রাজ্যে বেসরকারি বাসের ভাড়া নিয়ে চলা সমস্যার জট কিছুতেই ছাড়ছে না। যা সূত্রেই উঠে আসুক না কেন তা মানতে নারাজ কোনও না কোনও পক্ষ। আর তার জেরে রাস্তায় এখনও সব বেসরকারি বাসের দেখা মিলছে না। ফলে আমজনতার দুর্ভোগও কমছে না। বেসরকারি বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবি অনেক দিন ধরেই করে চলেছেন বেসরকারি বাস মালিকেরা। কিন্তু রাজ্য সরকার বাস ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের উপর আর্থিক বোঝা চাপাতে চায় না। যদিও গতবছর লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে রাজ্যের প্রায় সব রুটেই ১০টাকার নীচে আর ভাড়া নেওয়া হয় না বললেই চলে। এই নিয়ে প্রতিদিন যাত্রীদের সঙ্গে বাসকর্মীদের বিবাদও হচ্ছে। যদিও স্থায়ী সমাধান কিছু হয়নি। এবারে লকডাউন জমিত পরিস্থিতি ছাড়াও বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে পেট্রো পণ্যের ব্যাপক হারে মূল্যবৃদ্ধি। এই অবস্থায় বাস মালিকেরা জানিয়ে দিয়েছে, ভাড়া বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা খোলা নেই। ৫০ শতাংশ যাত্রী আর পুরানো ভাড়া মেনে তাঁরা বাস চালাতে পারবেন না। এর জেরেই রাজ্য সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছিল বেসরকারি ভাড়া নির্ধারণের জন্য। সেই কমিটি ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পেশ করেছে রাজ্য সরকারের কাছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব আবার যেমন এখনই কার্যকর করেত চায় না রাজ্য সরকার তেমনি সেই প্রস্তাব মানতে চাইছেন না বাস মালিকেরা। ফলে সমস্যার জটও কাটছে না।
রাজ্য সরকার বেসরকারি বাসের ভাড়া বৃদ্ধির জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটির সদস্যরা সব দিক খতিয়ে দেখে নয়া আঙ্গিকে, দূরত্বের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। বর্তমানে বেসরকারি বাসে শূন্য থেকে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া ৭ টাকা। নয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রথম তিন কিলোমিটারের জন্য ৮ টাকা হবে ন্যূনতম ভাড়া। তারপর নির্দিষ্ট দূরত্বের প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট টাকার গুণিতকে পরবর্তী ভাড়া স্থির হবে। এখন ৫ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব যেতে যাত্রীদের ৯ টাকা দিতে হয়। ১২ থেকে ১৬ কিমি পর্যন্ত ১০ টাকা এবং ২০ কিমি পর্যন্ত ১১ টাকা গুনতে হয়। নয়া ভাড়ার সুপারিশ অনুযায়ী, ৪ থেকে ৭ কিমি পথ অতিক্রম করলে দিতে হবে ১০ টাকা। ১০ এবং ১৫ কিমি দূরত্বের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১২ এবং ১৫ টাকা ভাড়ার সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাব মানতে চাইছেন না বাস মালিকেরা। তাঁদের দাবি বাস ও মিনিবাস উভয়ের ক্ষেত্রেই নূন্যতম ভাড়া করতে হবে ১০টাকা।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কমিটির প্রস্তাবে মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি নেই। তবে তিনি এই প্রস্তাব এখনই কার্যকর করতে চাইছেন না। কেননা মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন ভালো নয়। তাই এখনই বাস ভাড়া বাড়ানোর তিনি বিরুদ্ধে। পরিবর্তে গত বৃহস্পতিবার পেশ হওয়া রাজ্য পূর্ণাঙ্গ বাজেটে পরিবহণ ক্ষেত্রেও জন্য একাধিক আর্থিক সুবিধার কথা তিনি ঘোষণা করিয়েছেন রাজ্য সরকারের তরফে। সেখানেই বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্যিক গাড়ির রোড ট্যাক্স ও অতিরিক্ত কর ছাড় দেওয়া হবে। যদিও বাস মালিকেরা এই ছাড়ে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের দাবি, হয় রাজ্য সরকার বাস পিছু মালিকদের ২ লক্ষ টাকা কম সুদে ঋণ দিন নাহলে বাস ভাড়া বাড়ান। কার্যত এই দুইটির কোনওটিই রাজ্য সরকার মানতে নারাজ। অগ্যতা সমস্যাও একই জায়গায় রয়েছে থমকে দাঁড়িয়ে। মাঝখান থেকে রস্তায় বার হওয়া আমজনতাকে কার্যত ৩-৪গুণ বেশি ভাড়া গুণে যাতায়াত করতে হচ্ছে।