যশকে নিয়ে বেশ চিন্তিতই ছিলেন তিনি। সাগরের বুকে জন্ম নেওয়া এই দস্যু বাংলার বুকে কী তাণ্ডব চালাবে সে নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী যশ আসার আগে থেকেই নবান্নে থেকে রাত জেগেছেন। তাঁর চিন্তা ছিল রাজ্যবাসীকে নিয়ে। তাঁদের সুরক্ষিত করা নিয়ে। নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকেই যশের গতিবিধি ও তার জেরে রাজ্যের জেলাগুলিতে ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। টানা ৩০ ঘন্টা নবান্নে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেদিনই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন সব কিছু ঠিক থাকলে শুক্রবারই যশ বিধ্বস্ত এলাকাগুলি সফর করবেন তিনি। সেই মতো এদিন বেলা ১১টা ১০মিনিট নাগাদ যশ বিধ্বস্ত হিঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশে কপ্টারে করে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে মুখ্যসচিব-সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তারা। সেখানে থেকেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী দিলেন কড়া বার্তা। বলে দিলেন, ‘খাবার ও ত্রাণ নিয়ে কোনও বঞ্চনা চাই না। যাঁদের যা প্রয়োজন, তা দিতেই হবে। সকলে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কোনও অভিযোগ যেন না শুনতে হয়।’
এদিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হিঙ্গলগঞ্জে পৌছান মুখ্যমন্ত্রী। তারপরে জেলার প্রশাসনিক আধিকারিক ও রাজ্যের আধিকারিকদের নিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ কলেজে শুরু করেন জেলার প্রশাসনিক বৈঠক।সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন যে ত্রাণ থেকে যেন কাউকে বঞ্চিত করা না হয়। কার্যত সাফ জানিয়ে দেন, ‘ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ইস্যু করবেন না। দুর্গতদের ত্রিপল দিতে যেন কার্পণ্য না হয়। সবাইকে মাস্ক, ওয়াটার পাউচ দেওয়া হচ্ছে কিনা দেখুন। ত্রাণশিবিরে যাঁরা আছেন, তাঁদের যেন কোনও সমস্যা না হয়।’ এই প্রসঙ্গেই তিনি এদিন ত্রাণবণ্টনের ক্ষেত্রে সরকারের নিজস্ব প্রকল্প ‘দুয়ারে ত্রাণ’-এর পরিকল্পনার কথা ফের জানান। সেখানেই তিনি বলেন, ‘খাবার ও ত্রাণ নিয়ে কোনও বঞ্চনা চাই না। যাঁদের যা প্রয়োজন, তা দিতেই হবে। সকলে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কোনও অভিযোগ যেন না শুনতে হয়। প্রয়োজনীয় চিকিত্সা, ওষুধ দিতে হবে। বিশেষ নজর দিতে হবে গর্ভবতী ও প্রসূতিদের দিকে।’
এদিন হিঙ্গলগঞ্জে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বার হওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ‘বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় ৫৫টি বাঁধ ভেঙেছে । বেশ কয়েকটি রাস্তাও বেহাল। এসবের দ্রুত মেরামত প্রয়োজন। সেই রকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ শিবিরে যারা আছেন তাঁরা তড়িঘড়ি করে বাড়ি ফিরবেন না। কারন কোটালের জেরে আবারও এলাকা প্লাবিত হতে পারে। জেলার আধিকারিক ও ব্লক আধিকারিকদেরও এই বিষয়টিতে দেখতে বলেছি। আর যারা যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাঁরা সবাই ত্রাণ পাবেন। নিশ্চিন্তে থাকুন। জুন মাস থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।’ বৈঠক সেরে হিঙ্গলগঞ্জ থেকে হেলিকপ্টারে করেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের দিকে রওনা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।