জল যন্ত্রণায় ভারত। তার মাঝে চরম শত্রুতা ভুটানের। জল ছেড়ে দিল বাঁধের। ভুটানের জল বইছে ভারতের উপর দিয়ে। তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গ্রাম। এই দৃশ্য চোখে দেখা যাচ্ছে না। বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা। হঠাৎ ভুটান কেন এমনটা করল? কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে? আবার চীনের উস্কানি নয় তো?
ভুটান হঠাৎ কুরিচু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জলাধার থেকে টানা ৯ ঘন্টা জল ছাড়ার ঘোষণা করতেই মাথায় হাত ভারতের। ভেসে যাচ্ছে অসমের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। জল বন্দি একাধিক জেলা। কুরিচু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বে রয়েছে ড্রুক গ্রিন পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেড। জলাধারের চাপ কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ভুটানের জলে ভারতে বানভাসি হওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। প্রতিবছরই জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ারের অঞ্চলের বহু নদী ভুটানের জলে ভরে ওঠে। বন্যা হয় বহু এলাকায়। ভুটানে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই আলিপুরদুয়ারে প্রচুর পরিমাণে জল ঢুকে নষ্ট হয়ে যায় চা বাগান। তবে এবারটা যেন একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল।
সম্প্রতি বন্যার জেরে শোচনীয় অবস্থা ভারতের। জলে ভেসে গিয়েছে অসমের প্রায় ১৭টি জেলা। বাতাসে প্রায় ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষের হাহাকার। নষ্ট হয়ে গিয়েছে ২৭৭০ হেক্টর জমির ফসল। সহায় সম্বল নিয়ে মানুষ খুঁজছে একটু আশ্রয়। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। বাড়ির মধ্যে গলা পর্যন্ত জল। গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টিতেই অসমের এই অবস্থা। তার ওপর ভুটান থেকে জল ছাড়ায় ভয়াবহ আশঙ্কায় কাঁপছে ভারত। এমনিতেই উত্তর ভারতের অবস্থা ভীষণ খারাপ। উত্তরাখণ্ড হিমাচল প্রদেশে চলছে ধ্বংসলীলা। লন্ডভন্ড দিল্লি। অসমে যে ১৭ টি জেলার সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে জোরহাট, ডিব্রুগড়, বঙ্গাইগাঁও, নলবাড়ি, শিবসাগর, তিনসুকিয়া। বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র, বেকি, সঙ্কষ, বুড়িডিহিং নদীর জল। তার উপর এক নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। ভুটানেও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। নদীর জলস্তর আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
ভুটানের সাথে ভারতের বন্ধুত্ব কিন্তু বেশ ভালো। চীন বারংবার উস্কানি দিয়েও দুই দেশের সম্পর্ক বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। ভারত আর ভুটানের মধ্যে জল সংকট নিয়ে কম টানাপোড়েন ছিল না। অসমের চাষীদের বহুদিনের অভিযোগ ছিল, ভুটান থেকে তারা নদীপথে সেচের জল পাচ্ছে না। ভুটান জল আটকে রাখছে। ২০২০ সালে লাদাখ সংঘাতের আবহে দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রজেক্টে চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে দুই দেশই সুবিধা পাবে। এই প্রজেক্ট শেষ হবে ২০২৫ সাল নাগাদ। তখন ভারত বুঝিয়ে দিয়েছিল, ভুটানের সাথে সম্পর্ক ঠিক আগের মতই রয়েছে। চীন চেয়েছিল লাদাখ আবহে ভুটানের মাধ্যমে ভারতকে কূটনৈতিক চাপে রাখতে। কিন্তু সেই প্ল্যানিংয়ে জল ঢেলে দেয় ভারত। সেই ১৯৫৩ সাল থেকে ভুটান সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় চাষিরা যথা নিয়মে সেচের জল পেয়ে আসছে। কিন্তু সেই সমস্যা চুক্তির মাধ্যমে মিটলেও এবার ঘটছে উল্টো ঘটনা। জলের আধিক্যে ভেসে যাচ্ছে ভারতের বহু অঞ্চল। যদিও করিচু বাঁধের জল ছাড়ার সিদ্ধান্তে চীনের কোন হাত আছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। বিষয়টা নিয়ে অসম সরকার ভুটানের সঙ্গে আলোচনা করছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়