India-US relations: ভারত ভুগছে বিদেশি আতঙ্কে! যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্য ঘিরে তুমুল বিতর্ক। ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের গভীর বন্ধুত্ব, তাহলে কি এবার তিক্ততায় পরিণত হবে? হঠাৎ ভারতের বিরুদ্ধে খারাপ মন্তব্য কেন করছেন জো বাইডেন? নির্বাচনে জিততে গিয়ে, বন্ধুকেও শত্রু বানিয়ে দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারতও চুপ করে বসে নেই, নয়া দিল্লি কড়া জবাব দিল ওয়াশিংটনকে। এবার সম্পর্কের পরিণতি কোনদিকে এগোবে? ভারত রাশিয়ার সাথে জোট বাঁধলে, বিপদে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের আবহে সবটা সামলাতে নাজেহাল জো বাইডেন। এখন সাফাইয়ের মলম লাগাচ্ছে হোয়াইট হাউস। আদৌ কাজে আসবে তো?
আশঙ্কাই কি তবে সত্যি হল? এতদিন ধরে জোর চর্চা চলছিল, হয়ত যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এবার তা যেন ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে বড় কথা বলে ফেললেন জো বাইডেন। যার ফলে তিক্ততা বাড়তে বাড়ে যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের মধ্যে। ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের কথা চুপ করে বসে হজম করছে, এমনটাও নয়। ইতিমধ্যেই পাল্টা মোক্ষম জবাব দিয়ে দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এর আগেও দুই দেশের মধ্যে বিতর্কিত কথা নিয়ে নানান সমস্যা হয়েছে। যদিও কূটনৈতিক সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ছাপ পড়েনি। কিন্তু দিনের পর দিন এমনটা হতে থাকলে, ভবিষ্যতে সম্পর্কের ফাটল ধরতেই পারে। ভারতে এখন নির্বাচন চলছে। সেই আবহে সম্প্রতি ভারতে কার্যকর হয়েছে সিএএ আইন। সেই অস্ত্রকে কাজে লাগিয়ে শাসক দল নেমেছে ভোটের ময়দানে। ভারতের এই সিএএ আইন নিয়ে বিশ্বজুড়ে কিন্তু কম চর্চা হচ্ছে না। সম্প্রতি সিএএ নিয়েও কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। আচ্ছা, আপনার কি মনে হয়? এরপরেও ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ঠিক আগের মতই থাকবে? এর আগেও কিন্তু কথার জালে জড়িয়েছে ওয়াশিংটন। তখনো ভারত জবাব দিতে ছাড়েনি। কূটনৈতিক সম্পর্ক বাঁচাতে এবার যুক্তরাষ্ট্র যে সাফাই দিচ্ছে , সেই সাফাইতে কি আদৌ মলম লাগবে?
আসলে কি ঘটনাটা হয়েছে শুনুন। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে, জো বাইডেন বলেন , ভারত নাকি জেনোফোবিয়া বা বিদেশি আতঙ্কে ভুগছে। জো বাইডেনের কথায়, কেন চীন ক্রমশ অর্থনৈতিকভাবে স্থবির হয়ে পড়ছে? কেনই বা সমস্যায় পড়ছে জাপান? কেনই বা একই অবস্থায় রয়েছে রাশিয়া আর ভারত? কারণ তারা সবাই জেনফোবিক অর্থাৎ তারা অভিবাসীদের নাকি চায় না। অপরদিকে এই অভিবাসীরা শক্তিশালী করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রকে। এতগুলো প্রশ্নের পাশাপাশি বাইডেন কথা বলেছেন ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়েও।
বাইডেনের এই দাবি সম্পূর্ণ নাকোচ করে দিয়েছেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বলেন, ভারত কখনোই এমনটা নয়, বরং ভারত সব ধারার মানুষকে স্বাগত জানায়। এই প্রসঙ্গে মন্তব্যের পাল্টা দিতে গিয়ে জয়শঙ্কর সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিবরণ দেন। সিএএ কার্যকরের মাধ্যমে কিভাবে ভারতের সব ধরনের মানুষকে স্বাগত জানানো হচ্ছে সেটাও উল্লেখ করেন। জয়শঙ্করের কথায়, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এনেছেন নরেন্দ্র মোদী। এটাই প্রদর্শন করে যে, ভারত ঠিক কতটা মুক্তমনা। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে,।ভারত সব সময় সকল ধারা, সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য দরজা খোলা রেখেছে। যারা বিপদে পড়ে ভারতে আসার প্রয়োজন অনুভব করেন, তাদের ভারত সব সময় স্বাগত জানায়। ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বাইডেনের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে, জয়শঙ্কর বলেন, জেনে রাখুন ভারতের অর্থনীতি কিন্তু মোটেই নড়বড়ে নয়।
কিন্তু হঠাৎ বাইডেন এমন কথা বলতে গেলেন কেন? নিশ্চয়ই তো কোনো কারণ রয়েছে। নাকি চাপা রাগের বহিঃপ্রকাশ? আসলে চলতি বছরই রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যেখানে লড়াইয়ে শামিল হবেন বাইডেন। শুরু হয়ে গিয়েছে তুমুল প্রস্তুতি। প্রত্যেক দেশের নির্বাচনের আগে লড়াইয়ের ময়দানে একটা করে হট টপিক থাকে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভোট প্রক্রিয়ায় অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে প্রবাসীদের বিষয়টি। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সেদেশে শুরু হয়ে গিয়েছে মেরুকরণ। বাইডেন প্রবাসীদের পক্ষে এবং এটাকেই এখন বড় অস্ত্র বলে মনে করছেন। অপরদিকে আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প, অনেকটা প্রবাসী বিরোধী। তাই প্রবাসীদের দিকে একটু ঝোল টেনে কথা বলতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান উন্নতির অন্যতম কারণ প্রবাসী সহ এমন বহু মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক জৌলুসের অন্যতম কারণই হল, বিদেশিদের স্বাগত জানানো। যা উদার মানসিকতার নিদর্শন। আর এখানেই প্রবাসীদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তুলনা করেন অন্যান্য কয়েকটা দেশের সঙ্গে। তোপ দাগেন ভারতের বিরুদ্ধেও। তবে রাজনৈতিক অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে, বন্ধু রাষ্ট্র ভারত এবং জাপান সম্পর্কে যে নেতিবাচক মন্তব্য বাইডেনের মুখ ফসকে বেরিয়ে এসেছে তাকে কেন্দ্র করে এখন বিতর্কের ঝড়। নিজের দেশকে বড় করে দেখাতে গিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রকে ছোট করা কখনোই উচিত নয় বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। যদিও এই ঘটনার পর ইতিমধ্যে সাফাই গাইতে শুরু করে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন প্রেসিডেন্টের হয়ে সাফাইতে, হোয়াইট হাউস মুখপাত্র বলেন, মিত্র রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে বাইডেন সম্মান করেন। বাইডেন আসলে সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলতে গিয়ে, একটি মন্তব্য করেছিলেন। বর্তমানে ভারত আর জাপানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। বিগত তিন বছরে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।
দেখুন, এই প্রথম নয় কিন্তু, এর আগেও ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা আবছা কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল। মোদী জামানায় যুক্তরাষ্ট্রের পরম বন্ধু হয়ে উঠেছে ভারত। আবার ওদিকে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ভারতের এই দুই বন্ধু রাষ্ট্র একে অপরের চরম বিরোধী। তবে এখানে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট। জার্মানির মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে, এই বহুমুখী কূটনীতি নিয়ে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে নয়া দিল্লিকে। যদিও তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়শঙ্করের জবাব ছিল, ভারতের এই দক্ষতার তো প্রশংসা করা উচিত। বরং একমুখী সম্পর্ক রাখা অত্যন্ত কঠিন। তবে ভারত ব্যালান্স করলেও,।এই ব্যালেন্স এর নীতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কতটা পছন্দের এটা নিয়ে ভূ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সম্প্রতি সিএএ কার্যকর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগকে ভালো চোখে দেখেনি ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই আইন নিয়ে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে, সেটা নিয়ে ওয়াশিংটন গভীরভাবে চিন্তিত। ভারতে কিভাবে এই আইন কার্যকর হবে, সেদিকে কড়া নজর রাখছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যে পাল্টা ভারত জানিয়ে দিয়েছে, ভারতের নিজস্ব নীতি আছে। সেই নীতি বলে, দেশভাগের সময় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের সাহায্য করা। ধর্ম জাতি পরিচয় সামাজিকতার ভিত্তিতে দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন বহু দেশেই রয়েছে। মূলত বিশ্বযুদ্ধের পর এইরকম আইনের ব্যবহার অনেকটা বেড়েছে। তাহলে ভারতের সিএএ নিয়ে কেন প্রশ্ন তুলছে পশ্চিমা দুনিয়া? এভাবেই তোপ দেগেছিলেন জয়শঙ্কর।
গত বছরই কিন্তু কানাডার সঙ্গে ভারতের বিবাদের কিছুটা রেশ পড়েছিল ভারত মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। সেই সময় দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি এক বার্তার মাধ্যমে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক নাকি বেশ খারাপ পর্যায়ে চলে যেতে পারে। যদিও বিষয়টা নিয়ে পরবর্তীকালে খুব একটা জলঘোলা হয়নি। ওয়াশিংটন নয়া দিল্লির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু এখন পুরো বিষয়টাই যেন চলছে পুরো উপর উপর দিয়ে। ধীরে ধীরে ফাটল ধরছে দুই দেশের সম্পর্কে। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। আশঙ্কা, ছোট ছোট ক্ষোভগুলো পুঞ্জিভূত হয়ে একদিন বড় আকারে বিস্ফোরণ ঘটাবে না তো?
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়