করোনার তীব্র ভ্রুকুটির পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার অষ্টম তথা শেষ দফার নির্বাচন। আগামীকাল (২৯ এপ্রিল) কলকাতা উত্তর, মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং বীরভূম জেলা মিলিয়ে ৩৫টি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন। এর আগে সাতটি দফা শেষ হয়েছে। শীতলকুচির গুলি-কাণ্ডকে বাদ দিলে মোটের ওপর শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে এখনও পর্যন্ত। তাই শেষ দফায় কমিশনের কাছে চ্যালেঞ্জ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করানো। এই দফায় সবার নজর থাকবে বীরভূমের দিকে।
তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নজরবন্দি করেছে কমিশন। অতীতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হিংসা ছড়িয়েছে বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে। বীরভূমে শান্তিতে ভোট করানো কমিশনের কাছে নিঃসন্দেহে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বীরভূমের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ নিয়েও চিন্তা থাকবে কমিশনের। বৃহস্পতিবার ডোমকলের নির্বাচন। মুর্শিদাবাদের এই বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট সন্ত্রাস সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে গত দুই দশক ধরে। ইতিমধ্যেই সেখানে অশান্তি শুরু হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনের অষ্টম দফার আগে আমাদের নজরে উঠে এসেছে বিশেষ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা কেন্দ্র।
প্রথমে মালদার ইংরেজবাজার। এই কেন্দ্রে গতবার বাম-কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী নীহাররঞ্জন ঘোষ পরাজিত করেছিলেন তৃণমূলের কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীকে। রাজ্য রাজনীতিতে অত্যন্ত পরিচিত মুখ কৃষ্ণেন্দু। তৃণমূল জমানায় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে এবার শুধুই পদ্মের দাপট দেখা যাচ্ছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণেন্দু ৪০ হাজার ভোটে হেরেছিলেন। এবারও তাঁকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বিরুদ্ধে রয়েছেন জোট প্রার্থী কৌশিক মিশ্র এবং বিজেপির শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। গত লোকসভার হিসেবে বিজেপি এখানে এগিয়ে রয়েছে ৯৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে। প্রচুর পিছিয়ে শুরু করতে হচ্ছে অন্য দুই প্রার্থীকে। এই কেন্দ্রে বিজেপির জেতার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুর কেন্দ্রের দিকে বিশেষ নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী এখানে জিতেছিলেন এক লক্ষের বেশি ভোটে। লোকসভায় বহরমপুর থেকে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী এগিয়ে ছিলেন ৯০ হাজার ভোটে। কিন্তু পরবর্তীকালে এখানে বিজেপির ব্যাপক শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। জেলা বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, লোকসভা ছিল অধীর চৌধুরীর ভোট। এবার বিধানসভা নির্বাচন, অন্য ভোট হবে বহরমপুরে। এই কেন্দ্রে জেতার আশা করছেন বিজেপি প্রার্থী সুব্রত মন্ডল।
বহরমপুরের পর কলকাতা উত্তরের জোড়াসাঁকো কেন্দ্র। বিজেপি প্রার্থী করেছে ২৫ বছরের কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতকে। একটা সময় তিনি কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র ছিলেন। তৃণমূলের প্রার্থী বিবেক গুপ্তা, কংগ্রেসের হয়ে ময়দানে রয়েছেন তাজমল খান। এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক অবাঙালি ভোট রয়েছে। সেই লক্ষ্যেই এবার তৃণমূল গতবারের জয়ী প্রার্থী স্মিতা বক্সীকে টিকিট দেয়নি। এখানে তৃণমূল প্রার্থী করেছে একটি নামী হিন্দি সংবাদপত্রের কর্ণধার বিবেক গুপ্তাকে।
অবাঙালি ভোটকে টার্গেট করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। যদিও স্মিতা বক্সীর অনুগামীরা তাঁকে কতটা মন থেকে মেনে নিয়েছেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই । লোকসভা নির্বাচনে এখান থেকে বিজেপি এগিয়েছিল ৪ হাজার ভোটে। এর পাশাপাশি কংগ্রেস প্রার্থী যদি সংখ্যালঘু ভোট কিছুটা কাটতে পারেন, তাহলে বিজেপি আরও সুবিধাজনক জায়গায় চলে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই জোড়াসাঁকো কেন্দ্র নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি।
এবার নজরে অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূম। বোলপুরে বিজেপি প্রার্থী করেছে ড. অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল এখান থেকে ১৬ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু এবারের নির্বাচন অন্যরকম হবে বলে মনে করছে বিজেপি। বোলপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রোড শো ঘিরে জনজোয়ার দেখা যায়। গত দুই বছরে বিজেপির পক্ষে সমর্থন বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মুখে কিছু প্রকাশ না করলেও এলাকাবাসী এবার অন্য কিছু ভাবছেন বলে আশায় রয়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। জোট প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন তপন হোড়। কিন্তু তিনি লড়াইয়ে নেই। বোলপুরেই থাকেন অনুব্রত। এই আসনটি তাঁর কাছে প্রেস্টিজ ফাইটের মতো। বিজেপি বহুদিন ধরেই বোলপুর নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। এই আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
সবশেষে এন্টালি কেন্দ্র। এখানে তৃণমূল প্রার্থী স্বর্ণকমল সাহা, তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হয়ে রয়েছেন প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল। লোকসভা নির্বাচনে এখানে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে সাড়ে ৪১ হাজার ভোটে। তাই আপাত দৃষ্টিতে তৃণমূলকে ফেভারিট মনে হলেও, আইএসএফ প্রার্থী পুরো হিসেব ঘুরিয়ে দিতে পারেন। এখানে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে রয়েছেন আইএসএফের ড.মহম্মদ ইকবাল আলম। এন্টালি বিধানসভা কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। তাই তিনি যদি সেই ভোটের একটা বড় অংশ কেটে নিতে পারেন, তাহলে বিজেপি প্রার্থী এন্টালি থেকে জিতলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন প্রিয়াঙ্কা।
যথারীতি শেষ দফায় ভাল ফল করতে মরিয়া প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল। এই দফায় মালদা এবং মুর্শিদাবাদের আসনগুলিতে কংগ্রেস তথা জোট একটা বড় ফ্যাক্টর। কিন্তু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই দুই জেলায় কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে ভোট কাটাকাটির দিকে তাকিয়ে বিজেপি। এভাবেই তারা এই দুটি জেলা থেকে আসন বাড়াতে চাইছে।