বাংলার যে কোনও প্রান্ত থেকে ব্লাড টেস্ট অথবা বুকের এক্স রে। খরচ এবার একই। বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রেডিওলজিকাল এবং প্যাথোলজিক্যাল স্বাস্থ্যপরীক্ষার খরচ বেঁধে দিল স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন।
অভিযোগ আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত টেস্ট হয়েছে। তার জন্য পেল্লায় বিল ধরিয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল। করোনা আবহে পাতার পর পাতা নালিশ জমা পড়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। দেখা গিয়েছে, চিকিৎসার খরচ ২২ লক্ষ। স্রেফ টেস্টই হয়েছে ৭ লক্ষ টাকার। যা দেখে বিস্মিত কমিশন। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, “বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষানিরীক্ষার খরচ খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পেলে শীঘ্রই পরীক্ষানিরীক্ষার খরচ বেঁধে দেওয়া হবে।”
প্যাথলজিক্যাল টেস্ট নিয়ে নির্দেশিকা তৈরি করতে সেই বিশেষ কমিটিতে ছিলেন ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায়, ডা. শুভঙ্কর চৌধুরি, ডা. রাজা রায়, ডা. শর্বরী সোয়াইকা, ডা. মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়, ডা. বিভূতি সাহা, ডা. সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডা. তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে একপ্রস্থ কথা বলেছিল কমিশন। কিন্তু তাতেও সুরাহা না হওয়ায় শুক্রবার বেঁধে দেওয়া হল সমস্ত পরীক্ষার খরচ। মোট ৫টি রেডিওলজিক্যাল এবং ১৪টি প্যাথোলজিকাল টেস্টের খরচ বেঁধে দিয়েছে কমিশন। ঠিক হয়েছে, দেড়শো বেড অথবা তার বেশি বেডের হাসপাতালগুলি এর চেয়ে বেশি টাকা নিতে পারবে না রোগীর পরিবারের কাছ থেকে। যদি কোনও হাসপাতাল বর্তমানে সংশ্লিষ্ট টেস্ট করাতে এর চেয়েও কম টাকা নিয়ে থাকেন, তবে তাকে পুরনো রেটই নিতে হবে। কমিশনের মত, রেট বেঁধে দেওয়ার মূল কারণ সাধারণ মানুষকে আর্থিকভাবে স্বস্তি দেওয়া।
করোনা আবহে একের পর এক অভিযোগ জানান দিচ্ছিল যে করোনা রোগীর পরীক্ষানিরীক্ষার খরচ ক্রমশ ‘লাগামহীন’ হয়ে পড়ছে। রোগীর পরিবার অভিযোগ করছিল, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্রেফ বিল বাড়ানোর জন্য টেস্ট করছে কিছু হাসপাতাল। এমনই এক অভিযোগে দেখা যায় শহরের এক প্যাথলজি সেন্টারে ‘লিভার ফাংশন টেস্ট’-এর খরচ ১,২৫০ টাকা। একই পরীক্ষার খরচ বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে ১৯০০ টাকা, আলিপুরের হাসপাতালে ২৬৮৩ টাকা! কিন্তু এবার আর তা হওয়ার জো নেই। কমিশন মূল্য ঠিক করে দেওয়ায় সকলকেই এক দাম নিতে হবে। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এনএবিএইচ বা ন্যাশনাল অ্যাক্রিডিয়েশন বোর্ড ফর হসপিটাল অ্যান্ড হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার্সের ছাড়পত্র পাওয়া প্রতিটি ল্যাবরেটরিকে এই রেট মেনে চলতে হবে। কোনও বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র যদি তা না মানেন তবে আগামীতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন।
পরীক্ষার নাম | কমিশনের নির্ধারিত মূল্য |
---|---|
চেস্ট এক্স-রে (পিএভিউ) | ৪০০ টাকা |
চেস্ট আলট্রাসোনোগ্রাফি | ২২০০ টাকা |
এইচআরসিটি | (৩৮০০ টাকা, ১৬ স্লাইস সিটি স্ক্যান) |
(৪৫০০ টাকা, ৬৪ স্লাইস সিটি স্ক্যান) | |
(৫২০০ টাকা, ১২৮ স্লাইস সিটি স্ক্যান) | |
সিটি পালমোনারি এঞ্জিওগ্রাফি | ১০ হাজার টাকা (৬৪ স্লাইস সিটি স্ক্যান) |
১১ হাজার টাকা (১২৮ স্লাইস অথবা তার বেশি হলে) | |
প্রোক্যালসিটোনিন | ৪ হাজার টাকা |
আইএল ৬ | ৩৫০০ টাকা |
ডি ডিমার | ২৩০০ টাকা |
ফেরিটিনিন | ১৬০০ টাকা |
সিআরপি | ১ হাজার টাকা |
সোডিয়াম টেস্ট | ৪৫০ টাকা |
পটাশিয়াম টেস্ট | ৪৫০ টাকা |
ক্লোরাইড টেস্ট | ৪৫০ টাকা |
ইলেকট্রোলাইটস | ১২০০ টাকা |
এইচসিওথ্রি | ৫০০ টাকা |
প্রথ্রম্বিন টেস্ট | ৫০০ টাকা |
এপিটিটি টেস্ট | ৬০০ টাকা |
সিকে এমবি ব্লাড টেস্ট | ১৩৫০ টাকা |
কমপ্লিট হিমোগ্রাম | ৪৫০ টাকা |
ব্লাড গ্যাস টেস্ট | ১৮০০ টাকা |