নির্বাচনী ফলাফল এবং তার পরবর্তী সময়ে দলের কর্তব্য বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সিপিএম কর্মীদের উদ্দেশে সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি বক্তৃতা করেছেন সূর্যবাবু। সেখানেই উঠে এসেছে একগুচ্ছ ভুলের স্বীকারোক্তি। তার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘বিজেমূল’ নিয়ে ভুল স্বীকার করা।
বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এবং তৃণমূলের একসঙ্গে বিরোধিতা করতে গিয়ে ‘বিজেমূল’ স্লোগান ব্যবহার করেছিল সিপিএম। সেই স্লোগান ব্যবহার করা ভুল ছিল বলে সরাসরি স্বীকার করে নিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
উল্লেখ্য, অতিরিক্ত তৃণমূল বিরোধিতা করতে গিয়ে বিধানসভা ভোটের প্রচার-পর্বে বিজেপি-বিরোধিতায় তাদের ঘাটতি ছিল বলে নির্বাচনী পর্যালোচনার খসড়া রিপোর্টে মেনে নিয়েছিল সিপিএম। এ দিনের বার্তাতেও সেই কথাই বলেন সূর্য।
সূর্যবাবু এ দিন বলেন, দেশের পরিস্থিতির নিরিখে বিজেপিই তাঁদের কাছে প্রধান শত্রু। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, তা আরও তীব্র হবে। তবে তৃণমূল ভোটে জিতে গিয়েছে বলেই তাদের সব অন্যায় শুদ্ধ হয়ে গিয়েছে, এমন নয়। তৃণমূলের অন্যায় বা জন-বিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও বিরোধী দল হিসেবে সরব হবেন তাঁরা।
এই সূত্রেই সূর্যবাবুর ব্যাখ্যা, ২০১৪ বা ২০১৬ সালে অনেক ক্ষেত্রেই কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের ‘বোঝাপড়া’ স্পষ্ট ছিল। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে পরিস্থিতির অনেক বদল হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল যখন বিজেপির সর্বাত্মক বিরোধিতায় সরব, সেই সময়ে বামেদের মঞ্চ থেকে পুরোনো ধারণার ভিত্তিতে ‘বিজেমূল’ জাতীয় আক্রমণ মানুষের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেলেনি।উল্লেখ্য, বিজেপি এবং তৃণমূলকে এক সারিতে ফেলে এক সঙ্গে আক্রমণ করে আখেরে তৃণমূলের লাভ হয়ে গিয়েছে বলে স্বীকার করেন সূর্যবাবু।
এই প্রসঙ্গে সূর্যবাবুর মত, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা এবং মানুষের নানা ক্ষোভ সামাল দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার কিছু জনমুখী প্রকল্প ঘোষণা করেছিল, শাসক দল ‘দিদিকে বলো’র মতো কিছু কর্মসূচি নিয়েছিল। এগুলো শাসক পক্ষের তরফে ‘ইতিবাচক হস্তক্ষেপ’। কিন্তু তাঁরা এই ধরনের কর্মসূচিকে ‘ছোটো’ করে দেখেছেন।
ভোটের সময়ে পায়ে আঘাত পেয়ে হুইলচেয়ারে বসা মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে বিজেপির মোকাবিলা করবেন— এই প্রশ্ন তোলাও মানুষ ভালো ভাবে নেননি বলে কবুল করে নিয়েছেন সূর্যবাবু।
তবে এই বক্তব্যের মধ্যেই সংযুক্ত মোর্চার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছেন সূর্যবাবু। তিনি বলেন, আগামী বিধানসভায় না থাকলেও প্রয়োজনে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়াবেন তাঁরা। তবে সেটা যৌথ ভাবে হবে কি না, সেটা তিনি জানেন না।
আপাতত দলের নিজস্ব এবং বামফ্রন্টের কর্মসূচি বাড়ানোই মূল লক্ষ্য সূর্যবাবুর কাছে। সংযুক্ত মোর্চা থাকবে কি না, তা তাঁদের হাতে নেই। তাঁরা জোট ভাঙতে চান না। কিন্তু মোর্চার বাকি শরিকেরা কী চাইবে, তার উপরে মোর্চার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।