বিশ্বজুড়ে এখন সবথেকে আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস।সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।আস্তে আস্তে এই রোগ ভারত সহ বিশ্বের আরও 24টি দেশে এখনও অবধি ছড়িয়ে পড়েছে।বর্তমানে এই রোগের সেভাবে কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি তবে হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রতিষেধক প্রয়োগে সামান্য সুফল মিললেও আক্ষেপের সাথে বলতেই হয় তা সুদূরপ্রসারী নয়।
এবার আসি কি এই করোনা ভাইরাস? এটির আণুবিক্ষণীক গঠন যদি খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায় তবে এই ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ও হেপাটাইটিস ভাইরাসের সম্মিলিত এক বিবর্তিত রূপ বৈ কিছুই নয়।ইনফ্লুয়েঞ্জার মতই এই ভাইরাস রোগের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে তবে সামান্য সর্দি-কাশির ওষুধ এখানে ব্যর্থ হচ্ছে কারণ এই ভাইরাসের বিবর্তিত রূপটিকে ভালভাবে নজর না দিয়ে তার প্রাদুর্ভাবের হাহাকার পরিস্থিতিকে দুর্বিসহ করে তুলেছে।
এবার আসা যাক এই করোনা ভাইরাসের আকৃতিগত ব্যাখায়।এটি একটি RNA ভাইরাস।এই RNA এবং N-প্রোটিন উভয়ে মিলে মজুত একটি নিউক্লিওক্যাপসিড তৈরি করে এই ভাইরাসের কার্যক্ষমতকে দীর্ঘতর করেছে কারণ এই RNA-টি আবার 3-poly A প্রকৃতির ফ্ল্যাজেলাসম্পন্ন এবং 5-cap A প্রকৃতির আস্তরণ দ্বারা আচ্ছাদিত।অতএব ভাইরাসটি যদি সংক্রামিত করে মানবদেহে এই RNAটি প্রবেশ করিয়ে দেয় তাকে ধ্বংস করা কঠিন।এছাড়াও এই ভাইরাসের বাইরের আস্তরণের সাথে M,HE এবং S এই তিনটি প্রোটিন যুক্ত থাকে।এদের একত্রে মেমব্রেন প্রোটিনও বলা হয়ে থাকে।এই M-প্রোটিন (Myeloma) রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে মিশে আমাদের ইমিউন অর্থাৎ শারীরিক নিজস্ব প্রতিরোধক ক্ষমতাকে হ্রাস করে দেয়।এখানে HE অর অর্থাৎ Hemagglutinin Esterase প্রোটিন একপ্রকার বিবর্তিত উৎসেচক প্রোটিন যা একমাত্র ইঁদুর যদি হেপাটাইটিস ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামিত হয় তবে তার রক্তে উপস্থিতি মেলে।এবং মজার কথা হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসেও এই HE প্রোটিন থাকলেও করোনা ভাইরাসের সাথে এই প্রোটিনের বিস্তর ফারাক এবং সংক্রামিত ইঁদুরের রক্তে HE-প্রোটিনের সাথে এর মিল লক্ষ্যণীয়।আর যে S বা Spike প্রোটিন থাকে সেটি রক্তের T এবং B কোশকে ধ্বংসপ্রাপ্ত করে যাতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা আরও কমে যায় আর সাধারণত এই S-প্রোটিনকেই হেপাটাইটিস ভাইরাসের প্রতিষেধক প্রয়োগে ধ্বংস করা হচ্ছে কিন্তু বাকি শক্তিশালী RNA এবং HE ও M প্রোটিনকে ধ্বংস করা যাচ্ছে না।ফলে ভাইরাসের কার্যক্ষমতা বিশেষ বাধাপ্রাপ্ত না হয়ে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে আস্তে আস্তে লিভারকেও সংক্রামিত করে মানুষকে মৃত্যুর পর্যায়ে ঠেলে দিচ্ছে।
এই করোনা ভাইরাসকে ঠেকাতে গেলে নিজস্ব প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে আটোশাটো করতে হবে।বাইরে থেকে এসে সম্ভব হলে জীবাণুনাশক সাবান দিয়ে ভালো করে স্নান করতে হবে।কথা বলার সময়ে একটু দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।রাস্তার এবং ঘরের বাথরুম সবসময়ে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।ঘরে থাকলেও প্রতিবার খাবার খাওয়ার সময়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া আবশ্যক।হাঁচি-কাশি-সর্দি-জ্বর হলে প্যারাসিটামল না খেয়ে ডাক্তার দেখানোই শ্রেয় এবং সংক্রামিত ব্যক্তি যত্রতত্র থুথু,পানের পিক ফেললে কড়া হওয়া স্বাস্থ্যদফতরের প্রয়োজন কারণ দ্রষ্টব্য পদক্ষেপ ও সচেনতা গ্রহণের মাধ্যমেই একমাত্র এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব।