Homeব্লগবাজিতুলসী মালা ...

তুলসী মালা ~ নীল অভিজিৎ

তুলসী মালা

-নীল অভিজিৎ-

[এই ছোট্ট গল্পটির সকল চরিত্রই কিছু বাস্তব ও কিছু কাল্পনিক এবং সামাজিক কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার আধারে লেখা]

আজ অবসর হোলাম, সরকারি বাসস্থান ছেড়ে দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই রেলওয়ে ষ্টেশনে বিকেল বেলা বসে কলকাতা গামী মেলের অপেক্ষায়। ভাবছিলাম, নিজের শহরে ফিরে যাচ্ছি, দীর্ঘ দিন নিজের বাড়ি ঘর ছেড়ে চাকরি সূত্রে বাইরে বাইরে কাটালাম পরকে আপন করলাম আর অবসরের পরে আপনকে আরও আপন করে পাওয়ার আশা, সত্যি কি তা সম্ভব হবে? অনেক প্রশ্ন এসে উঁকি দিচ্ছিল আমার মনে। যদিও গত মাসে আমার ছত্রিশ বছরের কর্ম জীবনের প্রকৃত অবসর হয়েছিল, শুধু এক মাস সময় নিয়েছি, নিজের সব কিছু গোছাতে, আজ মনে হোল বিয়ে বাড়ির বাসি বিয়ে ভাঙ্গা পর্বের কন্যা বিদায় যেন, আমাকে ছাড়তে অফিসের অনেক সহকর্মীরা রেলওয়ে ষ্টেশন এসেছে, কেউ কেউ হাতে ধরে এনেছে ফুলের তোড়া, যেন বিদায় জানানোর অপর নাম এক গুচ্ছ ফুল, ঠিক তেমনই হুইসেল দিয়ে প্লাটফর্ম ছেড়ে চলে যাওয়াকে মনে হোল, আমার হয়ে ট্রেনটা বলে দিল, চললাম তোমাদের ঘনিষ্ঠতার বেড়াজাল টোপকে। একে বারে ঝাড়া-হাত-পা আমার, মেয়ের পড়াশোনার জন্য পরিবারকে দুবছর আগেই খড়গপুরে পাঠিয়ে দিয়েছি, একলা সময় কাটানো বড়ই মুশকিল, এসি কামরায় কাঁচের জানলা দিয়ে দূরে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না, জামার বুক পকেট থেকে স্মার্ট ফোনটা বের করে রিসিভ মেসেজ গুলোকে দেখতে লাগলাম

কিছুক্ষণ পরে খেয়াল করলাম মাঝ বয়সী এক ভদ্রমহিলা আমার সামনে দাঁড়িয়ে, বছর পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে, বেশ বোঝা যায় অযত্ন সুন্দর চেহারায় এক অভিজাত পরিবারে ছাপ, সে জন্য স্বাস্থ্য বা সৌন্দর্য রক্ষার বিশেষ কোন যত্নের প্রয়োজন হয় না,  মৃদু হাসছে আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই বলে দিল, আমি এখানে বসতে পারি? একটু ইতস্তত হয়ে বললাম বসুন, অনেক জায়গা থাকা স্বত্তেও ভদ্রমহিলা প্রায় আমার পাশ ঘেঁষেই বসলো, বেশ পারফিউম মার্কা মেয়েলি একটা মিশ্র গন্ধ নাকে ভেসে আসছিল… চলন্ত ট্রেনের ঝাঁকুনিতে মাঝে মাঝে ওর মৃদু স্পর্শ টের পাচ্ছিলাম, কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার মতো তখন আমার অবস্থা, আর ঠিক সেই সময় নিজেকে চেন্নাই এক্সপ্রেসের সাহারুক খান বলে মনে হতে লাগলো, মনে মনে হাসি আসছিল দেখলাম ওর হাতটা এসে আমার হাতকে স্পর্শ করল! বোবার মতো আমরা দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম, কিছুক্ষণ পরে আমি আমার ঘোলাটে দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলাম ওর চোখের একটা দুষ্টুমির রেখা আর সহসা চোখের পলক দুটো ফেলে আমাকে বলল, তুমি যতই পালাতে থাক না কেন, আমি তোমাকে ধরে ফেলবই অধীর, আমি কবে থেকে তোমাকে খুঁজছি আর তুমি তার উত্তর দাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে না? কোন দিনও বুঝি আমার জন্য এতটুকু মায়া হয়নি?

কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না তখন আমি, আমার নাম তো অধীর না, অধীর নামে ভদ্রমহিলা কেন সম্বোধন করল? আমার তো কোন যমজ ভাইও নেই, সুতরাং জীবনে তো কোন দ্বৈত ভূমিকা আসার সম্ভাবনা নেই আর কেনই বা আমাকে খুঁজবে? আমি যে একজন ঘোরতর সংসারী। ভদ্রমহিলা ততক্ষণে বলতে শুরু করল… আমি তোমাকে যে প্যাকেটটা নবীনকে দাওয়ার জন্য দিয়ে ছিলাম, তারপর থেকে তুমি আর দেখা করলে না, হয়তো সেদিন আমার অনুরোধ তোমার ভালো লাগেনি, হয়তো তুমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার অনুরোধকে উপেক্ষা করতে পারনি, ভেবেছ আমি সুযোগ সন্ধানী, সে জন্যেই তুমি আর দেখা করনি, কিন্তু আমি তো শুধু তোমার মুখে নবীনের খবরটা শুনতে চেয়েছিলাম অধীরঅজ্ঞাতে আমার মুখ দিয়ে তখন বেরিয়ে গেল, না না মনে করার কি আছে? এই কথা শুনে ভদ্রমহিলা আমার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে, আমার হাতদুটোকে চেপে ধরল। আমি অস্বস্তি পাওয়ার আগেই বলে উঠল, আমি তো তোমাকে অনেক দিন ধরে জানি তুমি এরকম না, তবুও মেয়েদের মন তাই দুশ্চিন্তা করতাম। আচ্ছা তাহলে কিছু মনে করনি তো? কি আর  করি, বাধ্য হয়ে ভদ্রমহিলাকে উত্তর দিলাম, নাকিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে বলতে লাগল, আমি আমার গুরুবাবার কাছে আর যাইনা, সে নিয়ে আগে তোমরা কত হাসাহাসি করতে, এখন ওসব ছেড়ে দিয়েছি, শুধু তোমার কাছে একটা শেষ অনুরোধ, এখন তোমাকে একটা প্যাকেট দিচ্ছি, তুমি সেটা নবীনকে দিয়ে দিও কোথায় প্যাকেট, কোন প্যাকেটের চিহ্নমাত্র নেই সেখানে, আর নবীন বা কে? যাই হোক আমার তাতে কি আসে যায়, শুধু আমার হ্যাঁ বলাতে ও যদি খুশী হয় তাতে দোষ কোথায়? তাই উত্তর দিলাম, আচ্ছা ঠিক আছে। ততক্ষণে আমি দেখতে পেলাম একটা মলিন আলোর দূতিতে ওর চোখ দুটোতে জ্বলে উঠল আর আস্তে আস্তে উঠে কোথাও যেন চলে গেল।

অনেকটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচার মতো আমার অবস্থা তখন, যাকগে এরকম কত ঘটনাই না নিত্য ঘটে, তাতে বিচলিত হওয়ার কি আছে। স্মার্ট ফোনটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম, কিন্তু বারবার কমপারমেন্টের যাওয়া আসার রাস্তার দিকে নিজের মনের অজান্তে দৃষ্টিটা চলে যাচ্ছিল, এই বুঝি ভদ্রমহিলা আবার প্যাকেট হাতে করে এলআস্তে আস্তে সময় পার হয়ে গেল, অনেক রাত্রি হল কিন্তু তার আর দেখা পেলাম না

চা ওয়ালা আর হকারের চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে সকালের ঘুমটা অনেক আগেই ভেঙ্গে ছিল তাই দাঁত মেজে টয়লেট সেরে অভ্যাস মতো চা ওয়ালার কাছ থেকে এক কাপ চা নিয়ে খাচ্ছিলাম, ব্রিফকেস খুলে বাসি কাগজটার না-দেখা সংবাদ গুলোতে চোখ বুলাচ্ছিলাম।

কিছুক্ষণ পরে দেখি এক লম্বা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের বেক্তি আমাদের থেকে হয়তো একটু বেশী বয়স হবে, এগিয়ে এসে আমার সিট নাম্বারটা আমাকেই জিজ্ঞাসা করছে, আমি একটু বিরক্ত হয়ে ওকে বললাম হ্যাঁ এটা আমার সিট, চেন্নাই থেকে খড়গপুর পর্যন্ত রিসার্ভ। একটু সাবধানী হয়ে ভদ্রলোকটি বললেন, না না সে কথা আমি বলছি না, কিন্তু আপনাকে খোঁজাটাই আমার আসল উদ্দেশ্য, আমি কি এখানে বসতে পারি? আমাকে খোঁজার কথা শুনতেই, মনে মনে আমার একটু কৌতূহল হোল, বললাম বসুন

আমার পাশে বসে বিনা দ্বিধায় সে বলতে লাগল, কালকে যে ভদ্রমহিলা আপনাকে এসে কোন এক প্যাকেট দাওয়ার অনুরোধ করেছিল, উনি আমার স্ত্রী। আজ প্রায় পনেরো বছর হোল আমার ছেলে নিখোঁজ, কিন্তু ও জানে আমাদের ছেলে বেঁচে আছে, ত্রিভান্দ্রামে বিক্রম সারাভাই স্পেস সেন্টারে আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে গবেষণা করছে আপনার চেহারার সাথে আমার ছোট ভাই অধীরের বেশ মিল আছে,  আপনার প্রসঙ্গে ও যখন আমাকে বলল, অধীর পাশের কামড়ায় বসে আছে, তখন আমি অনুমান করেছিলাম ও ভীষণ একটা গণ্ডগোল করে এসেছেঅনেক দিন ধরে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা চলছে এবং ডাক্তার বলেছে এটা একধরনের মানসিক ব্যাধি, আপনি কিছু মনে করবেন না, ওকে নিয়ে মাঝে মাঝে আমাকে এরকম অসুবিধা সামলাতে হয়, এখন বয়স হয়েছে আমি ছাড়া ওর আর কেউ নেই, তাই সব সময় চোখে চোখে রাখতে হয় বলে, ভদ্রলোকটি একটা ক্লান্তির হাসিতে আমার দিকে চাইলেন।

ভদ্রলোকটির চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ভীষণ মায়া হোল। অজান্তেই আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, আপনার ছেলের কত বয়স ছিল, আর কি হয়ে ছিল? আমার প্রশ্নে সহসাই ওর মুখটা নিচু হয়ে গেল, আমার খারাপ লাগছিল তখন, কেনই বা আমি এরকম প্রশ্ন করলাম ওকে। কিছু ক্ষণ চুপ করে থেকে একটু সপ্রতিভ হয়ে আমার দিকে চেয়ে বলল, আমি পি ডাবলু ডির একজন অবসর প্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার আর আমাদের একমাত্র পুত্র সন্তান ছিল নবীন, ছোটবেলা থেকেই ভীষণ বাধ্যের ছিল, পড়াশোনায় খুব মেধাবী, হায়ার সেকেন্ডারি ভালো ভাবে পাস করে, প্রথম সুযোগেই এন আই টি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, এন আই টি দুর্গাপুর ইলেট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পায়। আমার স্ত্রীর পূজাপাঠ গুরুদেব ধর্মকর্ম নিয়ে সারা দিন মেতে থাকতে ভালোবাসে আর আমিও কোনদিন কোন কিছুতে ওকে কখন মানা করিনি। ছেলের পরীক্ষায় সফলতায় ও স্ত্রীর ইচ্ছায় বাসায় গুরুদেবের আগমন অনুষ্ঠানে তাই প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করে বেশ ধুমধাম করে পালন করলাম, সেই অনুষ্ঠানে গুরুদেব এসে আশীর্বাদ করে তুলসীর একটা মালা আমার ছেলেটির গলায় পড়িয়ে দিয়েছিল।  তারপর ছেলেকে নিয়ে আমরা কলেজ হোস্টেল দুর্গাপুর রাখতে গিয়েছিলাম, সেখানে আমাদের অফিস গেস্ট হাউসে এক সপ্তাহের মতো সপরিবার উঠি, আমার বেশ মনে আছে, হোস্টেলে ছাড়ার দিনে ওর মা কাঁদতে কাঁদতে ওকে জ্বরিয়ে ধরে বলেছিল, বড় মানুষ হওয়ার জন্যে তোকে এখানে রেখে গেলাম, মালাটা খুলিস না বাবা, সব সময় তোকে রক্ষা করবে

তারপর আমরা কলকাতায় ফিরে আসি। এক সপ্তাহ পরে ছেলে মাকে চিঠি লিখল, শ্রীচরণেষু মা তোমার তো মনে আছে, তুলসীর মালাটা তুমি খুলতে মানা করেছিলে, বলেছিলে দেহ মন প্রবিত্র রাখবে। যেদিন কলেজে ভর্তি হলাম, ক্লাসে মেয়ে গুলো আমার নাম দিয়েছিল তুলসী,  কিছু মনে করিনি… ভেবেছিলাম ওরা আমার প্রবিত্রতাকে দেখেছে। দুদিন বাদে ফ্রেসার ওয়েলকামে সবুজ টিভির পর্দায়, উলঙ্গ মেয়ে দেখে মুখ নিচু করি, তাতে সিনিয়ার ছেলেরা হাসাহাসি করেছিল, সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে পাছায় হাত রেখে আমায় বলেছিল বুঝলি একেই বলে র‍্যাগিং, তুলসী এবার তুই মানুষ হোলি আমার প্রবিত্রতাকে ওরা উল্লাসে পান করছিল,  রাতে অন্ধকারে হোস্টেল টয়লেটে গুমরে কেঁদেছিপরের দিন প্রিন্সিপ্যাল মহাশয়কে জানাতে উনি বললেন তুমিও ছাত্র ওরাও ছাত্র একটু মানিয়ে চল। মানিয়ে তো চলছিলাম কিন্তু ওরা এসে বলল প্রিন্সিপ্যালকে নালিশ করেছিস, নিজেকে সুরমা ভাবিস… ? নাকে ঘুষি মেরে বলেছিল, এবার শুধু মুখের ভূগোলটা পাল্টে দিলাম দুহাতে নাকের গড়া রক্ত চেপে পরদিন তোমাকে চিঠি লিখেছিলাম, শ্রীচরণেষু মা, পরের মাসে একটু বেশী টাকা পাঠিও আমি হোস্টেল ছেড়ে জনতা মেসে উঠেছি। একদিন মেসের বাসন মাজার আট বছরের মেয়েটা কাঁদছিল, জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি হয়েছে রে তোর? ছেঁড়া সালোয়ারটার মাঝখান দিয়ে মেয়েটা অপ্রবিত্রতার অনেক চিহ্ন দেখাল আমাকে। মেস মালিকে ব্যাপারটা জানাতেই, কিছু মেস ছাত্র আমার জামার কলার ধরে শূন্যে উঠিয়ে বলল, শালা তুলসী মুখের ভিতর দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে পেছন দিয়ে বেড় করে দেব, মালা খোল, মানুষ যদি না হবি তবে আমরাই তোকে মানুষ করব, পাশে কেউ ছিল না, আমার উপর কিল চড় ঘুষি লাথি, শুধু বুক ভরা ব্যাথাই ছিল সে দিনের সাথী মা আমি শেষ রক্ষা করতে পারিনি, তুলসীর মালাটা ওরা ছিঁড়ে ফেলেছে, থানায় গিয়েছিলাম সেখানে দেখলাম পুলিশ ওদের সমর্থনে কথা বলল, পরে মেস মালিক তো রীতিমতো অস্বীকার করে, ভয় দেখিয়ে বলল ওদের মধ্যে একজন মহামান্য এমেলের পুত্র আছে ওরা এমন ঘৃণ্য কাজ করতেই পারে না, তোমারই ভুল মা পুলিশ প্রশাসন গনতন্ত্র সব কিছুই ওদের হাতে, ওরা নিজেদের ইচ্ছা মতো গণতন্ত্র তৈরি করতে পারে। আমাকে তোমরা ক্ষমা করো, আমি আর মানুষ হতে চাইনা, ভাবছি কলেজ ছেড়ে দেব আমার ছোট ঘরে একটাই জানলা, বাইরে অঝরে বৃষ্টি পড়ছে, তোমার হাতের লাউয়ের ঘণ্ট বহুদিন খাইনি। এক নিশ্বাসে ভদ্রলোক গরগর করে মুখস্ত করা ছেলের চিঠিটা আমাকে বলে গেল, একটা গভীর দীর্ঘ নিশ্বাস পুত্রহারা বয়স্ক বেক্তির বুকের ভিতর থেকে  উষ্ণ বাষ্পের আকারে বেরিয়ে এল, আমি অনুভব করেছিলাম, সন্তানহারা ওর মনের অবস্থাটা, অজান্তেই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এল তারপর?

ভদ্রলোকটি বলল তারপর থেকে ছেলেটা ফেরার, অনেক খোঁজ করেছি, জনতা মেস, হোস্টেল, কলেজ, থানাপুলিশ, উচ্চশিক্ষা পর্ষদ থেকে মন্ত্রী কিছুই বাকী রাখিনি কিন্তু ছেলেটার কোন ঠিকানা আজ অবধি পাইনি। কেউ বলে বদলা নাওয়ার জন্যে আত্মগোপন করেছে কেউ বলে এরকম ঠাণ্ডা মাথার ছেলেদের জীবনে যখন হতাশা আসে ওরা সন্ন্যাসী হয়ে যায়। কেউ বলে মেধাবী ছেলেদের মনে গভীর দাগ কাটলে ওরা সহসাই মূলে চলে যায় মাওবাদী দলে নাম লিখায়, একটু নিশ্বাস নিয়ে ভদ্রলোকটি বলল হয়তো ওকে কেউ গুম করেছে আর সুন্দর ভাবে নিশ্চিহ্ন করেছে, শেষে একটু উচ্চ স্বরে কাঁপা হাতে আঙ্গুল তুলে বলল, ওই তুলসী মালাটা ওকে শেষ করেছে।  আমার হাত দুটো চেপে ধরে ছলছল চোখে অনুরোধ করল, আমার স্ত্রী কিছুক্ষণ পরে আপনার কাছে একটা প্যাকেট নিয়ে আসবেঅনুগ্রহ করে আপনি প্যাকেটটা প্রত্যাখ্যান করবেন না, ও চলে যাওয়ার পর, না হয় প্যাকেটটা ফেলে দেবেন, না হলে আমি স্ত্রীকে নিয়ে খুব অসুবিধায় পরব, পরে ওকে আর সামলাতে পারব নাখানিক ক্ষণ আমি নির্বাক ছিলাম, তার কিছু পরে ভদ্রলোকটির আস্তে আস্তে উঠে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম

সাথে অনেক মাল ছিল তাই খড়গপুর স্টেশন আসতেই কুলি ধরে মাল গুলো প্লাটফর্মে নামিয়ে গুনতে লাগলাম আর লক্ষ্য করলাম একটু দূরে আমার দিকেই হেঁটে আসছে গতকালের সেই ভদ্রমহিলা তার পিছনে আজ সকালের সেই ভদ্রলোকটি। ভদ্রমহিলা হেসে আমার দিকে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, বেশী সময় নষ্ট করবো না, প্যাকেটটা ওকে দিও। আমি হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিলাম, মুখ দিয়ে তখন কোন স্বর বেরচ্ছিল না ভদ্রলোকটি, তারাতারি চল ট্রেন ছেড়ে দেবে বলতে বলতে, ভদ্রমহিলার হাত ধরে ট্রেনে উঠে পড়ল, হাতের প্যাকেটের দিকে চোখ যেতেই সহসা মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। আস্তে আস্তে ট্রেনটা হুইসেল দিতে দিতে দূরে মিলিয়ে গেল

 

—সমাপ্ত—

                                                                                          নীল অভিজিৎ- 19/06/2017

 

- A word from our sponsors -

spot_img

Most Popular

আরও খবর...

Sudan crisis: সুদানে দুর্ভিক্ষ, এক টুকরো খাবারের জন্য চলছে হাহাকার

  Sudan crisis: বলা হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক অনাহার সংকট দেখবে...

Afghanistan flash floods: মরু দেশ আফগানিস্তান বৃষ্টি হরপা বান, ভেসে যাচ্ছে সব

  Afghanistan flash floods: পাহাড় মরুভুমির দেশ আফগানিস্তান। সেখানে হঠাৎ করেই...

- A word from our sponsors -

spot_img

সব খবর...

Sudan crisis: সুদানে দুর্ভিক্ষ, এক টুকরো খাবারের জন্য চলছে হাহাকার

  Sudan crisis: বলা হয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যাপক অনাহার সংকট দেখবে সুদান। হলোও তাই, সেখানকার মানুষ খাবারের জন্য ছটফট করছে। এক টুকরো খাবার কোথায় পাওয়া যায় সেই চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে তারা। পেটে তীব্র জ্বালা, কিন্তু কোথাও কোনো খাবার নেই তাই ঘাস খেয়ে চিনে বাদামের খোসা খেয়ে...

Afghanistan flash floods: মরু দেশ আফগানিস্তান বৃষ্টি হরপা বান, ভেসে যাচ্ছে সব

  Afghanistan flash floods: পাহাড় মরুভুমির দেশ আফগানিস্তান। সেখানে হঠাৎ করেই প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চতুর্দিক। আফগানিস্তানে হঠাৎ করেই হড়পা বান। এক দিনের অতিবৃষ্টিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০০ জন। জলের তোড়ে ভেসে গেছে হাজার হাজার বাড়ি। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন হাজার হাজার আফগান।এককথায় আফগানিস্তানে চলছে মৃত্যু...

জলঙ্গির জলে ভেসে উঠল বিশালাকার কুমির! আতঙ্কে নদীতে নামা বন্ধ করলেন স্থানীয়রা

নদীতে স্নান করার সময় হঠাৎই জলে ভেসে উঠল একটি বৃহদাকারী প্রাণী। পরে জানা যায়, আসলে প্রাণীটি অন্য কিছু নয়, সেটি হল আস্ত একটি কুমির। আর তারপরেই আতঙ্কে কার্যত নদীতে নামা বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয়রা। নদিয়ার মায়াপুরের তারিণীপুর ঘাটে এই কুমির দেখতে পাওয়া যায়। তা...

চা–বাগানে ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগাল বন দফতর, চিতা বাঘের খোঁজে চলছে জোর তল্লাশি

আজ, রবিবার চিতা বাঘের খোঁজে এবার চা–বাগানে ট্র্যাপ ক্যামেরা লাগালো বন দফতর। এই ঘটনা নিয়ে একটা আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে। সেই আতঙ্ক কাটাতে ড্রোন ক্যামেরায় চলল জোরদার তল্লাশি। কারণ চিতা বাঘের আতঙ্কে ঘুম উড়ে গিয়েছে বানারহাট ব্লকের লক্ষ্মীপাড়া চা–বাগানের শ্রমিকদের। এখানে চিতা বাঘের পায়ের ছাপ...

BSF: লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার এক দিন আগে, সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করল বিএসএফ

    BSF: আগামী ১৩ মে দেশে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ পর্ব। আর তার আগে আঁটোসাঁটো করা হয়েছে নিরাপত্তা। এদিন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ বাংলাদেশীদের একটি বিশাল অনুপ্রবেশ বানচাল করল বিএসএফ। উত্তর ২৪ পরগণা জেলার সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করা ৬৮তম কোরের বিএসএফ জওয়ানরা ১১ ও ১২ মে...

Suryakant Mishra: বিধানসভা ভোটের আগেই সরকার পড়ে যাবে, শুভেন্দুর সুরেই তোপ সূর্যকান্তের, পালটা দিল TMC

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বরাবরই দাবি করে আসছেন বিধানসভা ভোটের আগেই সরকার পড়ে যাবে। তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। আর এবার সেই পথেই হেঁটে তৃণমূল সরকার পড়ে যাওয়ার সময় বেঁধে দিলেন সিপিএমের...

Israel-Hamas War: হামাসের হয়ে কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র? বেঁকে দাঁড়াল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে

  Israel-Hamas War: নেতানিয়াহুর হুমকি, ইসরায়েল প্রয়োজনে একা দাঁড়াবে। লড়াই করবে সামর্থ্যের শেষটুকু দিয়ে । দরকার নেই যুক্তরাষ্ট্রকে। আর এভাবেই একা হয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের সুর কিন্তু খারাপ। গাজায় হামাসের কাছে হেরে যেতে পারে ইসরায়েল। ওয়াশিংটন হঠাৎ হামাসের হয়ে কথা বলছে কেন ? যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করে...

পর্যটকদের জন্য খুলে গেল সিকিমের নতুন গন্তব্য সাংলাফু লেক

ডেস্ক: পর্যটকদের জন্য এক নতুন গন্তব্যের দরজা খুলে দিল সিকিম। উত্তর সিকিমের ‘সাংলাফু চো’ বা সাংলাফু লেক। লাচুং থেকে জিরো পয়েন্ট তথা ইউমেসামডং হয়ে যেতে হয় এই গন্তব্যে। সমুদ্রতল থেকে ৫০৮০ মিটার অর্থাৎ প্রায় ১৬৬৭০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই লেক জিরো পয়েন্ট থেকে ৫ কিমি...

প্রধানমন্ত্রী-রাহুল গান্ধী মুখোমুখি বিতর্ক নিয়ে চর্চা তুঙ্গে! মোদী রাজি কি না জানা না গেলেও কটাক্ষের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে বিজেপি

নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচন নিয়ে দেশ জুড়ে উত্তেজনা। এরই মধ্যে দুই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং একজন প্রাক্তন সংবাদপত্র সম্পাদক রাহুল গান্ধী এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি প্রকাশ্য বিতর্কের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। শনিবার কংগ্রেস নেতা সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে চ্যালেঞ্জও জানান মোদীকে। তবে এ ব্যাপারে রাহুলকে কটাক্ষ...

Sandeshkhali new sting video: সন্দেশখালির জন্য কত মদ, টাকা, অস্ত্র লাগবে? হিসাব ‘গঙ্গাধরের’, সামনে নয়া ভিডিয়ো

প্রথম পর্বের আটদিনের মাথায় সন্দেশখালির স্টিং অপারেশনের দ্বিতীয় ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এল। 'উইলিয়ামস' নামে একটি ইউটিউব অ্যাকাউন্ট থেকে ওই ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) আপলোড করা হয়েছে। প্রথম পর্বের মতোই ওই ভিডিয়োয় স্যান্ডো গেঞ্জি পরা এক ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে। যিনি সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিজেপির...

Anubrata Mondal: অনুব্রতের বাড়ির ছাদে উড়ছে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা গেরুয়া পতাকা, লাগাল কে? কেউ জানে না

তিহাড় জেলে বন্দি তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা। এরই মধ্যে তাঁর বোলপুরের বাড়িতে ছাদের মাথায় 'জয় শ্রীরাম' লেখা গেরুয়া ধ্বজা উড়তে দেখা গেল। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তৈরি হল বিতর্ক। বিরোধীদের দাবি, তলায় তলায় বিজেপির সঙ্গে আঁতাত হয়েছে তৃণমূলের। এই পতাকা...

Khejuri BJP joining: ভোটের আগে সভাপতির দলবদল, খেজুরি ২ পঞ্চায়েত সমিতি TMCর হাতছাড়া বলে দাবি BJPর

লোকসভা নির্বাচনের চলাকালীন পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে বড়সড় ধাক্কা খেল তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির দলবদলু সভাপতি আচমকা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে ফেরায় শাসকদলের হাতছাড়া হল খেজুরি ২ নম্বর সমিতি। এর আগে সমিতির বোর্ড গঠনের মুহূর্তে তৃণমূলে যোগ দিয়ে সভাপতি পদে বসেছিলেন বিজেপির টিকিটে জয়ী উদয়শংকর মাইতি। তার...