Homeব্লগবাজিতুলসী মালা ...

তুলসী মালা ~ নীল অভিজিৎ

তুলসী মালা

-নীল অভিজিৎ-

[এই ছোট্ট গল্পটির সকল চরিত্রই কিছু বাস্তব ও কিছু কাল্পনিক এবং সামাজিক কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার আধারে লেখা]

আজ অবসর হোলাম, সরকারি বাসস্থান ছেড়ে দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই রেলওয়ে ষ্টেশনে বিকেল বেলা বসে কলকাতা গামী মেলের অপেক্ষায়। ভাবছিলাম, নিজের শহরে ফিরে যাচ্ছি, দীর্ঘ দিন নিজের বাড়ি ঘর ছেড়ে চাকরি সূত্রে বাইরে বাইরে কাটালাম পরকে আপন করলাম আর অবসরের পরে আপনকে আরও আপন করে পাওয়ার আশা, সত্যি কি তা সম্ভব হবে? অনেক প্রশ্ন এসে উঁকি দিচ্ছিল আমার মনে। যদিও গত মাসে আমার ছত্রিশ বছরের কর্ম জীবনের প্রকৃত অবসর হয়েছিল, শুধু এক মাস সময় নিয়েছি, নিজের সব কিছু গোছাতে, আজ মনে হোল বিয়ে বাড়ির বাসি বিয়ে ভাঙ্গা পর্বের কন্যা বিদায় যেন, আমাকে ছাড়তে অফিসের অনেক সহকর্মীরা রেলওয়ে ষ্টেশন এসেছে, কেউ কেউ হাতে ধরে এনেছে ফুলের তোড়া, যেন বিদায় জানানোর অপর নাম এক গুচ্ছ ফুল, ঠিক তেমনই হুইসেল দিয়ে প্লাটফর্ম ছেড়ে চলে যাওয়াকে মনে হোল, আমার হয়ে ট্রেনটা বলে দিল, চললাম তোমাদের ঘনিষ্ঠতার বেড়াজাল টোপকে। একে বারে ঝাড়া-হাত-পা আমার, মেয়ের পড়াশোনার জন্য পরিবারকে দুবছর আগেই খড়গপুরে পাঠিয়ে দিয়েছি, একলা সময় কাটানো বড়ই মুশকিল, এসি কামরায় কাঁচের জানলা দিয়ে দূরে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না, জামার বুক পকেট থেকে স্মার্ট ফোনটা বের করে রিসিভ মেসেজ গুলোকে দেখতে লাগলাম

কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করলাম মাঝ বয়সী এক ভদ্রমহিলা আমার সামনে দাঁড়িয়ে, বছর পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে, বেশ বোঝা যায় অযত্ন সুন্দর চেহারায় এক অভিজাত পরিবারে ছাপ, সে জন্য স্বাস্থ্য বা সৌন্দর্য রক্ষার বিশেষ কোন যত্নের প্রয়োজন হয় না,  মৃদু হাসছে আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই বলে দিল, আমি এখানে বসতে পারি? একটু ইতস্তত হয়ে বললাম বসুন, অনেক জায়গা থাকা স্বত্তেও ভদ্রমহিলা প্রায় আমার পাশ ঘেঁষেই বসলো, বেশ পারফিউম মার্কা মেয়েলি একটা মিশ্র গন্ধ নাকে ভেসে আসছিল… চলন্ত ট্রেনের ঝাঁকুনিতে মাঝে মাঝে ওর মৃদু স্পর্শ টের পাচ্ছিলাম, কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার মতো তখন আমার অবস্থা, আর ঠিক সেই সময় নিজেকে চেন্নাই এক্সপ্রেসের সাহারুক খান বলে মনে হতে লাগলো, মনে মনে হাসি আসছিল দেখলাম ওর হাতটা এসে আমার হাতকে স্পর্শ করল! বোবার মতো আমরা দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম, কিছুক্ষণ পরে আমি আমার ঘোলাটে দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলাম ওর চোখের একটা দুষ্টুমির রেখা আর সহসা চোখের পলক দুটো ফেলে আমাকে বলল, তুমি যতই পালাতে থাক না কেন, আমি তোমাকে ধরে ফেলবই অধীর, আমি কবে থেকে তোমাকে খুঁজছি আর তুমি তার উত্তর দাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে না? কোন দিনও বুঝি আমার জন্য এতটুকু মায়া হয়নি?

কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না তখন আমি, আমার নাম তো অধীর না, অধীর নামে ভদ্রমহিলা কেন সম্বোধন করল? আমার তো কোন যমজ ভাইও নেই, সুতরাং জীবনে তো কোন দ্বৈত ভূমিকা আসার সম্ভাবনা নেই আর কেনই বা আমাকে খুঁজবে? আমি যে একজন ঘোরতর সংসারী। ভদ্রমহিলা ততক্ষণে বলতে শুরু করল… আমি তোমাকে যে প্যাকেটটা নবীনকে দাওয়ার জন্য দিয়ে ছিলাম, তারপর থেকে তুমি আর দেখা করলে না, হয়তো সেদিন আমার অনুরোধ তোমার ভালো লাগেনি, হয়তো তুমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার অনুরোধকে উপেক্ষা করতে পারনি, ভেবেছ আমি সুযোগ সন্ধানী, সে জন্যেই তুমি আর দেখা করনি, কিন্তু আমি তো শুধু তোমার মুখে নবীনের খবরটা শুনতে চেয়েছিলাম অধীরঅজ্ঞাতে আমার মুখ দিয়ে তখন বেরিয়ে গেল, না না মনে করার কি আছে? এই কথা শুনে ভদ্রমহিলা আমার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে, আমার হাতদুটোকে চেপে ধরল। আমি অস্বস্তি পাওয়ার আগেই বলে উঠল, আমি তো তোমাকে অনেক দিন ধরে জানি তুমি এরকম না, তবুও মেয়েদের মন তাই দুশ্চিন্তা করতাম। আচ্ছা তাহলে কিছু মনে করনি তো? কি আর  করি, বাধ্য হয়ে ভদ্রমহিলাকে উত্তর দিলাম, নাকিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে বলতে লাগল, আমি আমার গুরুবাবার কাছে আর যাইনা, সে নিয়ে আগে তোমরা কত হাসাহাসি করতে, এখন ওসব ছেড়ে দিয়েছি, শুধু তোমার কাছে একটা শেষ অনুরোধ, এখন তোমাকে একটা প্যাকেট দিচ্ছি, তুমি সেটা নবীনকে দিয়ে দিও কোথায় প্যাকেট, কোন প্যাকেটের চিহ্নমাত্র নেই সেখানে, আর নবীন বা কে? যাই হোক আমার তাতে কি আসে যায়, শুধু আমার হ্যাঁ বলাতে ও যদি খুশী হয় তাতে দোষ কোথায়? তাই উত্তর দিলাম, আচ্ছা ঠিক আছে। ততক্ষণে আমি দেখতে পেলাম একটা মলিন আলোর দূতিতে ওর চোখ দুটোতে জ্বলে উঠল আর আস্তে আস্তে উঠে কোথাও যেন চলে গেল।

অনেকটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচার মতো আমার অবস্থা তখন, যাকগে এরকম কত ঘটনাই না নিত্য ঘটে, তাতে বিচলিত হওয়ার কি আছে। স্মার্ট ফোনটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম, কিন্তু বারবার কমপারমেন্টের যাওয়া আসার রাস্তার দিকে নিজের মনের অজান্তে দৃষ্টিটা চলে যাচ্ছিল, এই বুঝি ভদ্রমহিলা আবার প্যাকেট হাতে করে এলআস্তে আস্তে সময় পার হয়ে গেল, অনেক রাত্রি হল কিন্তু তার আর দেখা পেলাম না

চা ওয়ালা আর হকারের চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে সকালের ঘুমটা অনেক আগেই ভেঙ্গে ছিল তাই দাঁত মেজে টয়লেট সেরে অভ্যাস মতো চা ওয়ালার কাছ থেকে এক কাপ চা নিয়ে খাচ্ছিলাম, ব্রিফকেস খুলে বাসি কাগজটার না-দেখা সংবাদ গুলোতে চোখ বুলাচ্ছিলাম।

কিছুক্ষণ পরে দেখি এক লম্বা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের বেক্তি আমাদের থেকে হয়তো একটু বেশী বয়স হবে, এগিয়ে এসে আমার সিট নাম্বারটা আমাকেই জিজ্ঞাসা করছে, আমি একটু বিরক্ত হয়ে ওকে বললাম হ্যাঁ এটা আমার সিট, চেন্নাই থেকে খড়গপুর পর্যন্ত রিসার্ভ। একটু সাবধানী হয়ে ভদ্রলোকটি বললেন, না না সে কথা আমি বলছি না, কিন্তু আপনাকে খোঁজাটাই আমার আসল উদ্দেশ্য, আমি কি এখানে বসতে পারি? আমাকে খোঁজার কথা শুনতেই, মনে মনে আমার একটু কৌতূহল হোল, বললাম বসুন

আমার পাশে বসে বিনা দ্বিধায় সে বলতে লাগল, কালকে যে ভদ্রমহিলা আপনাকে এসে কোন এক প্যাকেট দাওয়ার অনুরোধ করেছিল, উনি আমার স্ত্রী। আজ প্রায় পনেরো বছর হোল আমার ছেলে নিখোঁজ, কিন্তু ও জানে আমাদের ছেলে বেঁচে আছে, ত্রিভান্দ্রামে বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে গবেষণা করছে আপনার চেহারার সাথে আমার ছোট ভাই অধীরের বেশ মিল আছে,  আপনার প্রসঙ্গে ও যখন আমাকে বলল, অধীর পাশের কামড়ায় বসে আছে, তখন আমি অনুমান করেছিলাম ও ভীষণ একটা গণ্ডগোল করে এসেছেঅনেক দিন ধরে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা চলছে এবং ডাক্তার বলেছে এটা একধরনের মানসিক ব্যাধি, আপনি কিছু মনে করবেন না, ওকে নিয়ে মাঝে মাঝে আমাকে এরকম অসুবিধা সামলাতে হয়, এখন বয়স হয়েছে আমি ছাড়া ওর আর কেউ নেই, তাই সব সময় চোখে চোখে রাখতে হয় বলে, ভদ্রলোকটি একটা ক্লান্তির হাসিতে আমার দিকে চাইলেন।

ভদ্রলোকটির চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ভীষণ মায়া হোল। অজান্তেই আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, আপনার ছেলের কত বয়স ছিল, আর কি হয়ে ছিল? আমার প্রশ্নে সহসাই ওর মুখটা নিচু হয়ে গেল, আমার খারাপ লাগছিল তখন, কেনই বা আমি এরকম প্রশ্ন করলাম ওকে। কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে একটু সপ্রতিভ হয়ে আমার দিকে চেয়ে বলল, আমি পি ডাবলু ডির একজন অবসর প্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার আর আমাদের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিল নবীন, ছোটবেলা থেকেই ভীষণ বাধ্যের ছিল, পড়াশোনায় খুব মেধাবী, হায়ার সেকেন্ডারি ভালো ভাবে পাস করে, প্রথম সুযোগেই এন আই টি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, এন আই টি দুর্গাপুর ইলেট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পায়। আমার স্ত্রীর পূজাপাঠ গুরুদেব ধর্মকর্ম নিয়ে সারা দিন মেতে থাকতে ভালোবাসে আর আমিও কোনদিন কোন কিছুতে ওকে কখন মানা করিনি। ছেলের পরীক্ষায় সফলতায় ও স্ত্রীর ইচ্ছায় বাসায় গুরুদেবের আগমন অনুষ্ঠানে তাই প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে বেশ ধুমধাম করে পালন করলাম, সেই অনুষ্ঠানে গুরুদেব এসে আশীর্বাদ করে তুলসীর একটা মালা আমার ছেলেটির গলায় পড়িয়ে দিয়েছিল।  তারপর ছেলেকে নিয়ে আমরা কলেজ হোস্টেল দুর্গাপুর রাখতে গিয়েছিলাম, সেখানে আমাদের অফিস গেস্ট হাউসে এক সপ্তাহের মতো সপরিবার উঠি, আমার বেশ মনে আছে, হোস্টেলে ছাড়ার দিনে ওর মা কাঁদতে কাঁদতে ওকে জ্বরিয়ে ধরে বলেছিল, বড় মানুষ হওয়ার জন্যে তোকে এখানে রেখে গেলাম, মালাটা খুলিস না বাবা, সব সময় তোকে রক্ষা করবে

তারপর আমরা কলকাতায় ফিরে আসি। এক সপ্তাহ পরে ছেলে মাকে চিঠি লিখল, শ্রীচরণেষু মা তোমার তো মনে আছে, তুলসীর মালাটা তুমি খুলতে মানা করেছিলে, বলেছিলে দেহ মন প্রবিত্র রাখবে। যেদিন কলেজে ভর্তি হলাম, ক্লাসে মেয়ে গুলো আমার নাম দিয়েছিল তুলসী,  কিছু মনে করিনি… ভেবেছিলাম ওরা আমার প্রবিত্রতাকে দেখেছে। দুদিন বাদে ফ্রেসার ওয়েলকামে সবুজ টিভির পর্দায়, উলঙ্গ মেয়ে দেখে মুখ নিচু করি, তাতে সিনিয়ার ছেলেরা হাসাহাসি করেছিল, সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে পাছায় হাত রেখে আমায় বলেছিল বুঝলি একেই বলে র‍্যাগিং, তুলসী এবার তুই মানুষ হোলি আমার প্রবিত্রতাকে ওরা উল্লাসে পান করছিল,  রাতে অন্ধকারে হোস্টেল টয়লেটে গুমরে কেঁদেছিপরের দিন প্রিন্সিপ্যাল মহাশয়কে জানাতে উনি বললেন তুমিও ছাত্র ওরাও ছাত্র একটু মানিয়ে চল। মানিয়ে তো চলছিলাম কিন্তু ওরা এসে বলল প্রিন্সিপ্যালকে নালিশ করেছিস, নিজেকে সুরমা ভাবিস… ? নাকে ঘুষি মেরে বলেছিল, এবার শুধু মুখের ভূগোলটা পাল্টে দিলাম দুহাতে নাকের গড়া রক্ত চেপে পরদিন তোমাকে চিঠি লিখেছিলাম, শ্রীচরণেষু মা, পরের মাসে একটু বেশী টাকা পাঠিও আমি হোস্টেল ছেড়ে জনতা মেসে উঠেছি। একদিন মেসের বাসন মাজার আট বছরের মেয়েটা কাঁদছিল, জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি হয়েছে রে তোর? ছেঁড়া সালোয়ারটার মাঝখান দিয়ে মেয়েটা অপ্রবিত্রতার অনেক চিহ্ন দেখাল আমাকে। মেস মালিকে ব্যাপারটা জানাতেই, কিছু মেস ছাত্র আমার জামার কলার ধরে শূন্যে উঠিয়ে বলল, শালা তুলসী মুখের ভিতর দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে পেছন দিয়ে বেড় করে দেব, মালা খোল, মানুষ যদি না হবি তবে আমরাই তোকে মানুষ করব, পাশে কেউ ছিল না, আমার উপর কিল চড় ঘুষি লাথি, শুধু বুক ভরা ব্যাথাই ছিল সে দিনের সাথী মা আমি শেষ রক্ষা করতে পারিনি, তুলসীর মালাটা ওরা ছিঁড়ে ফেলেছে, থানায় গিয়েছিলাম সেখানে দেখলাম পুলিশ ওদের সমর্থনে কথা বলল, পরে মেস মালিক তো রীতিমতো অস্বীকার করে, ভয় দেখিয়ে বলল ওদের মধ্যে একজন মহামান্য এমেলের পুত্র আছে ওরা এমন ঘৃণ্য কাজ করতেই পারে না, তোমারই ভুল মা পুলিশ প্রশাসন গনতন্ত্র সব কিছুই ওদের হাতে, ওরা নিজেদের ইচ্ছা মতো গণতন্ত্র তৈরি করতে পারে। আমাকে তোমরা ক্ষমা করো, আমি আর মানুষ হতে চাইনা, ভাবছি কলেজ ছেড়ে দেব আমার ছোট ঘরে একটাই জানলা, বাইরে অঝরে বৃষ্টি পড়ছে, তোমার হাতের লাউয়ের ঘণ্ট বহুদিন খাইনি। এক নিশ্বাসে ভদ্রলোক গরগর করে মুখস্ত করা ছেলের চিঠিটা আমাকে বলে গেল, একটা গভীর দীর্ঘ নিশ্বাস পুত্রহারা বয়স্ক বেক্তির বুকের ভিতর থেকে  উষ্ণ বাষ্পের আকারে বেরিয়ে এল, আমি অনুভব করেছিলাম, সন্তানহারা ওর মনের অবস্থাটা, অজান্তেই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এল তারপর?

ভদ্রলোকটি বলল তারপর থেকে ছেলেটা ফেরার, অনেক খোঁজ করেছি, জনতা মেস, হোস্টেল, কলেজ, থানাপুলিশ, উচ্চশিক্ষা পর্ষদ থেকে মন্ত্রী কিছুই বাকী রাখিনি কিন্তু ছেলেটার কোন ঠিকানা আজ অবধি পাইনি। কেউ বলে বদলা নাওয়ার জন্যে আত্মগোপন করেছে কেউ বলে এরকম ঠাণ্ডা মাথার ছেলেদের জীবনে যখন হতাশা আসে ওরা সন্ন্যাসী হয়ে যায়। কেউ বলে মেধাবী ছেলেদের মনে গভীর দাগ কাটলে ওরা সহসাই মূলে চলে যায় মাওবাদী দলে নাম লিখায়, একটু নিশ্বাস নিয়ে ভদ্রলোকটি বলল হয়তো ওকে কেউ গুম করেছে আর সুন্দর ভাবে নিশ্চিহ্ন করেছে, শেষে একটু উচ্চ স্বরে কাঁপা হাতে আঙ্গুল তুলে বলল, ওই তুলসী মালাটা ওকে শেষ করেছে।  আমার হাত দুটো চেপে ধরে ছলছল চোখে অনুরোধ করল, আমার স্ত্রী কিছুক্ষণ পরে আপনার কাছে একটা প্যাকেট নিয়ে আসবেঅনুগ্রহ করে আপনি প্যাকেটটা প্রত্যাখ্যান করবেন না, ও চলে যাওয়ার পর, না হয় প্যাকেটটা ফেলে দেবেন, না হলে আমি স্ত্রীকে নিয়ে খুব অসুবিধায় পরব, পরে ওকে আর সামলাতে পারব নাখানিক ক্ষণ আমি নির্বাক ছিলাম, তার কিছু পরে ভদ্রলোকটির আস্তে আস্তে উঠে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম

সাথে অনেক মাল ছিল তাই খড়গপুর স্টেশন আসতেই কুলি ধরে মাল গুলো প্লাটফর্মে নামিয়ে গুনতে লাগলাম আর লক্ষ্য করলাম একটু দূরে আমার দিকেই হেঁটে আসছে গতকালের সেই ভদ্রমহিলা তার পিছনে আজ সকালের সেই ভদ্রলোকটি। ভদ্রমহিলা হেসে আমার দিকে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, বেশী সময় নষ্ট করবো না, প্যাকেটটা ওকে দিও। আমি হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিলাম, মুখ দিয়ে তখন কোন স্বর বেরচ্ছিল না ভদ্রলোকটি, তারাতারি চল ট্রেন ছেড়ে দেবে বলতে বলতে, ভদ্রমহিলার হাত ধরে ট্রেনে উঠে পড়ল, হাতের প্যাকেটের দিকে চোখ যেতেই সহসা মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আস্তে আস্তে ট্রেনটা হুইসেল দিতে দিতে দূরে মিলিয়ে গেল

 

—সমাপ্ত—

                                                                                          নীল অভিজিৎ- 19/06/2017

 

- A word from our sponsors -

spot_img

Most Popular

আরও খবর...

Suvendu on Sandeshkhali: শুধু ভাইপো আর IPAC নয়, সন্দেশখালির ভিডিয়োর পিছনে হাত রয়েছে পুলিশেরও: শুভেন্দু

সন্দেশখালির ভিডিয়োর পিছনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও আইপ্যাক ছাড়াও...

- A word from our sponsors -

spot_img

সব খবর...

Seikh Sahjahan: জমি দখল করে ২৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি করেছে শেখ শাহজাহাঁ, আদালতে জানাল ইডি

সন্দেশখালির ভিডিয়ো নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই আদালতে ইডির পেশ করা তথ্যে বিপদ আরও বাড়ল তৃণমূলি মাফিয়া শেখ শাহজাহাঁর। সোমবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে জমি দখলের মামলার শুনানিতে ইডির আইনজীবী দাবি করেন, তদন্তকারীরা এখনো পর্যন্ত ২৬০ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ পেয়েছেন যার পুরোটাই দুর্নীতির মাধ্যমে করেছে শেখ...

ভুয়ো অভিযোগ করিয়ে স্ত্রীকে জেলে ভরেছে পুলিশ, দাবি পাণ্ডুয়ায় আহত কিশোরের বাবার

গত সোমবার সকালে হুগলির পাণ্ডুয়ায় বোমা বিস্ফোরণের কিশোর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন গ্রেফতার রীতা বল্লভের স্বামী। ওই বিস্ফোরণে রীতাদেবী ও তাঁর স্বামী শুকদেব মণ্ডলের একমাত্র পুত্র রূপম ২টি হাতই উড়ে গিয়েছে। সোমবার চুঁচুড়ায় বিজেপি দফতরে এক সাংবাদিক বৈঠকে স্থানীয় বিজেপি প্রার্থী...

অভিযুক্তের নাম গোলাম শেখ বলে গ্রেফতার করছে না পুলিশ, সন্দেশখালিতে ফের জ্বলল বিক্ষোভের আগুন

রবিবারের পর সোমবারও ফের এক বার পুলিশের মহিলাদের বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়াল সন্দেশখালিতে। রবিবার তৃণমূল নেতা দিলীপ মল্লিককে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার ৪ বিজেপি কর্মীর মুক্তির দাবিতে সোমবার বিকেলে সন্দেশখালির বেড়মজুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঠপোল বাজারে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মহিলারা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, টাকা দিয়ে সন্দেশখালির মহিলাদের আন্দোলন...

Suvendu on Sandeshkhali: শুধু ভাইপো আর IPAC নয়, সন্দেশখালির ভিডিয়োর পিছনে হাত রয়েছে পুলিশেরও: শুভেন্দু

সন্দেশখালির ভিডিয়োর পিছনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও আইপ্যাক ছাড়াও হাত রয়েছে পুলিশের। এমনই দাবি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই ভিডিয়োয় বিজেপির সন্দেশখালি ২ নম্বর মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালের মুখে শোনা গিয়েছিল শুভেন্দুর নামও। এদিন সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতোকেও চোর বলে দাবি করেন...

Egypt-Israel relations: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাঠে মিশর, তলে তলে ইরানের সাথে ফন্দি

  Egypt-Israel relations: এবার ইসরায়েলের পিছনে পড়ল মিশর। ফিলিস্তিনিদের হয়ে এত কথা কেন বলছে দেশটা? শুধু তাই নয়, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা করে দিল। শুধুই কি ইসরাইলের উপর রাগ নাকি পুরোটাই কূটনৈতিক চাল? গাজার কথা কতটা ভাবছে মিশর? সাম্প্রতিক সময়, মিশরের সঙ্গে ইরানের বন্ধুত্বটাই কি এর আসল...

Calcutta High Court: বউবাজার বিস্ফোরণের অপরাধী খালিদের মুক্তিতে স্থগিতাদেশ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ

১৯৯৩ বউবাজার বিস্ফোরণকাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী খালিদের মুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ। ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত রশিদ খানের ছায়াসঙ্গী ছিল খালিদ।আরও পড়ুন: ফেক ভিডিয়ো তৈরির অভিযোগে ফের উত্তপ্ত সন্দেশখালি, TMC নেতাকে গণধোলাই মহিলাদেরপড়তে থাকুন: অপরাধীর নাম শেখ শাহজাহাঁ...

মোদীর অভিযোগের পরদিনই BJPর বিরুদ্ধে পালটা হুমকির অভিযোগে থানায় সন্দেশখালির মহিলা

সন্দেশখালির মহিলাদের তৃণমূলের গুন্ডারা হুমকি দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগের পরদিনই গুরুতর অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে। সন্দেশখালির এক মহিলার দাবি, ধর্ষণের ‘ভুয়ো অভিযোগ’ তুলতে চাওয়ায় তাঁকে বাড়ি এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছেন বসিরহাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র। এমনকী থানায় গিয়ে নিরাপত্তা দাবি করেছেন তিনি।আরও পড়ুন:...

Ration Scam: রেশন দুর্নীতিতে ৮৭টা অভিযোগ পেয়েও চোখ কান বুজে বসেছিল পুলিশ, মানল রাজ্য সরকার

রেশন দুর্নীতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দিল রাজ্য পুলিশ। তাতে রাজ্যে রেশন দুর্নীতির ৮৭টি অভিযোগের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে আগামী ১৭ জুন আদালতে জবাব দেবে ইডি। ২৪ জুন পর্যন্ত রেশন দুর্নীতির ৬টি মামলায় রাজ্য পুলিশের তদন্তে স্থগিতাদেশ...

Israel-Hamas War: ভয়ঙ্কর চাপে ইসরায়েল, এক্ষুনি যুদ্ধ থামাতে হবে! যুক্তরাষ্ট্রের বড় দাবি

  Israel-Hamas War: বিশ্রী রকম চাপে জর্জরিত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। টানাটানি হচ্ছে তাঁর গদি নিয়ে। এই মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধ না থামলে কপাল পুড়তে পারে তাঁর। সেই চাপে, ভিতরে ভিতরে আলোচনা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। জো বাইডেন বলেই দিলেন, একটা শর্তে এক্ষুনি থেমে যাবে গাজা যুদ্ধ। স্বস্তি পাবে গাজার...

Abhijit Ganguly: পুলিশের দায়ের করা খুনের চেষ্টার মামলা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা FIRকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করে FIR খারিজের দাবি জানিয়েছেন তিনি। মামলাটি গ্রহণ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হতে পারে বলে আবেদনটির।আরও পড়ুন:...

‘কেজরিওয়ালকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীপদ থেকে হঠানোর দাবি’, মামলা শুনলোই না সুপ্রিম কোর্ট

নয়াদিল্লি: আবগারি দুর্নীতি মামলায় জেলে যেতে হয়েছিল দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। বর্তমানে তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে রয়েছেন। সেই তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। সেই আবেদন শুনতে নারাজ সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সাফ জবাব, “আমরা এটা করতে পারি না।” আবেদনকারীর দাবি,...

মোদীর পাশে বিজেপি প্রতীক হাতে দাঁড়িয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপের শিকার নীতীশ কুমার

ডেস্ক: পটনায় জমজমাট রোডশো করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাঁর পাশে সারাক্ষণ বিজেপির প্রতীক হাতে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। মতাদর্শ যা-ই থাক, নীতীশ কুমারকে এ ভাবে দেখতে অভ্যস্ত নয় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বিহারের জনসাধারণ। এই দৃশ্যের পর সমাজ মাধ্যমে...