নবান্ন–রাজভবন সংঘাত লেগেই আছে। যতই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করে আসুন, সংঘাত কিন্তু কমছে না। রাজ্যপালও যেমন মুখে মিষ্টি কথা বললেও কাজ করছেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই। তেমনই এবার রাজ্যপালের সঙ্গে সৌজন্য বজায় রাখলেও তাঁর কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিধানসভায় প্রস্তাব আনতে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। আগামী ২২ অগস্ট আবার বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। তখনই প্রস্তাব এনে রাজ্যপালের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে চায় সরকারপক্ষ। রাজভবনে পালিত ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখেই এই অবস্থান বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের বিরোধিতা করে প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এমনকী তাতে সই করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তথা বিধানসভায় দলের উপ–মুখ্যসচেতক তাপস রায়। প্রস্তাবকও মোটামুটি ঠিক আছে। বাদল অধিবেশনের গোড়াতেই এই প্রস্তাব আনা হতে পারে। আর রাজভবনের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা হতে পারে। শিক্ষা দফতরকে সরিয়ে রেখে সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছেন রাজ্যপাল বলে আগেই অভিযোগ করা হয়েছিল। এবার সেটারই বাস্তব সমালোচনা করা হবে বিধানসভায়। আর এই মর্মে বিধানসভায় প্রস্তাব আনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক আইনসভায় ১৯৪৭ সালের ২০ জুন ভোটাভুটিতে দুই বাংলা ভাগ নির্ধারিত হয়েছিল। ওই দিনটিকে বিজেপি ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে ইদানীং পালন করে। আর তাকেই সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালকে তিনি চিঠিও লিখেছিলেন। কিন্তু রাজ্যপাল কোনও কর্ণপাত করেননি। বরং রাজ্যপাল সেই আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে রাজভবনে ওই অনুষ্ঠান করেছিলেন। রাজ্য সরকারের অমতে রাজ্যপালের এভাবে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার বিধানসভায় বিষয়টি নিয়ে প্রস্তাব আনছে তৃণমূলের পরিষদীয় দল।
আরও পড়ুন: বাম ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে এফআইআর করলেন শুভেন্দু, যাদবপুর কাণ্ডে নয়া মোড়
সংঘাত কি আরও বাড়বে? পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। সেটা এখনও অব্যাহত। স্বাধীনতা দিবসের দিন রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দেখা করে এসেছিলেন রাজ্যপালের সঙ্গে। তখন দু’পক্ষের মধ্যে সৌজন্য বিনিময়ও হয়। কিন্তু রাজভবন যেমন সমান্তরাল প্রশাসন চালিয়ে যাচ্ছে তেমন রাজ্য সরকারও তাঁর বিরুদ্ধে যা পদক্ষেপ করার দরকার করছে। সুতরাং এবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব নিয়ে এলে সংঘাত আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন সম্মুখসমরে রয়েছে রাজভবন–নবান্ন। সেটাই আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।