সুন্দরবনের জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল। স্ত্রীর সঙ্গে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন মৎস্যজীবী। তবে কাঁকড়া ধরা শেষে আর স্ত্রীর সঙ্গে ফেরা হল না। তার আগেই ওই মৎস্যজীবীকে বাঘে টেনে নিয়ে চলে গেল গভীর জঙ্গলে। তারপর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন ওই মৎস্যজীবী। ওই মৎস্যজীবীর নাম অনেশ্বর ফকির (৫৬)। এই ঘটনায় তাঁর পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে।
আরও পড়ুন: গরম থেকে বাঁচতে খোলা জায়গায় শুয়েছিলেন মহিলা, টেনে নিয়ে গেল বাঘে
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, স্ত্রী ভগবতী ফকিরকে সঙ্গে নিয়ে অনেশ্বর প্রায়ই সুন্দরবনের জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে যেতেন। পঞ্চায়েত ভোট দিয়ে গত ৯ জুলাই অন্যান্য মৎস্যজীবীর সঙ্গে কাঁকড়া ধরার উদ্দেশ্যে নারায়ণপুরের বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন অনেশ্বর। স্ত্রীকেও তিনি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে প্রায়ই বাড়িতে ফোন করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খোঁজখবর নিতেন অনেশ্বর। রবিবার সুন্দরবনের কুস্তরি খালে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে অন্যান্য মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কাঁকড়া ধরেছিলেন তিনি। সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। তবে দক্ষিণ রায় যে ওত পেতে বসেছিল তা লক্ষ্য করেননি মৎস্যজীবীরা। পরিবারের দাবি, জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে কাঁকড়া ধরার সময় আচমকা বাঘ এসে পিছন থেকে তাঁকে আক্রমণ করে গভীর জঙ্গলে টেনে নিয়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী চেঁচামেচি শুরু করলেও কোনওভাবে স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি। অন্যান্য মৎস্যজীবীরাও সেখানে চলে আসেন। তবে এখনও পর্যন্ত ওই মৎস্যজীবীর কোনও খোঁজ মেলেনি বলে জানা গিয়েছে।
রবিবার বিকেলে এই খবর জানতে পারেন অনেশ্বরের পরিবারের বাকি সদস্যরা। ইতিমধ্যেই প্রতিবেশীরা উদ্ধারের জন্য রওনা দিয়েছেন। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর পুত্রবধূ সীতা বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এখানে থেকে প্রায়ই অনেকে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে যায়। আমার শ্বশুর এবং শাশুড়ি গত ৯ জুলাই এখান থেকে গিয়েছিলেন। গতকাল শাশুড়ি ফোন করে জানান শ্বশুরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমার স্বামী সেখানে রওনা দেয়। পরে জানতে পারি আমার শ্বশুরকে বাঘে টেনে নিয়ে গিয়েছে।’
এদিকে এই ঘটনার পরে প্রশাসনের তরফে এই মৎস্যজীবীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। খবর পাওয়ার পরে রবিবার রাতে প্রশাসনের আধিকারিকরা তাঁর বাড়িতে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। এখনও পর্যন্ত ওই মৎস্যজীবীর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে তিনি আদৌও বেঁচে আছেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হানায় মৎস্যজীবীদের মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এ নিয়ে প্রশাসনের তরফে সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হয়। বিশেষ করে মৎস্যজীবীরা যাতে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ না করেন তা নিয়ে প্রশাসনের তরফে প্রচার করা হয়ে থাকে। তারপরেও অর্থ উপার্জনের আশায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে যেতে হয় মৎস্যজীবীদের।