গতকাল মঙ্গলবার শাহি স্নানের নির্ঘণ্ট ছিল সকাল ৯টা। ২০২৩ সালে এমন দিন ছিল মনে রাখার মতো। কারণ ত্রিবেণী–মগরা মেন রোড ভক্ত সমাগম তখন ছিল নজরকাড়া। কিন্তু এবার কুম্ভ স্নান হচ্ছে বাঁশবেড়িয়ার মানুষজন যেন জানেনই না। এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এবার ত্রিবেণীতে মাঠ উপচে পড়েনি ভিড়। এখন অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসন তৃতীয় বছরের কুম্ভ স্নানের অনুমতি দেওয়া নিয়ে অসহযোগিতা না করলে এমন হাল হতো না। প্রশাসন যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তবে হুগলির ত্রিবেণীর কুম্ভে একটু ভিড় হলেও ফাঁকাই রইল কল্যাণী। মঙ্গলবার ত্রিবেণীতে শাহি স্নান উপলক্ষ্যে সাধুসন্তদের সামান্য উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য এবার কুম্ভমেলা ও স্নানের আয়োজনে কাটছাঁট করা হয়েছিল। তাই ভিড় হয়নি বলে অভিযোগ আয়োজকদের।
এদিকে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ সাধুরা জড়ো হন। অন্তত চারশো সাধু এসেছিলেন। এখানে ছিল ছৌয়ের প্রদর্শনী। সাধুদের নগর পরিক্রমা দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখানে এসেছিলেন স্থানীয় বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। নগর পরিক্রমা শেষে তারপর হয় শাহি স্নান। সাধুসন্তরা আগেই এসে আখড়া সাজিয়ে বসেন। তাতে এখানের আবহ হয়ে ওঠে ত্রিবেণীতীর্থ। যদিও স্নানপর্ব মিটতেই ভিড় হালকা হয়ে যায়। তার সঙ্গে বৃষ্টিও কিছুটা সমস্যা তৈরি করে। তাতে পুণ্যার্থী সমাগম হলেও নানা কারণে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি আয়োজকদের। ভিড় নিয়ে আক্ষেপ শোনা গিয়েছে। আয়োজকদের আক্ষেপ, ‘পুলিশ মেলা করার অনুমতি না দেওয়ায় লোক হয়নি। বাইরে থেকেও কেউ খুব একটা আসেননি।’
অন্যদিকে এবার কুম্ভস্নানের শুরু থেকেই নানা অব্যবস্থা দেখা দেয়। এখানে সমস্যা হয়েছে পর্যাপ্ত শৌচাগার না থাকায়। তাতে গঙ্গার পাড় দূষিত হয়েছে। কারণ এখানেই মলত্যাগ করেন সাধুরা। তাতে আবর্জনায় ভরে ওঠে। মঙ্গলবার সেই অব্যবস্থা বহাল ছিল। উদ্যোক্তাদের দাবি, প্রায় ৭০০ বছর আগে কুম্ভস্নানে যাওয়ার সময় সাধুরা ত্রিবেণীতেই বিশ্রাম নিতেন। ত্রিবেণী সঙ্গমে তাঁরা শাহি স্নানও করতেন। তাই ত্রিবেণীর কুম্ভ মিনিকুম্ভ হয়েছিল। সেই ঐতিহ্যকে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে কাঞ্চন চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার জন্য বারবার দিন পরিবর্তন হয়েছে। কুম্ভমেলা হবে কি না সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। সকলকে খবর দেওয়া যায়নি।’
আরও পড়ুন: জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম শিলিগুড়ির ইরাদ্রি, সাফল্যের পিছনে রহস্য কী?
এছাড়া এই কুম্ভমেলা নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে গিয়েছে। সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘প্রশাসন কোনও সহযোগিতা করেনি। আমরা সরকারে এলে এই মেলাকে বিশ্বমানের করব।’ এখানে মেলার জন্য পসরা সাজিয়ে বসা দোকানিরাও হতাশ। তাঁদের দাবি, এবার গুটিকয়েক মানুষ এসেছেন। তবে আয়োজক সংস্থা ‘ওঙ্কারনাথ মিশন’ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে দিন বদল হয়েছে। শর্ত সাপেক্ষে মেলার অনুমতি মিলেছে। খামতি ছিল না নিরাপত্তাতেও।’