঘি আধা কাপ
- চিনি ১ কাপ
- এলাচ গুঁড়ো
- বাদাম কুচি
- কিসমিস
প্রণালী
কড়াইয়ে ঘি দিয়ে সুজি ভেজে নিন।
নারকেল বাটা দিয়ে আবার কিছুক্ষণ ভেজে নিন।
ভাজা হলে দুধ, চিনি ও বাদাম কুচি দিয়ে নাড়তে থাকুন।
হালুয়া ঘন আঠালো হলে এলাচ গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন ।
প্লেটে ঘি দিয়ে ছড়িয়ে ইচ্ছামতো আকারে কেটে নিন ।
বরফির ওপরে বাদাম, কিসমিস ছড়িয়ে দিয়ে দিন ।
তৈরি ঠাকুরের ভোগের জন্য নারকেলর মালাই বরফি।