কলকাতা পুরসভায় কান পাতলে দু’টি বড় দুর্নীতির কথা শোনা যায়। এক শৌচাগার, দুই, বর্ষাতি দুর্নীতি। এই বর্ষাতি পড়ুয়াদের দেওয়ার কথা। তার জন্য পুরসভার ডাকা দরপত্রের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রচণ্ড আপত্তি তোলে তৎকালীন পুরসভার অর্থ দফতর। তখন মেয়রের দায়িত্ব সামলাতে আসেন ফিরহাদ হাকিম। এই দরপত্র ছেড়ে দিতে শিক্ষা দফতর তখন মেয়রের কাছে ফাইল পাঠায়। তিনি এই ফাইল দেখে ফাইলের উপরে ইংরেজি অক্ষরে ‘নো’ লিখে দেন। অর্থাৎ মেয়র বর্ষাতি কেনার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেয়নি। এখন কলকাতা পুরসভার কমিশনারের কাছে পেশ করা রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মেয়রকে না জানিয়ে প্রায় ৭৪ লক্ষ টাকার বর্ষাতি কেনা হয় বলে সূত্রের খবর।
এদিকে কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, বর্ষাতি কেনার টাকা এসেছিল সর্বশিক্ষা মিশন থেকে। আর নিয়মে আছে, সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা খরচ করতে গেলে কলকাতা পুরসভার অর্থ দফতরের অনুমতি লাগে না। এই নিয়মকে ঢাল করেই শিক্ষা দফতরের তদানীন্তন অফিসাররা নিজস্ব উদ্যোগেই বর্ষাতি কেনা শুরু করেন। কলকাতা পুরসভার কমিশনার বিনোদ কুমার পুরসভার শিক্ষা দফতরের কাছে বর্ষাতি কেনার রিপোর্ট চেয়েছেন। সেই রিপোর্ট কমিশনারকে দেওয়াও হয়েছে। এবার বর্ষাতি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রেও পুরসভা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে চলেছেন বলে সূত্রের খবর।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, পড়ুয়াদের স্কুলের জামার সঙ্গে বর্ষাতিও দেওয়া হবে। তাই পুরসভার শিক্ষা দফতর বর্ষাতি কেনার জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া শুরু করে। এটা নিয়েই পুরসভার অর্থ দফতর আপত্তি তোলে। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘আগের স্পেশ্যাল পুর কমিশনার (শিক্ষা) তাপস চৌধুরী ফাইল পাঠিয়েছিলেন। তাতে আমি সই করি।’ তবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে না জানিয়েই এই বর্ষাতি কেনা হয় বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ এখন বড় আকার নিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: সন্দেশখালি কাণ্ডে আক্রান্ত ইডি অফিসারের নাম সিবিআই নথিতে! এফআইআরে আলোড়ন
কিন্তু মেয়রকে না জানিয়ে এমন কাজ বেআইনি বলে অনেকে মনে করছেন। আবার এটা সহজ হয়ে যায় অর্থ দফতরের অনুমতি নিতে হয় না বলে। গোটা বিষয়টি অত্যন্ত পরিকল্পনা করে করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এই কাজের নেপথ্যে বড় চক্র আছে বলে মনে করছে কলকাতা পুরসভা। তা না হলে মেয়র এবং পুরসভার কমিশনার কিছুই জানলেন না, অথচ কাজ হয়ে গেল এটা ভাবার বিষয়। এই বিষয়ে বিজেপির পুরসভার সদস্য সজল ঘোষের বক্তব্য, ‘মেয়রের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রায় কোটি টাকার সামগ্রী কিনল শিক্ষা দফতর। এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত হোক।’