কর্ণ
**********
বৈশাখী চ্যাটার্জী
আমি সূতপুত্র কর্ণ এটাই ছিল তোমার কাছে আমার একমাত্র পরিচয় -আর এটাই ছিল আমার ভালবাসা কে প্রত্যাখান করার সবচেয়ে বড় কারন তোমার কাছে -কিন্তু পাঞ্চালী সেই প্রথম দিন থেকে বড় অকারণই তোমাকে মনের মধ্যে স্থান দিয়েছিলাম -আমি তো জন্ম থেকেই পরিত্যক্তা -পৃথিবী তো আমাকে সৃষ্টিই করেছিল শুধু বঞ্চিত করার কাহিনী গড়তে ,কিন্তু পাঞ্চালী আমার প্রেম সেখানেও বড় অবমাননার ইতিহাস--না কোন দোষারোপ করছি না -সেদিন সভাগৃহে সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তুমি বঞ্চিত করলে আমাকে ,সেদিন তুমি সত্যিই প্রমাণ করলে তুমি কেবলই এক ক্ষত্রিয়া নারী যজ্ঞাগ্নি সম্ভূতা-প্রেম সে তো নরম মনের বালুকাতে প্রতিমুহুর্তে-আছড়ে মরেছিল সেখানে মন কিসের প্রয়োজনে বার বার ব্যার্থ ইতিহাস গড়তে চেয়েছিল জানি না -ভীষণ সেই লজ্জা আর প্রত্যাক্ষান বুকের বেদনায় কি জ্বালা ধরিয়েছিল তুমি কি বুঝেছিলে পাঞ্চালী ।হাঁ ভালবাসা ভিক্ষারি হয় মনের কাছে কোন জোর চলে না সেখানে ,-না সেদিন সে মুহুর্ত হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি আমার ভালবাসা --আর তারপর হৃদয়ের অফুরন্ত স্রোতে কতটা বাঁধভাঙ্গা জলোচ্ছ্বাস ছিল কোন বীরের কি সেই ইতিহাস মানায় ??-পাঞ্চালী তোমাকে ভুলিনি বলতে পার ভুলতে চাইনি কোনদিন --শুধু সেই সভাগৃহে এক মুহুর্ত তোমার চোখে এক নামহীন ভালবাসা অনুভব করেছিলাম ।..... জান পাঞ্চালী সেদিন যখন শুনলাম তুমি পঞ্চস্বামীকে বরমাল্য পড়িয়েছ সেই মুহুর্ত আমার মনে ভীষণ আনন্দ সৃষ্টি করেছিল , মনে হয়েছিল এটাই ঠিক হয়েছে যেমন আমাকে পরিত্যাগ করেছিলে অকারন বঞ্চিত করেছিলে তেমনই আজ নিজেও ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হলে -কিন্তু পরমুহূর্তেই তোমার জন্য সমস্ত মন কেঁদে উঠেছিলো, মনে হয়েছিল এই রাজত্ব রাজনীতি সব মিথ্যে -মনে হয়েছিল যে অব্যক্ত প্রেম তোমার চোখে দেখেছিলাম তার অধিকারে সমস্ত পৃথিবী লন্ডভন্ড করে তোমার কাছে ছুটে যাই বলি এস আমার প্রেম -তোমার সমস্ত বুকফাটা বেদনা আমি গ্রহণ করতে চাই ,..সংযত করেছিলাম নিজেকে তুমি পরস্ত্রী.....। হে বিধাতা কি ভীষণ তোমার পরিহাস বার বার আমারই ব্যার্থ প্রেমের মুখোমুখি করেছ আমাকে নিজের যা অন্তরের একান্ত প্রিয় অনুভব -যে মনের রাজ্য জুড়ে প্রবাহিত হয় সেই আমার প্রেয়সী পাঞ্চালী-তোমার বস্ত্রহরণ-, না- না- না -এক মুহুর্তও মেনে নিতে পারিনি কিন্তু বড় অসহায়....হে নিষ্ঠুর একি বিড়ম্বনা কেন এত নির্যাতন নিজের মনের সাথে....।অসহায়ের মত শুধু বসে বসে দেখেছিলাম নিজের প্রেয়সীর বুকভাঙ্গা আর্তনাদ আর দেখেছিলাম তোমার পঞ্চস্বামীকে যাদের তুমি বরণ করেছিলে আমাকে পরিত্যাগ করে -নিষ্ঠুর সেই হাসিতে হাসি মিলিয়ে ছিলাম দুর্যোধনের সাথে -তার ঋণ আমাকে বাধ্য করেছিল আর কেনই বা তার বিপক্ষে যাব কৃষ্ণা- সে তো আমাকে বঞ্চিত করেনি কখন....। তোমার চোখে আমি প্রেম দেখেছিলাম -আমি জানতাম তুমি এই পৃথিবী শ্রেষ্ঠ বীরকে মনে মনে ভালবাস সেইটুকুই ছিল আমার পরম প্রাপ্তি কিন্তু আজ সেই চোখেই বড় ভর্ত্সনা দেখে নিজের ভালবাসার কাছে কুণ্ঠিত হয়েছিলাম -কৃষ্ণা তোমার লজ্জা নিবারণ করতে আমি পারিনি ,সব কিছুকে অস্বীকার করে বীর শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠতে পারিনি আমাকে ক্ষমা কর পাঞ্চালী --তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোমার এই অপমানের প্রতিশোধ শুধু তোমার পঞ্চস্বামী না আমি ও নেব, কিন্তু কি করে আমি তো বেইমান হতে পারি না -কিন্তু সব জেনেই পরাজয়ের পথ বেছে নিয়েছিলাম -যে বীর দাঁড়ালে কোন জয় তাকে পরাভূত করতে পারেনা সেই বীর যোদ্ধার রথের চাকা মেদিনী গ্রাস করে ভাগ্যের নাকি নিজের সাথে ছিল নিজের পরিহাস জানিনা সেই মৃত্যু মুহুর্তে পাঞ্চালী তোমার কাছে পৌঁছেছিলাম সমস্ত ভালবাসা নিয়ে বলেছিলাম বিদায় --কি জানি আমার মৃত্যুর সংবাদ তোমাকে আনন্দ দিয়েছিল না দুঃখ --আমার জন্য তখন কি তোমার মনে বীর শ্রেষ্ঠর সম্মান ছিল নাকি শুধুই ঘৃণা ? পাঞ্চালী তুমি কি জেনেছিলে আমার এই পরাজয় আমি গ্রহণ করেছিলাম এক নারীর ভালবাসায়.......।।
বৈশাখী চ্যাটার্জী : 19/05/2017