ভারতে এমন এক রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে যেখানে টিকিট কেটেও মানুষজন ট্রেনে উঠেন না। শুনতে অবাক লাগছে তো? মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কষ্টের রোজগারের টাকা তা দিয়েই টিকিট কিনে চলেছেন গ্রামের বাসিন্দারা। একটা স্টেশনকে বাঁচানোর জন্য সহজ সরল মানুষগুলোর লড়াই আপনার চোখে জল আনবে। ১৯৫৪ সালে রেলমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর প্রস্তাবে তৈরি হয়েছিল স্টেশনটি। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের কাছে দয়ালপুর উদ্বোধনের পর প্রায় ৫০ বছর চালুও ছিল। গ্রামের বাসিন্দারা এই স্টেশন থেকেই ট্রেনে উঠতেন। ২০০৬ সালে স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করানো বন্ধ করে দেয় ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ। দয়ালপুর স্টেশনে ট্রেন চালিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না তাই স্টেশনটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে স্থানীয়দের। এই স্টেশনই তো তাদের সব। ঠিক হয় এভাবে স্টেশন বন্ধ হতে কিছুতেই দেওয়া যাবে না। সকলকে নিয়ে সভা বসে । গ্রাম প্রধান ঠিক করেন। স্টেশন বাঁচাতে টিকিট কাটতেই হবে।
উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম। অভাব প্রতিটা মানুষের ঘরে ঘরে কিন্তু যত টুকু রোজগার তা দিয়েই চাঁদা তুলে রোজ ২৫টি টিকিট কেনা হবে বলে ঠিক হয়। কারণ রেল জানিয়েছিল ওই স্টেশনে ট্রেন দাঁড়াতে গেলে রোজ কমপক্ষে ২৫টি টিকিট বিক্রি হতে হবে। করোনা কালের পর ২০২২ সালে ফের স্টেশনটিকে হল্ট স্টেশনের তকমা দিয়ে চালু করে রেল। তবে পুরনো সিদ্ধান্তের নড়চড় হয় না দিনে ২৫টি টিকিট বিক্রি হতেই হবে। রোজ যাত্রা না করলেও চাঁদা দিতে হয়। ট্রেনের টিকিট কেনার জন্য যা এখনও পর্যন্ত হয়ে আসছে। সেখানে খুব বেশি ট্রেন থামে না কিন্তু দয়ালপুরের মানুষ আর তাঁদের স্টেশন বন্ধ হতে দেবেন না।
বিনা টিকিটে ট্রেনে যাত্রা করা অপরাধ। অথচ দেশের মধ্যে এমন এক রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে, যেখানে টিকিট কেটেও মানুষজন ট্রেন যাত্রা করেন না। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার ক্ষেত্রে রেলপথের ওপরেই ভরসা করেন অধিকাংশজন।অন্যান্য গণপরিবহণগুলির তুলনায় রেলপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে খরচের পরিমানও অনেকটাই কম। কিন্তু ট্রেনে চড়লেও অনেকেই তার নিয়ম কানুন জানেন না।
রেলের নিয়ম অনুসারে, ব্রাঞ্চ লাইনে প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ টি টিকিট এবং মেন লাইনের ট্রাঙ্ক রুটে প্রতিদিন ৫০ টি টিকিট বিক্রি করতে হয়। তা না হলে যে কোনো স্টেশন বন্ধ করে দিতে পারে রেল। তাই দয়ালপুরকেও সেই লিস্টেই রাখথা হয়। কিন্তু এই কাজ করেই দয়ালপুরের মানুষজন বুঝিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। গ্রামের সকলে একসাথে এগিয়ে আসলে সকল প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। তা সত্যি প্রমাণ করে দিল দয়ালপুর গ্রামের মানুষ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়