Homeঘুরে আসিঅ্যাডভাঞ্চারাস আমাজন – এক...

অ্যাডভাঞ্চারাস আমাজন – এক ভ্রমণ কথা

অ্যাডভাঞ্চারের আমাজনে মুক্তি পেয়ে গেছে  চাঁদের পাহাড় পার্ট টু। আমরাও তাই চলুন সেই আমাজনে একটু ঘুরেই আসি। দেখে আসি অ্যানাকন্ডার দেশটাকে। বিদেশের মাটিতে ভ্রমণ করতে হলে লাগে পাসপোর্ট ভিসা। তাই সেই সরঞ্জামের বাঁধা টপকে আমাজনে যেতে হলে আপনাকে বিস্তর টাকা খরচ করতেই হবে।

আমাজন জঙ্গলের যাওয়ার প্রধান উপায় হল ব্রাজিলের বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে আপনাকে মানস (Manaus) গিয়ে পৌঁছাতে হবে। পেরু দিয়েও আমাজনের জঙ্গলে যাওয়ার পথ রয়েছে। তবে সাধারণত মানস দিয়েই প্রচলিত ওয়ে অব এন্ট্রি। মানস শহরটি নিগ্রো ও সলিমোস নদীর মিলনস্থলেই অবস্থিত।

আমাজোনিয়ার রাষ্ট্রগুলির ক্যাপিটাল বলা চলে এই শহরটিকে। উত্তর ব্রাজিলের প্রাণকেন্দ্র এই শহরে বলতেই পারেন সারা বছরই আমাজনের জঙ্গলে আগ্রহী পিপাসু পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।

সকলে জানিয়ে রাখি এই জঙ্গলের সবটুকু দেখার ক্ষমতা মানুষের নেই কারণ আমাজন বা আমাজোনিয়া (Amazonia) পৃথিবীর বৃহত্তম ট্রপিকাল রেনফরেস্ট। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর অববাহিকাতে প্রায় ১.৭ বিলিয়ন একর আয়তনের এই অরণ্য বিস্তৃত। মূলতঃ ব্রাজিল ছাড়াও আটটি দেশের মধ্যে আমাজন রয়েছে। দেশগুলি হল -পেরু, কলোম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়না, ফ্রেঞ্চ গায়ানা এবং সুরিনাম।

অপ্রতিদ্বন্দ্বী আমাজন রেনফরেস্টে বসতি রয়েছে নানান প্রজাতির গাছ গাছালি, রংবেরঙের পাখি আর লক্ষাধিক ধরণের পোকামাকড়ের জীববৈচিত্রে একত্রিত। এখানের জল-জঙ্গলের বাসিন্দা বিভিন্ন প্রকারের চতুষ্পদ প্রাণী, বিরল প্রজাতির সরীসৃপ ও নানা রকমের মাছ।

ব্ল্যাক কাইমন বা কালো কুমীর এই জঙ্গলের বিশেষত্ব। হিংস্র প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে জাগুয়ার, কুগার ও বহু জনশ্রুত অ্যানাকন্ডা। আমাজনের জলে রয়েছে ইলেকট্রিক ইল এবং পিরানহা। বিষাক্ত পোকামাকড়দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ট্যারেন্টুলা ও ভ্যাম্পায়ার ব্যাট। এই ভ্যাম্পায়ার ব্যাট কামড়ালে জলাতঙ্ক হতে পারে। বিরল প্রজাতির গাছ গাছালি, বিভিন্ন রকমের পশু ও পাখি এবং অজস্র পোকামাকড়ের বিচরণভূমি এই আমাজন রেন ফরেস্টের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য ভীষণভাবে আকর্ষণ করে পর্যটকদের। 

আমাদের মুখোশে সভ্যতার আলো প্রবেশ করেনি আমাজনের গভীর জঙ্গলে। সেখানে কেবল নিশ্ছিদ্র অকৃত্রিম আদিমতার নিঃশ্বাস। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় শিহরিত মনপ্রাণ আর নৌকা বিহারের সময়ে ব্ল্যাক কাইমন খুবই কমন ক্লিক। চড়েও শুয়ে থাকে। জ্যান্ত কাইমনকে বিশ্বাস করে সামনে যাবেন না। এমন ঝাপটা দেবে লেজের যে জলে হাবুডুবু খেতে হবে। তাই সাবধানতা দরকার। রংবেরঙের পাখিদের ক্যানভাসে আপনি ভয় ভুলে যেতেই পারেন। স্কারলেট ম্যাকাও এক ওসাম অভিজ্ঞতা।

এদিক ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে যুগলে, কোথায় বসে মেতে আছে অলস আড্ডায়। গাছের উপরে উঠে আসা ব্যাঙ বা ট্রি ফ্রগের রঙ একেবারে গাছের পাতার মতই সবুজ। ফরেস্ট ট্রেকিং করতে হলে একজন অভিজ্ঞ গাইডের প্রয়োজন। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেকিং করতে গেলে দু’হাতে গাছপালা ঠেলে সরিয়ে পথ করে নিতে হয়, বলাই বাহুল্য নির্দিষ্ট পথ নেই। বনের পোকামাকড়ের উপদ্রব (বিশেষত মশা ও মাকড়শা) আর ভ্যাপসা গরম। তারই মধ্যে ট্রেকিং করার সময় দেখা পাবেন ম্যাজিক ট্রির। সেই গাছ সম্মোহনকারী সুগন্ধে মনে হবে জঙ্গলের মধ্যে কে যেন একমুঠো সুবাসিত আতর ছড়িয়েছে। শ্রান্ত পথিককের জন্য খেজুর গাছের পাতার মত পাতাগুলি গ্রামবাসীদের ঘর ছাইতে কাজে লাগে।

সূর্যোদয় তো অনেক দেখেছেন তবে আমাজন নদীর বুক থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আসাধারণ। সেক্ষেত্রে কাকভোরে ডিঙি-নৌকায় চেপে যেতে হবে ব্ল্যাক রিভারে। একই সঙ্গে ফেরার পথে উপভোগ করা যাবে ডলফিনদের জলকেলি। 

ধরতে পারেন ছিপ দিয়ে মাছ তবে ইকোলজিকাল ব্যালান্সের কথা মনে রেখে ফিরিয়ে দিতে হবে তা নদীবক্ষে। এখানে আদিবাসী গ্রামে ছোট ছোট পরিবার। প্রত্যেক গ্রামে জনসংখ্যা গড়ে পঞ্চাশের নীচে। পরিস্কার সুন্দর গ্রাম আর শিশুরা সঙ্গীতের ভক্ত, বাদ্যযন্ত্রেরও অনুরাগী। আদিবাসী গ্রামে আছে ডাক্তার ও শিক্ষক শিক্ষিকা। এই গ্রামগুলির শিশুরা এখনও যন্ত্রসভ্যতার পরশ পায়নি – তবু সবাই পড়াশোনা করতে ভালোবাসে। গ্রামগুলিতে রয়েছে অনাড়ম্বর অকৃত্রিম ভালোবাসা ও মানবিকতা যা বাইরের জগতে এখন দুর্লভ।

তবুও আমাজনের জঙ্গলে এখন প্রধান সমস্যা ডিফরেস্টেশন। অন্যতম কারণ বনে আগুন লেগে যায় ও সভ্যতার বিস্তারে মানুষের লোভ। কাঠপাচারকারীদের নির্মমতা। গত কুড়ি বছরে কয়েক লক্ষ কিলোমিটার অরণ্য মুছে দিয়ে তৈরি হয়েছে গবাদি পশুর চারণভূমি। পরিবেশবিদদের মতে এই জঙ্গলের আয়তন কমতে থাকায় বাড়ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং

ব্রাজিলের সাও পাওলো থেকে মানসে এসে পৌঁছালাম। এখানে দিনের বেলাতেও আঁধারের মতো পরিবেশ। মাটিতে ঘন গুল্মের চাদর। আকাশছোঁয়া প্রাচীন গাছগুলো মাথা উঁচু করেই দেখতে হয়। বিমানবন্দরে এজেন্টের মারফত কথাবার্তা পরে গাইড সমেত গেস্ট হাউসের গাড়ি আমাদের নিতে এল। গাড়ির পেছনটা লরির মতো খোলা, ওখানে সব মালপত্র রাখা হল। গাইড জানিয়ে দিল মানসে ১৮ লক্ষ লোকের বসবাস। আমাজনের জঙ্গলের বেশিরভাগটাই মানসে। আমাজনের দুটো অংশ আপার আমাজন, লোয়ার আমাজন। এখানে সামসঙ, ইয়াহামা ইত্যাদি অনেক বড় বড় কোম্পানির ফ্যাকট্রি রয়েছে। ব্রাজিলের প্রথম ইউনির্ভাসিটি ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দে মানসেই স্থাপিত হয়।

সলোমন এবং নিগ্রো নদীর কথা আগেই বলেছিলাম, এবার নিগ্রো নদীর তীরে এসে গাড়িটা দাঁড়াল – বার্জে করে গাড়ি সমেত ওপাড়ে যেতে হবে। একটুক্ষণ অপেক্ষা, তারপর গাড়ি থেকে নেমে বার্জে উঠলাম। গাড়িটাও আলাদা উঠল। বার্জটা চলতে লাগল – কী বিশাল নদী – আমাদের গঙ্গা বা পদ্মা নদীর নস্টাল মনে ধরা দিতে লাগল। এই নদী পেরুর বরফগলা জলে পুষ্ট। অন্যপাড়ে পৌঁছে আবার গাড়িতে উঠে পথ চলা। প্রথমে বেশ বড় বড় বর্দ্ধিষ্ণু গ্রাম – ধীরে ধীরে ছোট গ্রাম – এইভাবে অনেকটা চলার পর গাড়ি এসে থামলো জলের ধারে – তখন আঁধার নেমেছে। সেখান থেকে সরু লম্বা ধরনের নৌকো  করে অতিথিশালায় পৌঁছালাম। বেশ ভয়ের বিষয়টা ছিল। মালপত্রগুলোও নৌকায় মাঝিরা এনে তুলল। জলের মধ্যে অজানা পথেই  বাসস্থানে পৌঁছাতে হবে। এই অভিজ্ঞতা দারুণ ও ভয়ঙ্কর।

অতিথিশালার নাম পাউসাদা – পাউসাদা মানে হল গেস্ট হাউস। সিঁড়ি দিয়ে বেশ খানিকটা উঠেই ডাইনিং কাম রিশেপশন। যাত্রীদেরকে ফলের রস দিয়ে স্বাগত জানালো। থাকার হোটেলটা বেশ অন্যরকম। পাহাড়ি পথের ঢালে পাথর বাঁধানো রাস্তায় ধাপে ধাপে ওঠানামা করতে হয়। সিনিক বিউটি রয়েছে। ঘরের ব্যবস্থাও মন্দ নয় তবে মশার আর গরম একটু কষ্ট দেবে। তবে আধুনিক ব্যবস্থার এয়ার কন্ডিশন রয়েছে। ডাইনিং-এ রাতের খাবার খেতে খেতেই নানারকম পাখির ডাক শুনে বেশ ভয় লাগল। ব্ল্যাক প্যান্থার আসবে না তো!

পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্টের পরে আমাজনের আপার পার্টে চললুম ট্রেকিং করতে হবে। নো গাড়ি, নৌকো করেই জঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা হল শুরু। খানিকটা চলার পর নৌকো স্টপ – এবার এগারো নম্বর বাস। নৌকো থেকে নেমে উপরে উঠতে বেশ অসুবিধাই হয়েছিল। এত ঢালু যে পা পিছলে গেল।

আমাদের গাইড এবং নৌকাচালক দু’জনেই নির্ভরযোগ্য। জঙ্গলের পথে অসাধারণ সেই অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে আড়াই ঘন্টা হেঁটেও অসুবিধা হল না। বড় বড় গাছ পড়ে রয়েছে, তা ডিঙিয়ে ঝরা পাতার ওপর দিয়ে শব্দ করে যেতে হয়। মাথা নীচু করে হেলে থাকা গাছ পেরিয়ে আসতে হয়। তবে কাঁটা গাছ সামলে হাঁটতে হবে। না হলেই মুশকিল। দেখলাম গাইড মাটির ওপর সুপারির খোলার মত পাতা উল্টে কী সব খুঁজছে। একটু পরেই পাতার নীচ থেকে বেরোল কালো মাকড়সা (টেরান্টুলা)।

অজস্র গাছ। সেই সব গাছ দেখিয়ে বোঝালেন কোনটা কোন প্রজাতির। একটা জায়গা হাঁটতে গিয়ে পিঁপড়ে ছেঁকে ধরলো। কামড়ের প্রচন্ড জ্বালা – তবু পিপীলিকা বাহিনীর কামড়ানোর জ্বালা অতিক্রম করতে পারলেই গাইড ভদ্রলোক  পিঁপড়ের সারিতে হাত দিয়ে আমাদের শোঁকালেন –  সুন্দর পারফিউমের গন্ধ। একটা গাছের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন সেটা নাকি ম্যাজিক ট্রি। আমি কৌতুহলী হলাম? তখন গাইড গাছের একটা ডাল কেটে খুব জোরে ঝাঁকালেন। আর কী আশ্চর্য ঐ ডালটার দু’পাশ থেকে লম্বা লম্বা খেজুর পাতার মত পাতা বেরিয়ে এল। এই পাতাকেই জঙ্গলের অধিবাসীরা ঘরের চাল হিসাবে ব্যবহার করেন। ঘন জঙ্গলে ঘুরে মনে হচ্ছিল আমিও আজ শংকর। আমিও চাঁদের পাহাড়।

দুপুরে খেয়ে রেস্ট নিয়ে বিকেলবেলা জঙ্গলের লোয়ার পার্ট-এ ঘোরাঘুরি। তাই অ্যারিউ নদীতে নৌকা ভ্রমণ চলল। জলে-জঙ্গলে – মানে জলের মাঝেই বিস্তীর্ণ জঙ্গল। কল্পনাতীত জলের ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বিশাল বিশাল গাছ – শিকড় বা কান্ডের অর্দ্ধেকটা রয়েছে মাটির নীচে অথবা জলের তলায়। নৌকো করে যেতে যেতে রংবেরঙের অজানা পাখিরা সব ঘরে ফিরছে। ছোট্ট ছোট্ট ব্রাজিলিয়ান বাঁদর এতো মজাদার নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলাম।

আগেই নদীর কাইমনের কথা বলেছি। সেই জন্তুটাকে জলের মধ্যে চেপে ধরে গাইড নৌকায় তুললেন। ঝাপটা মারার আগেই ক্লিক করে ছেড়ে দেওয়া হল। আঁধার নামল বনে। সূর্য লালের আভা। তার মধ্যেই পশুপাখি খোঁজার অ্যাডভেঞ্চার। গাছের উপরের দিকে পেঁচার চোখ অন্ধকারে জ্বলছে। দুটো খুব বড় স্কারলেট ম্যাকাও দেখলাম। গাইড জানালেন, এই পাখিগুলো সবসময় জোড়ায় জোড়ায় থাকে। একটা মরে গেলে অন্যটি আত্মহত্যা করে। অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, পাখি আবার কীভাবে আত্মহত্যা করে? গাইড বললেন, সুদূর আকাশে উড়ে গিয়ে ডানা বন্ধ করে দেয় আর মাটিতে পড়ে মরে যায়।

সত্যিই বুঝলাম, আমি আর কতটা ভালবাসতে পেরেছি। কিছুই হল না এই জীবনে। অন্ধকারের শব্দ শুনতে শুনতে ফিরলাম। রোমাঞ্চকর অনুভূতির এক পরশ স্পর্শ করল আজ। সব পেয়েছির দেশে অদ্ভুত এক ভালোলাগার রেশ সারা মন জুড়ে রইল।

তারপরের দিন ভোরে গাইড আমাদের আমাজনে সূর্যোদয় দেখাতে নিয়ে চললেন, ভোর পাঁচটায়। অনেকগুলো ছোট  নদী পেরিয়ে একঘন্টা নৌকায় চলার পর গিয়ে পড়লাম ব্ল্যাক রিভার-এ। এখানেই অপেক্ষা সূর্য ওঠার।

সারা আকাশে রংবেরঙের নানা আবির ছড়িয়ে পড়ছে। অপলকে চেয়ে থাকা এক মুগ্ধকর দৃশ্য। আস্তে আস্তে জলের মধ্যে দিয়ে অপরূপ দৃশ্য। গেয়ে উঠলাম গান…আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে। ফেরার পথে সকালের আলোতে ডলফিনের লুকোচুরি খেলার অভিজ্ঞতা হবে ভাবতেও পারিনি। থাকার হাটে ফিরে ব্রেকফাস্ট করে আবার বেরিয়ে পড়লাম জলে। এ যে এক বিশাল জঙ্গল, সে যে শেষ হয় না। অনেকটা চলার পরে মোটা একটা গাছের সামনে নৌকো দাঁড়ালো। দুশো বছরের পুরনো গাছ তাকে বলা হয় Samauma (Mother of the Amazon)। ২৫ জন লোক হাতে হাত মিলিয়ে তবে ধরতে পারবে পুরো গাছটাকে, বাপরে!

জলেই ভেসে যেতে দেখলাম একটা তিনতলা বাড়ি জলের উপরে। ১৮৮৯ – ১৮৯১ ইংরেজরা এটি তৈরি করেছিল। তারা এখানে এসে থাকতো রবার নেওয়ার জন্য। এইভাবে আরও কিছুক্ষণ জলে-জঙ্গলে ঘুরে ফিরে এলাম অতিথিশালায়।

বিকেলে মাছুড়ে হলাম। মানে মাছ ধরলাম। ঘন জঙ্গলে গাছগুলো জলের ওপর এমনভাবে রয়েছে আমাদের নৌকার ওপর প্রায় শুয়ে পড়তে হচ্ছে। মাছ ধরার নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে সবাই ছিপ ফেলে বসে গেলাম। গাইড এবং নৌকাচালক ছিপে চার লাগিয়ে দিচ্ছিলেন। সবাই-ই একটা দুটো করে মাছ ধরে ফেললাম।

চাঁদা মাছের মত দেখতে। মাছ হাতে নিয়ে আমাদের গাইড অনেক কিছু বোঝালেন। আগেই বলেছি জীববৈচিত্র রক্ষা করতে হবে, তাই মাছ আবার জলে ছেড়ে দেওয়া হল। মাছ ধরা শেষ করে আমাদের আদিবাসী গ্রামে যেতে হল। একটা বাড়িতে ঢুকে দেখলাম ফ্রিজ টিভি সবই রয়েছে। এদের পেশা হল মাছধরা আর চাষবাস। তবে এই গ্রামটা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই উন্নত। আসলে মানসের এক প্রত্যন্ত গ্রামে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া গেছে। তাই এখন সব দ্বীপেই আলোর সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে।

পরের দিন আদিবাসী গ্রাম দেখতে গেলাম। রয়েছে ১৪টি পরিবার – জনসংখ্যা মাত্র ৪৮। এখানের প্রধান একজন মহিলা, তিনি একদিকে চিকিৎসক অন্যদিকে শিক্ষিকা। এঁর কথাই গ্রামের সবাই মেনে চলেন। মহিলা নিজে নানা রকম ওষুধ তৈরি করেন। ঘরে নানারকম শিকড়বাকড়, হাড়গোড় রয়েছে। সর্বক্ষণ উনুন জ্বলছে। শহরের মানুষও এখান থেকে ওষুধ নিয়ে যান। এখানকার ছেলেমেয়েরা আমাদের নাচগান করে দেখাল।

সঙ্গীত এদের রক্তে – কতটুকু বাচ্চা সেও ড্রাম বাজাচ্ছে। এখানে অনেকরকমের বাদ্যযন্ত্র দেখলাম। পড়াশোনা করার জন্য আলাদা জায়গা। সবাই লেখাপড়া করে। গ্রামের প্রধান মহিলাই এদের পড়াশোনা করান।

লাঞ্চের পরে ব্যাক প্যাক করে বেরিয়ে পড়লাম। ঘাটে পৌঁছে ফেরী পার হয়ে চললাম আমাজনের সঙ্গম দেখতে। যেখানে মাছ বেঁচাকেনা হয় সেই ঘাটে এসে আমাদের গাড়ি দাঁড়ালো। ঘাটের সিঁড়ি একদম ভাঙাচোরা। সেখান থেকেই স্পীড বোটে করে চললাম সঙ্গমস্থলে। নদী না সমুদ্র বুঝতেই পারছিলাম না। অনেকটা আসার পর অবাক হয়ে কালো জল – আর অন্যদিকে হলুদ জল পাশাপাশি দেখলাম। আসলে দুটো জলের তাপের তারতম্য থাকায় একে অপরের সাথে মিশছে না।

গাইড বললেন, আমাজন পর্বতের বরফগলা জলে উৎপন্ন হয়ে অনেক পথ পেরিয়ে অনেক মাটি খনিজ পদার্থ নিয়ে চলে আসছে তাই এই জল ঘোলা আর ভারি। অন্যদিকে ব্ল্যাক রিভার সমতলেই বৃষ্টির জলে সৃষ্ট – তাই হালকা আর অপেক্ষাকৃত গরম। এই জঙ্গলের অনেক কিছু দেখলাম যদিও এই কয়দিনের মধ্যে বেশিটাই অদেখা। আমি পিরানহা দেখলাম, আনাকন্ডাও দেখলাম। সব স্মৃতিরা রয়ে যাবে। একটা মানুষ পায়ের রক্ত মাখানো কাপড় জড়িয়ে বসে থাকে আর তাকে জড়িয়ে ধরে আনাকন্ডা। সেটা আমরা দেখি, ছবি তুলি, মজা পাই। আমি এই মুখোশের সভ্যতা চাই না। নিবিড় সবুজ অরণ্যের আদিম গন্ধ অচেনা মানুষের থাকুক পশুপাখির সাথে।  আমি তো স্কাইস্ক্রাপারের কেরিয়ারে সুখী। এক জন্মে অরণ্যদেবতাকে আর কতটাই বা চিনলাম…তবু আশা থাকল ফিরব আমি কোনও জন্মে অরণ্য হয়ে। কী হল পুরোটা শেষ না করেই ভিসা অফিসে যাচ্ছেন নাকি…নীচের ভিডিওটা একটু দেখে যান…প্লিজ… 

- A word from our sponsors -

spot_img

Most Popular

আরও খবর...

জুলাইয়ের মধ্যে প্রথম এলসিএ মার্ক-১এ যুদ্ধবিমান পাবে ভারতীয় বায়ুসেনা, আরও অর্ডার পাচ্ছে হ্যাল

নয়াদিল্লি: ভারতীয় বায়ুসেনা এই বছরের জুলাইয়ের মধ্যে দেশের প্রথম এলসিএ...

মুম্বই হোর্ডিং বিপর্যয়: অবৈধ বিলবোর্ডের মালিক উদয়পুরে গ্রেফতার

ডেস্ক: মুম্বইয়ের অবৈধ বিলবোর্ডের মালিক ভবেশ ভিড়ে ধরা পড়লেন।...

Adhir Chowdhury meets Mukul Roy: দাদা কেমন আছেন? মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করলেন অধীর চৌধুরী

মুকুল রায়কে দেখতে কাঁচরাপাড়ার বাড়িতে হাজির কংগ্রেস নেতা অধীর...

- A word from our sponsors -

spot_img

সব খবর...

জুলাইয়ের মধ্যে প্রথম এলসিএ মার্ক-১এ যুদ্ধবিমান পাবে ভারতীয় বায়ুসেনা, আরও অর্ডার পাচ্ছে হ্যাল

নয়াদিল্লি: ভারতীয় বায়ুসেনা এই বছরের জুলাইয়ের মধ্যে দেশের প্রথম এলসিএ মার্ক ১এ যুদ্ধবিমান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে এই বিমানটি হস্তান্তরের আশা করা হয়েছিল, কিন্তু প্রযুক্তিগত কারণে এটি কিছুটা বিলম্বিত হয়ে যায়। জুলাইয়ের মধ্যে হস্তান্তরের আশা ভারতীয় বায়ুসেনা এবং পাবলিক সেক্টর...

মুম্বই হোর্ডিং বিপর্যয়: অবৈধ বিলবোর্ডের মালিক উদয়পুরে গ্রেফতার

ডেস্ক: মুম্বইয়ের অবৈধ বিলবোর্ডের মালিক ভবেশ ভিড়ে ধরা পড়লেন। তাঁরই কোম্পানি ইগো মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের বিশাল অবৈধ বিলবোর্ড ভেঙে পড়ে মুম্বইয়ের প্রাণ হারান ১৬ জন। মুম্বই পুলিশের অপরাধ দমন শাখা বৃহস্পতিবার উদয়পুরে ভবেশ ভিড়েকে গ্রেফতার করে। তাঁকে মুম্বই নিয়ে আসা হচ্ছে। গত সোমবার প্রবল ঝড়ে ঘাটকোপারে...

Adhir Chowdhury meets Mukul Roy: দাদা কেমন আছেন? মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করলেন অধীর চৌধুরী

মুকুল রায়কে দেখতে কাঁচরাপাড়ার বাড়িতে হাজির কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। বৃহস্পতিবার অধীর চৌধুরী গিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের সিপিএম প্রার্থী দেবদূত ঘোষের প্রচারে। আর সেখানে এসে একবার কাঁচরাপাড়ায় মুকুল রায়ের বাড়িতে ঘুরে গেলেন অধীর। তবে সূত্রের খবর এদিন এটা ছিল নেহাতই বর্ষীয়ান নেতার শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেওয়ার জন্য...

Israel vs Palestine conflict: ফিলিস্তিন পাবে বড় মর্যাদা, স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে তৎপর আরব বিশ্ব! ইসরায়েলের সর্বনাশ

  Israel vs Palestine conflict: ফিলিস্তিনের ভাগ্য ফিরতে হয়ত আর বেশি দেরি নেই। আরব দেশগুলো জোট বাঁধছে ফিলিস্তিনের হয়ে। গাজা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল হারাতে চলেছে বড় সাপোর্ট। একদিকে গাজায় যেমন ফিলিস্তিনিরা তাদের সর্বস্ব হারাচ্ছে, আবার ঘুরপথে এই গাজাই ফিলিস্তিনকে এনে দিতে পারে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা। কথাটা...

Malda News: খুব সাবধান! বাজ পড়ে ১১জনের মৃত্যু, ভয়াবহ কাণ্ড মালদায়, ঘরে ঘরে কান্নার রোল!

একজন দুজন নয়, একেবারে ১১জনের মৃত্যু বজ্রপাতে। মালদায় একেবারে মর্মান্তিক ঘটনা। একের পর এক ব্যক্তির মৃত্যু বজ্রাঘাতে।  বৃহস্পতিবার দুপুরে আচমকাই ঝড় বৃষ্টি শুরু হয় মালদায়। এদিকে মালদা মানেই আমের জেলা। আর ঝড় বৃষ্টি মানেই আম পড়ে টপাটপ।সেই ঝড় বৃষ্টির মধ্য়েই আম কুড়োতে গিয়েছিল কয়েকজন। কিন্তু...

Narendrapur Ramakrishna Mission in HS: স্ক্রুটিনির পরে উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় নরেন্দ্রপুরের আরও ৪ জন, সবমিলিয়ে ১০!

এমনিতেই দুর্দান্ত রেজাল্ট হয়েছিল। স্ক্রুটিনির রেজাল্টের পরে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকায় জায়গা করে নিলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের আরও চারজন পড়ুয়া। প্রাথমিকভাবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকায় ছয়জন ছিলেন। স্ক্রুনিটির পরে মেধাতালিকায় মোট ১০ জন জায়গা করে নিলেন। একজন দ্বিতীয় হয়েছেন। ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছেন একজন। অষ্টম স্থানে...

Matua infighting: শান্তনুর বিরুদ্ধে অনশনে অসুস্থ মমতাবালার মেয়ে, শুনছেন না ডাক্তারদের কথা

বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে পৈতৃক ভিটেবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করার অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। এরপরেই ভিটে বাড়ি ফেরত পেতে সোমবার সকাল থেকে শান্তনুর বিরুদ্ধে প্রয়াত বীণাপাণি দেবীর ঘরের বাইরে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশন শুরু করেছেন মমতাবালা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা...

BJP leader beaten: চলন্ত বাইক থেকে ফেলে শুভেন্দুকে মারধর, কাঠগড়ায় ঘাসফুল, ‘এসব নাটক’ দাবি TMC-র

লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই কেশপুরে আবারও আক্রান্ত বিজেপি। এবার বিজেপির মণ্ডল সভাপতিকে চলন্ত বাইক থেকে ফেলে ব্যাপক মারধর করার অভিযোগ উঠল। ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন মণ্ডল সভাপতি শুভেন্দু সামন্ত। অভিযোগ, মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখানোর পাশাপাশি বাঁশ, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। গুরুতর আহত...

Prostate operation in five minutes: জলীয় বাষ্পের সাহায্যে ৫ মিনিটে প্রস্টেটের অপারেশন, নজির গড়ল NRS

কোনওরকমের কাটাছেঁড়া ছাড়াই একেবারে অভিনব পদ্ধতিতে প্রস্টেটের অস্ত্রোপচার করে নজির গড়ল কলকাতার এনআরএস হাসপাতাল। আর এই অস্ত্রোপচার হয়েছে মাত্র ৫ মিনিটে। এই সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার করা হয়েছে জলীয় বাষ্প বা স্টিমের সাহায্যে। চিকিৎসকদের পরিভাষায় এই পদ্ধতির নাম হল ‘ওয়াটার ভেপার থেরাপি’। হাসপাতালের দাবি, দেশের সরকারি...

Attack on police: বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে বিবাদ, মেটাতে গিয়ে আক্রান্ত ৭ পুলিশকর্মী, ঝরল রক্ত

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। তাই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে চলছিল বিবাদ। আর সেই বিবাদ মেটাতে গিয়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল এলাকা। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের রোষের মুখে পড়ল পুলিশ। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে বাঁশ, লাঠি, ইট-পাথর দিয়ে হামলা চালাল। তাতে ঝরল রক্ত। ঘটনায় ৭ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন।...

Israel-Hamas War: হামাসকে সুস্থ করছে তুরস্ক! লণ্ডভণ্ড গাজা, ভয় পাচ্ছে জাতিসংঘ

  Israel-Hamas War: ফিলিস্তিনিদের পাশে শক্ত হাতে দাঁড়াল তুরস্ক। তুরস্কের মাটিতে চিকিৎসা চলছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের। যাকে কেন্দ্র করে, গোটা বিশ্বজুড়ে হৈচৈ। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যা বললেন শুনে অবাক হয়ে যাবেন। তাহলে কি, তুরস্কেই গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে আহত হামাস সেনারা? তলে তলে হামাসের শক্তি জোগাচ্ছে তুরস্ক? তুরস্ক...

দেবাশিস সেনের বিরুদ্ধে স্বজন পোষণের অভিযোগ, মামলার পর্যবেক্ষণে যা বলল হাইকোর্ট

সরকারি জায়গা দেওয়া নিয়ে স্বজন পোষনের অভিযোগ উঠল নিউটাউন কলকাতা ডেভলপমেন্ট অথরিটির (এনকেডিএ) প্রাক্তন চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের বিরুদ্ধে। এই মামলার অভিযোগ শুনে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম মন্তব্য করেন, 'অভিযোগ ২০ শতাংশ সত্যি হলে তা যথেষ্ট গুরুতর।'মামলাকারীর অভিযোগ, মেলা ও দুর্গাপুজো করার জন্য বিধিভঙ্গ করে...