বিজেপির অন্দরে যে কোন্দল রয়েছে তা বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। খানিকটা প্রমাণ পেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা দিলীপ–সুকান্তর বাকযুদ্ধে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর যে পর্যালোচনা বৈঠক বসেছিল সেখানেই এমন চিত্র দেখা গিয়েছিল। যদিও পরে দিলীপ ঘোষের সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি পদ চলে যায়। এবার খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনে শুভেন্দু–সুকান্তর বিরোধ ও দোষারোপ সামনে চলে এল। যা নিয়ে বেশ বিব্রত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য বলে সূত্রের খবর। আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই অবস্থা দেখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বুঝেছেন বাংলা থেকে আসন সংখ্যা কমবে।
এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলনে নেমে পড়ে বিজেপির যুব মোর্চা। এই সুকান্ত–শুভেন্দুর বিরোধ সেখানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই ঘটনার প্রতিবাদে মহামিছিলের ডাক দেয় বিজেপির যুব মোর্চা। গোলপার্ক থেকে ৮বি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যে মিছিল হয় সেখানে শুধু শুভেন্দু অধিকারীকেই দেখা যায়। একবারও সেখানে পা রাখেননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এই নিয়ে দলের অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায়। আদি–নব্য দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরেই চলছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে। যার জন্য একের পর এক নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। তবে সেটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনে চলে আসবে সেটা কেউ ভাবতে পারেননি।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? অন্যদিকে এই পরিস্থিতির ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে বিজেপি চাউর করছে, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে সুকান্ত মজুমদারের বৈঠক ছিল বলেই তিনি যেতে পারেননি। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা বন্দরের গেস্ট হাউসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য এসেছিলেন। সেখানে আগে বৈঠক করতে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরে আসেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাতে একটি নামের তালিকা দেন শুভেন্দু। তাতেই ক্ষেপে ওঠেন সুকান্ত। তখন সুকান্ত ওই বৈঠকে বলে ওঠেন, দলের তো একটা সিস্টেম আছে। এভাবে আলাদা করে নামের তালিকা দিলে হয় নাকি। এটা তো পার্টিগতভাবে দিতে হয়।
আরও পড়ুন: মিজোরাম থেকে মালদা, একের পর এক শ্রমিকের দেহ ফিরল গ্রামে, শোকে পরিবারগুলি
তারপর ঠিক কী ঘটল? কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনেই তখন শুভেন্দু সরাসরি সুকান্তকে তোপ দাগেন। শুভেন্দুর কথায়, আপনারা যোগ্য নাম দেন না বলেই আমাকে আলাদা করে দিতে হয়। পাল্টা সুকান্ত তেড়ে–মেরে উঠে বলেন, আপনি যাদের নাম দেন তাদের কে, কবে বিজেপিতে এসেছে কেউ জানে না। প্রকৃত বিজেপি কর্মীদের বাদ দিয়ে আপনি উল্টোপাল্টা নাম ঢোকান। এই আকচা–আকচি দেখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শুভেন্দুকে বলেন, বিজেপিতে নিয়ম মেনেই চলতে হবে। এই বলে তিনি শুভেন্দুর কাগজ আর নেননি। ফিরিয়ে দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনে শুভেন্দুকে কার্যত ঝেড়ে কাপড় পরিয়ে দেন সুকান্ত। তাই ওই মিছিলে যাননি সুকান্ত। বরং সুকিয়া স্ট্রিটে শুভেন্দু অধিকারীর ফ্ল্যাটের সামনে জনসংযোগ সারেন সুকান্ত মজুমদার বলে সূত্রের খবর।