পথ —– ১৮
—————-
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
বছরের এক একদিন উঠোন জুড়ে নেমে আসতো গভীর অন্ধকার যখন বাড়ির কেউ মারা
যেত। সারাদিন একটা মনখারাপের পরিবেশ। কান্নাকাটি। প্রিয়জনকে হারিয়ে আমারও খুব
মনখারাপ করত। আমিও খুব কাঁদতাম।
দাহ করার জন্য যখন মৃতদেহ তুলে নিয়ে চলে যেত তখন বিকেল ক্ষয়ে ক্ষয়ে
চারপাশে সন্ধ্যে নেমে আসত। অশৌচ বলে মা ওইসময় তুলসীতলায় প্রদীপ দিত না। সারা
উঠোন জুড়ে তখন গভীর অন্ধকার নেমে আসত। মনে হতো সেই অন্ধকার যেন বুকের ওপর
চেপে বসছে। আমার খুব কষ্ট হতো। এক একসময় সহ্য করতে না পেরে খুব কাঁদতাম। তবে
চিৎকার করে নয়। গোপনে চোখের জল মুছতাম। কিছু ভালো লাগত না। সেই সময় নিজেকে
খুব একা মনে হতো। ওইসময় কারও সাথে মিশতে পারতাম না। কথা বলতেই ভালো লাগত না।
মনে হতো আমাদের সারা বাড়িটা এমন এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারে ডুবে আছে যেখান থেকে
আমাদের কোনো নিস্তার নেই। অন্ধকারেই আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। একরকমের ভয়
মনের মধ্যে কাজ করত। মনে হতো আমি বোধহয় হারিয়ে যাব। চোখের সামনে কাউকে দেখতে
পেতাম না। এমন কি পথকেও না। পথকে মনে হতো স্বজন বান্ধবহীন অবস্থায় অন্ধকারে
একা শুয়ে আছে।
হরিৎ:10/06/2017
*******************